সোনারগাঁয়ে বালু ভরাট করে মেঘনা নদী দখলের অভিযোগ

1582

মোঃ শামছুল আলম তুহিন ঃ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের পিরোজপুর ইউনিয়নের জিয়ানগর এলাকায় মেঘনা নদীর জায়গা ও সরকারী খাস জমি বালু দিয়ে ভরাট করে নদী দখলের অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘ ৮বছর আগে এ নদী দখলের অভিযোগে এ জায়গায় বালু ভরাট কাজ বন্ধ করে দেয় স্থানীয় প্রশাসন। পুনরায় গত এক সপ্তাহ ধরে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য কবির হোসেন ও ব্যবসায়ী শাহজালালের নেতৃত্বে আবারও নদী দখল চলছে। স্থানীয় প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করে আছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ করেছেন এলাকাবাসী।

এলাকাবাসী জানায়, উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের জিয়ানগর এলাকায় স্থানীয় ব্যবসায়ী শাহজালাল ২০১০সালে হাই স্পীড নামের একটি শীপইয়ার্ড কোম্পানিকে এলাকায় প্রায় ১০ একর সম্পত্তি ক্রয় করে দেয়। এসময় কোম্পানির পক্ষে শাহজালাল এলাকার প্রায় তিন একর সরকারী খাস সম্পত্তি দখল করে বালু ভরাট শুরু করে। এ সময় পার্শ্ববর্তী মেঘনা নদীতে গাছের খুটি পুতে মেঘনা নদী দখল করে। মেঘনা নদী দখল করার অভিযোগে স্থানীয় প্রশাসন কোম্পানির বালু ভরাট করা বন্ধ করে দেয়। হাই স্পীড শীপইয়ার্ড কোম্পানি পরবর্তীতে শাহজালালের মাধ্যমে সোনারগাঁ রিজোর্ট সিটি নামের একটি কোম্পানির কাছে জমি বিক্রি করে দেয়। দীর্ঘ ৮বছর পর পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য কবির হোসেন, পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সে দায়িত্বরত পুলিশ সুপার আক্তার হোসেনের ছোট ভাই আফজাল, ব্যবসায়ী শাহজালালের নেতৃত্বে ৩০-৩৫জনের একটি দল সিন্ডিকেট করে সোনারগাঁ রিজোর্ট সিটির পক্ষে পুনরায় বালুর বস্তা ফেলে মেঘনা নদী দখল করে ভরাট করছে। গ্রামবাসী এতে বাঁধা দেয়ায় পুলিশ সুপার আক্তার হোসেনের প্রভাব দেখিয়ে তার ছোট ভাই আফজাল হোসেন চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলার হুমকি দিয়ে এ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সরেজমিনে জিয়ানগর এলাকায় মেঘনা নদীর পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, অর্ধ শতাধিক শ্রমিক নদীর পানিতে বালুর বস্তা ফেলে নদীর জায়গা দখল করছে। এছাড়াও ওই স্থানে দু’টি ভেকু দিয়ে উপর থেকে বালু নদীর দিকে সরিয়ে নিচ্ছে।

ভাটিবন্দর গ্রামের আলী হোসেন ও জিয়ানগর গ্রামের মোবারক হোসেন বলেন, কবির মেম্বার, আফজাল যেভাবে নদীর জায়গা দখল করে বালু ভরাট করছে এক সময় আমাদের আর নদীতে নামার জায়গা থাকবে না। নদীর জায়গা ভরাটের বিষয়ে বাঁধা দেয়ায় চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলা দেয়ার হুমকি দিচ্ছে। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম বলেন, নদী দখলের বিষয়ে খবর পেয়ে কবির মেম্বারকে কাজ না করার জন্য বাঁধা দেয়া হয়েছে। আমি নদী ও খাল দখলের বিষয়ে বরারবই প্রতিবাদ করেছি। কবির মেম্বার ও শাহজালাল একটি সিন্ডিকেট করে এ বালু ভরাট কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আমি স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি অবগত করেছি।

পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য অভিযুক্ত কবির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি এ কাজের সাথে জড়িত না। এ কাজ কোম্পানির কাছ থেকে এনে শাহজালাল করাচ্ছে।

অভিযুক্ত ব্যবসায়ী শাহজালালের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নদীর কোন জায়গা ভরাট করা হচ্ছে না। কোম্পানির ক্রয়কৃত জায়গায় কাজ চলছে।

এ ব্যাপারে সোনারগাঁ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) বিএম রুহুল আমিন রিমন বলেন, নদী দখলের বিষয়ে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহিনুর ইসলাম বলেন, কোনভাবেই নদীর জায়গার দখল করতে দেয়া হবে না। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সহকারী কমিশনার ভ‚মিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা বলেন, কোনভাবেই নদীর জায়গা দখল করতে দেয়া হবে না। কেউ নদীর জায়গা দখল করলে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।