স্টাফ রিপোর্টারঃ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী বাবুল ওমরের অপকর্মের পোষ্টার উপজেলার বিভিন্ন এলাকার দেয়ালে দেয়ালে সাঁটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এসব পোষ্টার দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন এলাকার দেয়ালে দেয়ালে। এসময় পোষ্টার পড়ার জন্য বিভিন্ন শ্রেনী-পেশার মানুষ দেয়ালে দেয়ালে চোখ রাখছেন। এখবর জানতে পেরে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী বাবুল ওমর বলেছেন, এসব পোষ্টার সাঁটিয়ে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
সাঁটানো পোষ্টার থেকে জানা গেছে, উপজেলার কাঁচপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ ওমরের ছোট ভাই বাবুল ওমর বাবু পূর্ব বেহাকৈর প্রাইমারী স্কুলের সামনে কাঁচপুর দক্ষিন পাড়ার মৃত আমজাদ আলীর ছেলে আলী হোসেন ও সালাম খানের ছেলে লিয়াকত খানের বাড়ি দখল করে বাগান বাড়ি নির্মাণ করে সেখানে প্রতিদিন সন্ধ্যায় জুয়ার আসর ও মাদকের আস্তানা গড়ে তোলেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও সিলেট মহাসড়কের কাঁচপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার বিভিন্ন যানবাহন থেকে প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকা চাঁদা উত্তোলন করেন। কাঁচপুর থেকে গঙ্গাপুর কাজিপাড়া রুটের সিএনজি অটোরিক্সা থেকে প্রতিদিন ৩০ হাজার টাকার চাঁদা উত্তোলন করেন। বাবুর নেতৃত্বে প্রতিদিনই সোনাপুর বটতলায় বাবুর নেতৃত্বে জুয়ার আসর বসে। এ জুয়ার আসর থেকে প্রতিদিন সে লাখ টাকা আয় করে। কাঁচপুর লাভলী সিনেমা হল ও কাঁচপুর ডাইং গেটের সামনে তার নেতৃত্বে জুয়ার আসর বসে। সেখান থেকে বাবুল ওমর প্রতিদিন দুই লাখ টাকা পেয়ে থাকেন। লাভলী সিনেমা হল থেকে কাঁচপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত সড়ক ও জনপদের জায়গা দখল করে ছোট ছোট দোকান থেকে প্রতিদিন ২ লাখ টাকা আদায় করে থাকে।
সম্প্রতি এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তার দাবীকৃত টাকা না দেয়ায় তাকে মারধর করার জন্য লাঠি হাতে তেড়ে যান। এ ভিডিও ফেইসবুকে একটি আইডিতে পোষ্ট করা হয়। এ লিঙ্কটি পোষ্টারে উল্লেখ করা হয়। কাঁচপুর এলাকায় একটি চোরের সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী বাবুল ওমর। ওই সিন্ডিকেট থেকেও প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকায় পেয়ে থাকেন। তার সঙ্গে বিভিন্ন এলাকার সন্ত্রাসীরা অপকর্ম করে ঘুরে বেড়ায়। তার সন্ত্রাসীদের আতংকে এলাকাবাসী ভীত হয়ে পড়েছেন।
বাবুর নের্তৃত্বে সরকারী সম্পত্তি দখল করে কাঁচপুর ব্রীজের নীচে অবৈধ বালু মহল গড়ে তোলার কারণে বিআইডব্লিউটিআই কর্তৃপক্ষের করা মামলায় আসামী করা হয়েছে বাবুল ওমর বাবুকে।
বাবুর নের্তৃত্বে কাঁচপুর বাসস্ট্যাড এলাকার এস এস ফিলিং স্টেশন সামনে সরকারী পরিত্যক্ত জমি দখল করে দোকান নির্মাণ করে এবং দোকান দেয়ার নাম করে অসহায় মানুষদের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা আত্মসাৎ করে।
গত ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ইং কাঁচপুর ইউনিয়ন যুবলীগের কার্যালয়ে ফিল্মি স্টাইলে গুলি বর্ষন করে ৫জনকে গুরুতর জখম করে, অফিস ভাংচুর করে লুটপাট চালায় বাবুল ওমর বাবু ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী।
২০১৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে সোনারগাঁ মেঘা কমপ্লেক্সের সামনে কাঁচপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের অফিস ভাংচুর করে নেতা-কর্মীদের মারধর করে বাবুল ওমর বাবু নিজেই।
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনী হলফনামায় বাবুল ওমর বাবু তার নিজের নামে ৯.৭৫ পৌনে দশ) শতাংশ সম্পত্তির মালিক বলে উল্লেখ করেন। অথচ উপজেলার সাদীপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় এবং চেঙ্গাকান্দি এলাকায় বাবু ও তার বিশ্বস্ত সহযোগী সাইদুরের নামে রয়েছে কয়েক কোটি টাকার অঢেল সম্পত্তি। কাঁচপুর বেহাকৈর এলাকায় তার বাগান বাড়ীটি নির্মাণ করা হয়েছে ৬ বিঘা জমির উপর।
বিগত কাঁচপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তার বড় ভাই মোশারফ ওমর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পূর্বে অনাহারী জীবণ যাপন করলেও চেয়ারম্যান হওয়ার পর এই তিন বছরে বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে বিশাল আকারের কয়েকটি আলিশান বাড়ীর কাজ এখনও নির্মানাধীন রয়েছে।
এদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগ, বাবুল ওমর বাবু একজন সন্ত্রাসী প্রকৃতির। তার ভাই মোশারফ ওমর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সে জমি দখল, জুয়া ও মদের আসর, পরিবহন চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত। সে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে বিকল্প নুর হোসেন হয়ে উঠবেন। তার অপকর্মের রাজত্ব আরও দিনকে দিন বৃদ্ধি পাবে এবং অসহায় মানুষদেরকে আরও চরম দূর্ভোগ পোহাতে হবে।
এদিকে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী বাবুল ওমর নির্বাচনী আচরণবিধি অমান্য করে রঙিন পোষ্টার ছেপে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দেয়ালে দেয়ালে লাগিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন অন্যান্য ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাচন অফিসের সামনেও এ ধরনের রঙিন পোষ্টার শোভা পাচ্ছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
তবে প্রার্থী বাবুল ওমর জানান, আমার বিরুদ্ধে একটি কুচক্রি মহল অপপ্রচার করছে। আমি এসব অপকর্মের সাথে জড়িত না।
সোনারগাঁ উপজেলা সহকারী রির্টানিং অফিসার মো. জসিমউদ্দিন জানান, রঙিন পোষ্টারের বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। প্রার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য নির্বাচন অফিসে তলব করা হয়েছে।