সময়ের চিন্তা ডট কমঃ টাকা চাওয়ার জের ধরেই খুন হন ব্যবসায়ী সেলিম, হত্যার পর তার লাশ মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয় ১০ দিন। ব্যবসায়ীক কারণে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে টাকা পেতেন ফতুল্লার বক্তাবলী ইউনিয়নের কানাইনগর এলাকার বাসিন্দা ঝুট ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান চৌধুরী সেলিম চৌধুরী (৫২)। ব্যবসায়ী সেলিম দুই লাখ টাকা পেতেন কাশীপুর ইউনিয়নের ভোলাইলের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলীর কাছে। সেই টাকা চাওয়াটাই কাল হলো তার। ১০ দিন পর পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে এই তথ্য এবং মাটি খুড়ে উদ্ধার করা হয় ব্যবসায়ী সেলিমের লাশ।
বুধবার (১০ এপ্রিল) নিখোঁজের ১০ দিন পর ফতুল্লার কাশীপুর ভোলাইলে মোহাম্মদ আলীর ঝুটের গোডাউন থেকে মাটি খুড়ে ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান চৌধুরী সেলিম চৌধুরীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ব্যবসায়ী সেলিমের নিখোঁজের ঘটনায় সন্দেহজনকভাবে ঝুট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী (৪০) ও তার কর্মচারী ফয়সাল (২৯) ও ইউনুছকে আটক করা হয়। আর তাদের দেওয়া তথ্য মতেই মোহাম্মদ আলীর গোডাউন থেকে মাটি খুঁড়ে বস্তাবন্দী অবস্থায় লাশটি উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে ফতুল্লা থানা পুলিশ।
নিহত ব্যবসায়ী সেলিম চৌধুরী ফতুল্লার বক্তাবলী ইউনিয়নের কানাইনগর এলাকার মৃত শামসুল হুদার ছেলে। সেলিম চৌধুরী ব্যবসার সুবিধার্থে স্ত্রী ও এক সন্তান নিয়ে ফতুল্লার শিবু মার্কেট এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতো।
নিহতের স্ত্রী রেহেনা আক্তার রেখা জানান, সেলিম মূলত গার্মেন্টের থান কাপড় ও ঝুট ব্যবসা করতেন। তাদের বাড়ি বক্তাবলীর কানাইনগর এলাকায় হলেও ফতুল্লার শিবুমার্কেট এলাকায় বসবাস করতো। সে গত ৩১ মার্চ সকালে বাসা হতে ব্যবসার কাজের উদ্দেশ্যে সেলিম বের হয়ে যান। ওই দিন বেলা ১১টার দিকে সেলিম চৌধুরীর স্ত্রী রেহেনা আক্তার রেখা মোবাইল ফোনে তার ¯^ামীর অবস্থান জানতে চাইলে সেলিম চৌধুরী জানিয়েছিলেন তিনি ফতুল্লার পঞ্চবটি মোড়ে ইস্টার্ন ব্যাংকে রয়েছেন। এরপর দুপুর ২টায় খাবার খাওয়ার জন্য ফোন করলে সেলিম চৌধুরীর ব্যবহৃত মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
নিহতের স্ত্রী আরো জানান, সেলিম চৌধুরী ভোলাইলের মোহাম্মদ আলী নামের এক ঝুট ব্যবসায়ীর কাছে ২ লাখ টাকা পাওনা ছিলেন। ওই টাকা নিয়ে টালবাহনা করছিল মোহাম্মদ আলী। আর ৩১ মার্চ আলীরটেকের ডিগ্রিরচর গ্রামের সালাউদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ আলীর ভোলাইলের ঝুটের গোডাউনে পাওনা দুই লাখ টাকা চাইতে যায়। এর পর হতে ব্যবসায়ী সেলিম চৌধুরী নিখোঁজ হয়। পাওনা টাকা চাওয়ার অপরাধে পরিকল্পিত ভাবে মোহাম্মদ আলী তার লোকজন সেলিম চৌধুরীকে হত্যা করে বস্তবন্দি করে গোডাউনে মাটি খুড়ে চাপা দিয়ে রাখে।
এ ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফতুল্লা মডেল থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) মামুন আল আবেদ জানান, ব্যবসায়ী সেলিম নিখোঁজ হওয়ার পর স্ত্রী একটি জিডি করেন। জিডি করার পর ব্যবসায়ী সেলিম চৌধুরীর মোবাইল ট্র্যাকিং করে সেলিমের নিখোঁজের সময়কার অবস্থান নিশ্চিত করা হয়। পরে নিখোঁজ ব্যবসায়ীর স্ত্রী বাদী হয়ে ৮ এপ্রিল রাতে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা দায়ের করে। মোবাইল ট্র্যাকিং করার পর মোহাম্মদ আলীকে সন্দেহ হলে বুধবার দুপুরে ভোলাইলে মোহাম্মদ আলীর ঝুটের গোডাউনে অভিযান চালানো হয়। পরে মোহাম্মদ আলীসহ তার দুই কর্মচারী ফয়সাল ও ইউনুছকে আটক করা হয়। তাদের দেওয়া ¯^ীকারোক্তিতে মাটি খুঁড়ে বস্তাবন্দী অবস্থায় লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, পাওনা দুই লাখ চাওয়ায় মোহাম্মদ আলীর সাথে তর্কবিতর্ক হলে ৩১ মার্চ রাতেই মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে ৪/৫ জন মিলে সেলিমকে রড দিয়ে আঘাত করে এবং শ্বাসরোধে হত্যা করে গুম করার উদ্দেশে লাশ বস্তাবন্দি করে মাটি খুঁড়ে পুতে রাখা হয়। এ সময় তারা লাশের পাশে চুন দিয়ে দেয় যাতে করে লাশ মাটির সাথে মিশে যায়।
নিহতের লাশ উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে বলেও জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা।