সফুরা খাতুন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গত ৯ বছরেও প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণ হয়নি, চলছে তালবাহানা

638

সময়ের চিন্তা ডট কমঃ সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইলে সফুরা খাতুন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গত ৯ বছরেও প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণ হয়নি, চলছে তালবাহানা। বরং বিধি মোতাবেক প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পর রহস্যজনক কারণে গত ১৫ মাস ধরে নির্বাচিত প্রধান শিক্ষকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না বলে জানা যায়। এতে একদিকে বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা পরিপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া দীর্ঘ ৯ বছর বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক না থাকায় বিদ্যালয়ের অভিভাবক ও সচেতন এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা যায়।
এদিকে নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও প্রধান শিক্ষককে নিয়োগ না দেয়ায় ঐ শিক্ষক উচ্চ আদালতের শরনাপন্ন হয়েছেন। তবে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ না পাওয়ার পেছনে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিপেন চন্দ ও অভিভাবক প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলমের কুটচালকে দায়ী করেছেন অভিভাবক মহল।
অভিযোগ রয়েছে, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিপেন চন্দ্র ২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করতে না পারায় তার কৌশলে উক্ত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াটি বাতিল হয়ে যায়। পুনরায় ২০১৮ সালের ২৬ জানুয়ারি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় রফিকুল ইসলাম প্রথম স্থান অধিকার করলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রফিকুল ইসলামকে নিয়োগ প্রদান করার কথা জানান। কিন্তু পরবর্তীতে রহস্যজনক কারণে তাকে নিয়োগ না দিয়ে কালক্ষেপন করতে থাকেন এবং দুইদিন পর ২৮ জানুয়ারীর পরীক্ষায়ও দিপেন চন্দ্র সবশেষ স্থান দখল করেন, তবুও রফিকুল ইসলামকে নিয়োগ প্রদান করা হয়নি।
পরবর্তীতে নিরুপায় হয়ে নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া রফিকুল ইসলাম ২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল শিক্ষা সচিবসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে আবেদন করেন এবং সংক্ষুব্ধ হয়ে হাইকোর্টে রিট মামলা দায়ের করেন। পরে রিট মামলার আদেশ বাস্তবায়নের পদক্ষেপ না নেওয়ায় শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মহোদয়কে বিবাদী করে কন্টেম্প মামলা দায়ের করেন।
এদিকে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের কন্টেম্প মামলার নিষ্পত্তির আদেশ প্রাপ্ত হয়ে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সোহরাব হোসেন সুপ্রীম কোর্টের বিজ্ঞ সলিসিটর ও শিক্ষা অধিদপ্তরের আইন শাখার মতামত চান। পরে বিজ্ঞ আইন উপদেষ্টা ও শিক্ষা অধিদপ্তরের আইন শাখা জরুরি ভিত্তিতে পিটিশনারের আবেদন নিস্পত্তি করার কথা সিনিয়র সচিব সোহরাব হোসেনকে জানিয়ে দেন। পরবর্তীতে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের লক্ষে উপ-সচিব মাধ্যমিক-৩ কামরুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসার শরিফুল ইসলামকে বলেন। গত মাসের শেষের দিকে জেলা শিক্ষা অফিসার শরিফুল ইসলাম সরেজমিনে সফুরা খাতুন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পরিদর্শনে যান এবং প্রধান শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্ত নথি তলব করেন। পরদিন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও মামলার বাদী রফিকুল ইসলামকে জেলা শিক্ষা অফিসে হাজির থাকার জন্য বলেন। উভয় পক্ষ উপস্থিত হয়ে ঘটনার বিস্তারিত জেলা শিক্ষা অফিসারকে জানান। পরবর্তীতে মামলার গুরুত্ব অনুধাবন করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নিয়োগ প্রক্রিয়াটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বলেন। তখন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষে অভিভাবক প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলম নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত নিষ্পত্তির আশ্বাস দেন। কিন্তু অদ্যবদি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়া নিষ্পত্তি করছে না, বরং কালক্ষেপন করে যাচ্ছে বলে জানা যায়।
এদিকে সূত্রে জানায়, শেষ পর্যন্ত আদালতের নির্দেশে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ন রফিকুল ইসলামই নিয়োগ পাবেন প্রধান শিক্ষক হিসেবে এবং বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির উপর যে কোন খড়গ নেমে আসতে পারে। এতে বিদ্যালয়ের সুনাম বাড়বে না বরং ক্ষুন্ন হবে । তাই সাধারণ অভিভাবক ও এলাকাবাসী বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।