আমাদের উন্নয়নকাজ অব্যাহত থাকবে আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি আরও এগিয়ে নেবো-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

446

মোঃ শামছুল আলম তুহিনঃ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দ্বিতীয় মেঘনা সেতু উদ্বোধনের পর যানজট ছাড়াই মহাসড়কে যানবাহন চলাচল করছে। দীর্ঘদিনের দৃশ্য পাল্টে নিজস্ব গতি নিয়ে যানবাহনগুলো ছুটে চলছে। গতকাল শনিবার সকালে গণভবন থেকে মেঘনা সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। এসময় মেঘনা সেতুর আবাসিক প্রকৌশলী শেখ জহির উদ্দিন মাহমুদ, কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের ওসি কাইয়ুম আলী সরকার, ওসি তদন্ত আলী রেজাসহ সেতু নির্মাণ কাজের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

মেঘনা সেতু উদ্বোধন হওয়ায় ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের যানজট একেবারে নেই বললেই চলে। সেতুটি উদ্বোধন হওয়ায় অন্যান্য বছরের মত এবার আর ঈদে মানুষের কোনো ভোগান্তি পোহাতে কবে না।

জানা গেছে, চারলেন বিশিষ্ট দ্বিতীয় মেঘনা সেতুর দৈর্ঘ্য ৯৩০ মিটার। ১১টি পিয়ার ও দু’টি এপাটমেন্টে জয়েন্টের উপর নির্মিত দ্বিতীয় মেঘনা সেতু নির্মাণে ব্যায় হয়েছে ১৮শ’ কোটি টাকা। পুরাতন মেঘনা সেতু পূণর্বাসনের জন্য ব্যয় হবে আরও ৪শ কোটি টাকা। মোট ব্যায় হবে ২২শ’ কোটি টাকা। সেতুর ঢাকা প্রান্তে প্রায় এক কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম প্রান্তে এক কিলোমিটার এ্যাপরোজ সড়ক এবং পশ্চিম পাশে সেতুর নীচ দিয়ে ৫০৭ মিটার দৈর্ঘ্য সার্ভিস রোড নির্মাণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় কাচঁপুর, দ্বিতীয় মেঘনা এবং দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী সেতু নির্মাণ এবং পুরাতন তিনটি সেতুর পূণর্বাসনসহ প্রকল্প বাস্তবায়নে চুক্তি হয়েছে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা। প্রায় সাড়ে ৩ বছর ধরে চলে ৪১তম মাসে এসে শেষ হয় সেতুটির নির্মাণ কাজ।

গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দ্বিতীয় মেঘনা সেতুর উদ্বোধন করেন। এর ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা এলাকায় লাগাতার লেগে থাকা দীর্ঘ যানজটের অবসান হবে, ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা কিছুটা হলেও আরামদায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে। দীর্ঘ প্রতী¶িত দ্বিতীয় মেঘনা সেতু ও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পগুলো উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে ঈদের আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

এসময় ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের উন্নয়নকাজ অব্যাহত থাকবে। আমরা আমাদের সেতুগুলোর উন্নয়ন করে যাচ্ছি, এটা চলমান থাকবে। আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, আরও এগিয়ে নেবো।

দ্বিতীয় মেঘনা সেতু প্রকল্প ইঞ্জিনিয়ার শেখ জহিরউদ্দিন মাহমুদ জানান, নবনির্মিত দ্বিতীয় মেঘনা সেতু নির্ধারিত সময়ের আগেই যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই কাঁচপুর দ্বিতীয় ব্রিজ চালু হয়েছে। সব মিলিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এবারের ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা যানজটের যন্ত্রনা মুক্ত ও আরামদায়ক হবে।

ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার ও কাঁচপুর সেতুর ইনচার্জ ফারিহা আযম জানান, আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে, সময়ের আগেই আমরা সেতুটির কাজ শেষ করে খুলে দিতে পেরেছি বলে। ঈদের আগে ঘরমুখো মানুষরা যানজট মুক্ত সড়ক পাবে। তিনি আরো বলেন জাপানী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওবায়সি করপোরেশন, শিমঝু করপোরেশন, জেএফএফ করপোরেশন ও আইএইচআই ইনফ্রা সিস্টেম্স কোম্পানী লি. ২০১৬ সালের জানুয়ারীতে দ্বিতীয় মেঘনা ও গোমতীর সঙ্গে দ্বিতীয় কাঁচপুর ব্রীজের কাজ শুরু করেছিল। এই তিনটি সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে, ৮ হাজার ৪শ’ ৮৭ কোটি টাকা। এই প্রকল্পে প্রস্তাবিত ব্যয়ের তুলনায় ১ হাজার কোটি টাকা কম খরচ হয়েছে। এর মধ্যে জাপানের জাইকা ৬ হাজার ৪শ’ ৩০ কোটি টাকা সহায়তা দিয়েছে।

তিনি আরও জানান, জনসাধারণের ঈদযাত্রার সুবিধার্থে আসছে ৩১ মে কাঁচপুর সেতুর পূর্বাংশের ওভারপাস খুলে দেয়া হবে। এর আগে গত ১৬ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শীতল¶্যা নদীর উপর দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতুর উদ্বোধন করেন।

চট্টগ্রামগামী কাভার্ডভ্যান চালক আব্দুল করিম বলেন, দীর্ঘদিন পর ¯^স্তিতে এ সড়কে গাড়ি চালাচ্ছি। দ্বিতীয় মেঘনা সেতু খুলে দেয়ায় যানজট ছাড়া দ্রুত গাড়ি চালাতে পারছি।

গজারিয়া পরিবহণের বাস চালক আউয়াল বলেন, সেতু চালু হওয়ায় এখন আর যানজট পাইনি। আমরা স্থানীয়ভাবে গাড়ি চালাই। এ পথে ঢাকা থেকে গজারিয়া যেতে সময় লাগে ঘন্টাখানেক। দীর্ঘ যানজটের কারণে ৩-৫ ঘন্টা সময় লেগে যেতো।

নারায়ণগঞ্জ জেলা ট্রাফিক পুলিশের টিআই (প্রশাসন) মোল্ল্যা তাসনিম হোসেন জানান, দীর্ঘদিন ধরে এ পথে দীর্ঘ যানজট লেগেই থাকতো। যানজট নিরসনে নিয়মিত পুলিশের পাশাপাশি বাড়তি পুলিশ কাজ করতো। সেতুটি উদ্বোধন হওয়ায় এ বছর ঈদে তেমন আর কোন যানজট সমস্যা হবে না বলে প্রত্যাশা করছি।

কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের ওসি কাইয়ুম আলী সরদার বলেন, দ্বিতীয় মেঘনা সেতু উদ্বোধন হওয়ায় আশা করছি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা এলাকায় লাগাতার লেগে থাকা দীর্ঘ যানজট আর হবে না। ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা কিছুটা আরামদায়ক হবে।