স্টাফ রিপোর্টারঃ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের বারদীতে অবস্থিত হিন্দু সম্প্রদায়ের আত্মাধিক গুরু শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর ১২৯ তম তিরোধান উৎসব শুরু হচ্ছে আজ। এ উপলক্ষে গতকাল রোববার দুপুরে বারদী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রম পরিদর্শন করেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান। এসময় জেলা পুলিশ আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দেশের সকল ধর্ম বর্নের মানুষ নির্বিঘেœ তাদের উৎসব পালন করতে পারবেন। পুলিশ সবাইকে সমান গুরুত্ব দিয়ে মাঠে কাজ করছেন। বর্তমানে রোজা চলছে সামনে ঈদের মধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের এ তিরোধান উৎসব। এ উৎসব হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ যথেষ্ট সহযোগিতা করছেন। উৎসবের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। পাঁচ শতাধিক নিরাপত্তাকর্মী এখানে দিনরাত কাজ করবেন। পাশাপাশি সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে পুরো উৎসব প্রাঙ্গন। উৎসবকে ঘিরে আশ্রম এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে জেলা পুলিশ। আশা করি সকলের সহযোগিতায় একটি সুন্দর উৎসব উপহার দেয়া সম্ভব হবে।
তিরোধান উৎসব উপলক্ষে আশ্রম কমিটি ৩ দিন ব্যাপী বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে, ভক্তিমূলক গান, গীতা ও চন্ডী পাঠ ও আগত ভক্তদের মধ্যে প্রসাদ বিতরন। এছাড়াও বিভিন্ন সেবামূলক সংগঠন নানা ধরনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী দীর্ঘ ২৬ বছর বারদীতে অবস্থান করার পর ১৫০ বছর বয়সে ১৯ জৈষ্ঠ্য তিনি দেহ ত্যাগ করেন। সেই থেকে বারদী লোকনাথ আশ্রমে ১৯ জৈষ্ঠ্য লোকনাথ ব্রহ্মচারীর তিরোধান উৎসব পালিত হয়ে আসছে।
তিরেধান উৎসব উপলক্ষে উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোকনাথ ভক্তরা তাকে ভক্তি জানাতে আসেন। ইতিমধ্যে দেশ বিদেশের হাজার হাজার লোকনাথ ভক্ত বাস, নৌকা, লঞ্চ ও ট্রলারযোগে আশ্রম এলাকায় সমবেত হয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উৎসব উপলক্ষ্যে আশ্রম ও এর আশপাশের এলাকা সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। আশ্রমের প্রধান ফটক ও যাত্রী নিবাসের ভবনগুলোতে নানা রকম আলোক সজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে। উৎসবে যোগ দিতে ভারত, নেপাল, ভুটান ও শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুল সংখ্যক লোকনাথ ভক্ত বারদী আশ্রমে সমবেত হয়েছেন। তিরোধান উৎসব উপলক্ষে আশ্রমের বাহিরের মাঠে বসেছে লোকজ মেলা। মেলায় পসরা সাজিয়ে বসছেন বিভিন্ন দোকানীরা। তাছাড়াও শ্রী শ্রী লোকনাথ সেবা সংঘ, শারদাঞ্জলি ফোরাম বাংলাদেশসহ বিভিন্ন সংগঠন আগত ভক্তদের মাঝে বিনামূল্যে সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করার উদ্যোগ নিয়েছেন। সেবার মধ্যে রয়েছে, শিশুদের জন্য দুধ বিতরণ, ঔষধসহ চিকিৎসা সেবা, মিষ্টি, চিড়ামুড়ি, বাতাসা, পানি ও শরববত বিতরণ।
এদিকে নিরাপত্তার স্বার্থে আশ্রমের পুরো এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে সিসি ক্যামেরা। স্থানীয় প্রশাসন তিনজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়ে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করবেন আশ্রম এলাকায়।
বারদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহিরুর হক বলেন, শান্তিপূর্ন ও সূশৃক্সখলভাবে তিরোধান উৎসব উদযাপনের জন্য সকল ধরনের প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রশাসনের পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরাও মাঠে কাজ করবেন।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুলাহ আল মামুন, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সালেহ আহমেদ, নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(খ সার্কেল) খোরশেদ আলম, সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার সরকার, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজমুল হোসাইন, সনমান্দী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদ হাসান জিন্নাহ, বারদী আশ্রম কমিটির সভাপতি সাবেক সচিব অশোক মাধব রায়, সাধারন সম্পাদক শংকর কুমার দে, সোনারগাঁ থানার ওসি মনিরুজ্জামান মনির প্রমুখ।