উন্নয়নের নামে অপরিকল্পিত নগরায়ণ, সংশ্লিষ্টদের দুর্নীতির মানসিকতা, ভূমিদস্যুদের দৌরাত্বে পরিবেশ আজ হুমকির সম্মুখীন

475

সোনারগাঁ প্রতিনিধিঃ সরকারী ও বেসরকারী যে কোন আবাদী জমি অথবা নাল জমিতে বালু ভরাটের ক্ষেত্রে উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি লাগবে। যদি কোন ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠান বিনা অনুমতিতে বালু ভরাট করে তাহলে ঐ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে জেল জরিমানাসহ দন্ডিত করা হবে।
সম্প্রতি আইন শৃঙখলা সমন্বয় কমিটির সভায় এই আদেশ জারি করেন সোনারগাঁও উপজেলা প্রশাসন। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ কার্যকরী ভাবে প্রশাসনিক কোন বাধা না থাকায় নির্বিঘেœ চলছে পরিবেশ বিধবংসী কার্যক্রম ও ভরাট উৎসব।
কিন্তু উন্নয়নের নামে অপরিকল্পিত নগরায়ণ, সংশ্লিষ্টদের দুর্নীতি মানসিকতা, ভূমিদস্যুদের দৌরাতেœ্য পরিবেশ আজ হুমকির সম্মুখীন। এক সময় উপজেলা সদরের পিরোজপুর ইউনিয়নের সব এলাকায় ছিল বিস্তীর্ণ বিল।
যেখানে সারাবছরই নিচু জমি ও ডোবায় পানি জমে থাকত। তাছাড়া উপজেলা সদরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত কয়েকটি প্রাচীন শাখা নদী ও অসংখ্য খাল-বিল, পুকুর ভরাট করে ফেলেছে স্থানীয় ভূমিদস্যুরা।
প্রতিদিন উপজেলার আশপাশে অবরুদ্ধ হচ্ছে শাখানদী গুলোর গতিপথ। অন্যদিকে সড়ক ও জনপথের ব্রিজ ও কালভার্টের মুখ মাটি ফেলে পানি প্রবাহের পথ বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। এভাবে নদী-নালা ও জলাধার ভরাট হওয়ার কারনে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে ও বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে মিঠা পানির দেশীয় প্রজাতির সব মাছ।
স্থানীয় স্বার্থ লোভী অসাধু বালু সন্ত্রাসীদের কারনে কোন ভাবেই থামানো যাচ্ছে না মেঘনা নদী দখল ও ভরাটের মহাউৎসব। স্থানীয় ভাবে নদী তীরবর্তী এলাকায় বড় বড় শিল্প কারখানা গড়ে তুলে বাধাহীন দখল দূষণের কারনে বিপর্যস্থ্য হয়ে পড়েছে এ নদী। এবার মেঘনার শাখানদী তীরবর্তী সোনারগাঁও উপজেলার দুধঘাটা ও কোরবান এলাকা গিলে খাচ্ছে একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান।
ভূক্তভোগী এলাকাবাসীর অভিযোগ, দেশের কয়েকটি বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান নিজেদের শিল্পাঞ্চল বিস্তারের নামে দুটি গ্রাম নিশ্চিহ্ন করেও ক্ষান্ত হয়নি, তারা এবার দখল করে নিয়েছে দুধঘাটা ও কোরবানপুর এলাকার নদী পাড়ের বিস্তৃর্ণ এলাকা।
সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে নদী দখল ও ভরাট কাজ বন্ধ থাকলেও পুনরায় নদী ও কৃষকদের ফসলি জমি দখল শুরু হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করে আছে বলে দুধঘাটা এলাকাবাসীর অভিযোগ। এবিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন ভূক্তভোগী এলাকাবাসী।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার দুধঘাটা এলাকায় ফসলি জমি, মেঘনার শাখানদী ও খাসজমিতে জোরপূর্বক বালু ভরাট করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
বালু ভরাট কাজে সরাসরি জড়িত রয়েছেন দুধঘাটা এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি জাতীয় পার্টির নামদারী নেতা ও পিরোজপুর ইউনিয়ণ পরিষদ (ইউপি) সদস্য মজিবুর রহমান ভূইয়া।
এঘটনায় আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতা, বিএনপির কর্মী সমর্থক ও জনপ্রতিনিধি স্থানীয় মাস্তান গ্রুপ সরাসরি জড়িত বলে দুধঘাটা এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দুধঘাটা গ্রামের দক্ষিন প্রান্তে দুধঘাটা মৌজায় মেঘনার শাখা নদীর পাশে প্রায় ৫০ বিঘা খাস জমি ও গ্রামবাসীর প্রায় ৪০ বিঘা জমিতে জোর পূর্বক বালু ভরাট করা হচ্ছে।
গত এক সপ্তাহ ধরে অবৈধভাবে বালু ভরাট করে দখলবাজি শুরু হওয়ার পর দুধঘাটা ও আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা বাধা দেওয়ায় তাদের নামে মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।
নিজ ফসলি জমি রক্ষায় কয়েকজন কৃষক বাধা দিতে গেলে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে তাদের ওপর হামলা করা হয়। হামলা, মামলার ভয়ে স্থানীয় গরীব কৃষকরা তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পায়না।

বৃহস্পতিবার ভরাট স্থলে গিয়ে দেখা যায়, ৪টি ড্রেজার (খননযন্ত্র) বসিয়ে বালু সন্ত্রাসী একদল লোককে পাহারায় রেখে খাসজমি ও কৃষকদের তিন ফসলি জমিতে বালু ফেলা হচ্ছে। ইতিমধ্যে মেঘনার শাখানদী বালুচরে পরিনত হয়েছে।
ভুক্তভোগী কয়েকজন কৃষক বলেন, অবৈধ বালু ভরাট সিন্ডিকেটের বেশির ভাগ লোকজন দুধঘাটা গ্রামের একটি প্রভাবশালী বাড়ির হওয়ায় প্রাণ ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে আমরা কোন কথা বলতে সাহস পাইনা।
তাছাড়া গনমাধ্যম কর্মী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বললে রাতের বেলায় বালু সন্ত্রাসীরা আমাদের ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিবে। আমাদের পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা চালাবে। প্রাণ ভয়ে আমরা তাদের বিরুদ্ধে কোন কথা কারো কাছে বলতে পারিনা।
দুধঘাটা গ্রামের একজন গরীব কৃষক মালেক বলেন, স্থানীয় দুধঘাটা গ্রামের প্রভাবশালী ৩০-৪০ জন লোকের একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে বালু ভরাটের ঠিকাদারী তাদের হাতে ছেড়ে দেন।
গত এক সপ্তাহ ধরে সিন্ডিকেটের লোকজন আমাদের অবিক্রিত জমির ওপর জোরপূর্বক বালু ভরাট করে চলছে। আমরা বালু সন্ত্রাসীদের কাছে বড়ই অসহায় হয়ে পড়েছি।
দুধঘাটা গ্রামের কৃষক হযরত আলী সরদার, আব্দুর রাজ্জাক সরদার, নূরুল ইসলাম মোল্লা, জলিল মোল্লা, কমল হক, জামাল শিকদার, আনোয়ার হোসেন, আব্দুল খালেক, বাহারুল, আলী ইসলাম, রাজা মিয়াসহ কমপক্ষে ২৫/৩০ জন কৃষক জানান, আমাদের জমি ক্রয় না করেই বালু সন্ত্রাসীরা জোর পূর্বক জমিতে বালু ফেলে জমি দখল করে নিচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশকে জানিয়েও কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছেনা।
আমরা এখন কার কাছে যাব। জোরপূর্বক বালু ভরাটের বিষয়ে জানতে চাইলে পিরোজপুর ইউনিয়ণ পরিষদ চেয়ারম্যান মাসুম বলেন, দুধঘাটা এলাকায় জমি ক্রয় করে বালু ভরাট করা হচ্ছে। নদী ও খাস জমি দখলের অভিযোগ সত্য নয়।
উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সামসুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ এধরনের অপকর্ম করলে এর দায়ভার দল নেবে না। বিষয়টি তদন্ত করে বালু ভরাটের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অঞ্জন কুমার সরকার জানান, ভরাট বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি ব্যতিত কেউ বালু ভরাট করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নদী ও খাসজমি যদি কেউ দখল করে থাকে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এবিষয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হবেনা।
জাতীয় ভেজাল প্রতিরোধ ফাউন্ডেশন নারায়নগঞ্জ জেলা সভাপতি সুলতান মাহমুদ ও সাধারন সম্পাদক শাহ আলম তালুকদার সংশিলিষ্ঠ কর্তপক্ষ ও নারায়নগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। সূত্রঃ যুগের চিন্তা ২৪.কম