গরিবের পেটে ভাত না থাকলেও মনে জোর আছে

789

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বেলা সাড়ে ১২টা। মাথার ওপর কড়া রোদ, তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রী ছাড়িয়ে গেছে। কিছুক্ষণ রোদে দাড়ালে মাথা ধরে আসে। তবু গ্রীষ্মের এই প্রখর রোদকে উপেক্ষা করে সকাল থেকে বঙ্গবন্ধু সড়কের গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর কার্যালয়ের সামনে বসে আছে প্যাপিলন গার্মেন্টসের অর্ধ শতাধিক শ্রমিক। তারা হাল ছাড়তে নারাজ। দাবি পূরণ না হলে রাজপথ ছাড়বে না।
রোদের তাপমাত্র যেন বাড়ছে, কমছে না। সময় পার হয়, ঘন্টাখানেক পর হঠাৎ শ্রমিকদের মধ্যে চাঞ্চল্য, তপ্ত রোদের কারণে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন নাজমুন নাহার। দু’জন ধরাধরি করে নিয়ে গেলো হাসপাতালে। এ ঘটনার পরও অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। শ্রমিকরা তাদের কষ্টের কথা বলছেন মাইকে। এমন সময় অসুস্থ্য হয়ে পড়লেন আরেক নারী শ্রমিক ঝর্ণা। তারপর অসুস্থ্য হয়ে পড়লো আরো দুজন বেবি ও নাজমা। তবুও চলছে আন্দোলন।
রোববার (২১ এপ্রিল) সকাল থেকে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে প্যাপিলন নীট এপারেলস লিমিটেডের আন্দোলনরত শ্রমিকদের অবস্থান কর্মসূচিতে দেখা যায় এই দৃশ্য। প্যাপিলন নীট এপারেলস লিমিটেরডের শ্রমিক সাগরের সভাপতিত্বে এ সময় বক্তব্য রাখেন, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি আবু নাঈম খান বিপ্লব, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদ, সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম গোলক, সিদ্দিরগঞ্জ থানার সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সোহাগ, নারায়ণগঞ্জ জেলার দপ্তর সম্পাদক কামাল পারভেজ মিঠু, শ্রমিক বেবি, লিপি, হালিম, মোসারফ, রাসেল প্রমুখ।
শ্রমিক বেবি বলেন, ‘গত ২ মাস হাতে বেতন পায়নি, ধার দেনা করতে করতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। বাড়ির পাশের মুদি দোকারদারও আর ধার দেয় না। বাড়িয়ালা দিনে দুইবার ধরণা দেয়। আমার দুটি বাচ্চা। ওদের মুখে খাবার তুলে দিতে পরছি না। আন্দোলন ছাড়া আমাদের আর গতি নাই। বেতন না পেলে আমরা যাবে কোথায়?
আরেক নারী শ্রমিক লিপি বলেন, ‘আজ ২০ দিন আমরা এখানে আসি, আন্দোলন করি। কষ্ট হয়। কষ্ট হলে হবে, ক্ষুদার কষ্টের তুলনায় এই কষ্ট কিছুই না। গরিবের পেটে ভাত না থাকলেও মনে জোর আছে। আজ সকালে কিছু খাইনি, দুপুরেও খাবো না। তবু রাজপথ ছাড়বো না।
শ্রমিক রাজু বলেন, ‘আমরা শৃক্সখলাবদ্ধ আন্দোলন করছি বলে ভাববেন না আমরা দুর্বল। আজ শুধু আমরা আন্দোলন করছি, মিছিল করছি। আগামীতে নারায়ণগঞ্জের আরো ১০০টি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা আন্দোলন করবে, মিছিল করবে।
শ্রমিকদের অভিযোগ গত ১ এপ্রিল শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোদ না করেই বেআইনিভাবে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। গত ফেব্রæয়ারি ও মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করা হয়নি বলে দাবি তাদের।
এদিকে প্যাপিলন নীট এপারেলস লিমিটেডের ¯^াত্ত¡াধিকারী ও মুন্সিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরী বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি জানান, শ্রমিকদের সকল বকেয়া বেতন পরিশোধ করার পরই প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমি আমার প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের ভালোবাসি ও ¯েœহ করি। আমি আইনিভাবে ও সকল আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আমার প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করেছি। তার আগে ২৫ মার্চ সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করেছি।