স্টাফ রিপোর্টারঃ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নে অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচীতে (ইজিপিপি) ইউপি চেয়ারম্যান ইউসুফ দেওয়ানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ৩৫টি ছোট বড় মাটির রাস্তা নির্মাণের জন্য দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে ১ কোটি ৬৬ লাখ ১৬ হাজার টাকা অর্থ বরাদ্ধ দেয়া হয়। প্রতিটি প্রকল্পে উপকারভোগীর সংখ্যা উল্লেখ করে দেয়া হলেও প্রকল্পগুলোতে উল্লেখিত উপকারভোগীর চেয়ে কম সংখ্যক জনবলকে কাজে লাগিয়ে পুরো উপকারভোগীর অর্থ তুলে নেয়া হচ্ছে। এসব অর্থ ব্যাংক থেকে উপকারভোগীরা নিজে তুলে নেয়ার কথা থাকলেও এ অর্থ তুলে নিচ্ছেন স্থানীয় এই জনপ্রতিনিধি।
জানা গেছে, উপজেলার বৈদ্যোরবাজার ইউনিয়নে ১টি, পিরোজপুর ইউনিয়নে ৫টি, মোগরাপাড়া ইউনিয়নে ২টি, শম্ভুপুরা ইউনিয়নে ৮টি, কাঁচপুর ইউনিয়নে ৪টি, সাদিপুর ইউনিয়নে ৫টি, নোয়াগাঁও ইউনিয়নে ২টি, বারদী ইউয়িনে ৫টি, সনমান্দি ইউনিয়নে ১টি ও জামপুর ইউনিয়নে ৫টি প্রকল্প বরাদ্ধ দেয়া হয়। বরাদ্ধ পাওয়ার পর গত ২৭এপ্রিল থেকে বিভিন্ন ইউনিয়নে অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচীর কাজ শুরু করা হয়। কর্মসূচী শেষ হবে আগামী ১৫ জুন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নে দু’টি মাটির রাস্তা নির্মাণের জন্য মোট ১২ লাখ ১৬ হাজার টাকা অর্থ বরাদ্ধ দেয়া হয়। ইউনিয়নের নয়ানগর মসজিদ হতে জয়নাল আবেদনের বাড়ি পর্যন্ত মাটির রাস্তা নির্মাণের জন্য বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে ৭ ল¶ বিশ হাজার টাকা। এ প্রকল্পে উপকারভোগীর সংখ্যা ৯০ জন। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রাস্তায় ৯০ জনের পরিবর্তে কাজ করছে মাত্র ১৬ জন উপকারভোগী। কাজ না করিয়েই বাকি ৭৪জন উপকারভোগীর অর্থ তুলে নেয়া হচ্ছে। একই চিত্র দেখা গেছে এ ইউনিয়নের পেকিরচর মেইন রাস্তা থেকে তোফাজ্জল মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ কাজে। এ রাস্তা নির্মাণ ৪ লাখ ৯৬ হাজার টাকা অর্থ বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। এ উপকারভোগীর সংখ্যা ৬২জন। অথচ সরেজমিন গিয়ে প্রকল্পের কাজে পাওয়া গেছে মাত্র ১১ জন। বাকী ৫১ জন উপকারভোগীকে কাজ না করিয়েই তাদের অর্থ আত্মসাত করা হচ্ছে। একই চিত্র দেখা গেছে উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নের প্রকল্পেও। নোয়াগাঁও ইউনিয়নের দু’টি প্রকল্পের অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে ১৩ মে দূর্যোগ ও ব্যবস্থাপানা ত্রাণ মন্ত্রনালয়ের বরাবর এলাকাবাসী একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। সরেজমিনে নয়ানগর মসজিদ হতে জয়নাল আবেদীনের বাড়ি পর্যন্ত মাটির রাস্তায় নির্মাণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, জয়নাল আবেদীনের বাড়ি হতে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ৯০জন উপকারভোগীর জায়গায় কাজ করছেন মাত্র ১৬জন উপকারভোগী। রাস্তার মাটি পার্শ¦বর্তী বাড়ির মাটি কেটে রাস্তায় ফেলা হচ্ছে। উপকারভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন তারা ১৫-২০জন কাজ করে থাকেন। এ প্রকল্পের টাকা চেয়ারম্যান ইউসুফ দেওয়ান পরিশোধ করেন।
নয়ানগর গ্রামের তাসলিমা বেগম বলেন, প্রতিদিন ১৫-২০জন করে শ্রমিক কাজ করেন। কখনো কম, আবার কখনো বেশি কাজ করে থাকেন। রাস্তার মাটি পার্শ্ববর্তী জমি থেকে নেয়ার কথা থাকলেও বাড়ির মাটি কেটে রাস্তায় ফেলা হচ্ছে।
নোয়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউসুফ দেওয়ান বলেন, প্রকল্পে কতজন কাজ করছে সেটা বিষয় না। কাজ হচ্ছে কিনা সেটাই দেখার বিষয়। সরকার যে অর্থ বরাদ্ধ দিয়েছে সে অর্থ দিয়ে কি বর্তমানে শ্রমিক পাওয়া যায়? প্রকল্পে কাজ হচ্ছে কিনা সেটাই দেখার বিষয়। শ্রমিকদেরকে কিভাবে পারিশ্রমিক দেয়া হয় এর উত্তরে তিনি বলেন, শ্রমিকদের আমরা নিজেরাই পারিশ্রমিক দিয়ে থাকি। শুধু আমি না, এ প্রকল্পে সকল জনপ্রতিনিধিরাই সোনারগাঁয়ে এভাবেই কাজ করাচ্ছেন।
সোনারগাঁ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম জানান, প্রকল্পে উল্লেখিত উপকারভোগীদেরকে দিয়েই কাজ শেষ করতে হবে। উপকারভোগী কম বেশি হলে হবে না। যদি কম লোকবল দিয়ে কাজ করিয়ে থাকে তার প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রতিটি প্রকল্পের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ বাজেট রয়েছে। সেই বাজেট ঘাটতি হওয়ার সুযোগ নেই।