সময়ের চিন্তা ডট কমঃ র্যা ব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধ এর উৎস উদ্ঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতারসহ আইন শৃংখলার সামগ্রিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। র্যা ব শুরু থেকে যে কোন ধরনের অপহরণ ও জিম্মি মূলক অপরাধ প্রতিরোধ এবং মানব পাচারকারী চক্রকে সনাক্ত, হত্যা ও লাশগুম অপহৃত ভিকটিম উদ্ধারসহ অপরাধীদের গ্রেফতারে সার্বক্ষনিকভাবে অভিযান পরিচালনা করে থাকে। তাছাড়া যে কোন চাঞ্চল্যকর হত্যার রহস্য উদঘাটসহ হত্যাকারীকে গ্রেফতাররে জন্য অভিযান পরিচালনা করে আসছে।
গত ২৩ মে ২০১৯ খ্রীষ্টাব্দে মনোয়ারা বেগম মদিনা(৬০) নামের এক মহিলা র্যা ব-১১, আদমজীনগর, নারায়ণগঞ্জ বরাবর এই মর্মে একটি অভিযোগনামা দেন যে, তার মেয়ে মিনু আক্তার(৩৫) গত ২১ মে ২০১৯ তারিখ ভোর ০৩০০ ঘটিকার পর হইতে নিখোঁজ রয়েছে। এ সংক্রান্ত তিনি সোনারগাঁ থানায় একটি জিডি করেন (জিডি নং -৯২৪ তারিখ ২৩ মে ২০১৯)। অভিযোগে উলেখ করেন, প্রায় ০৪ বৎসর পূর্বে জুনায়েদের এর সাথে কাপড়ের ব্যবসার সূত্র ধরে আমার মেয়ে মিনু আক্তারের পরিচয় হয়। পরিচয়ের এক পর্যায়ে গত ২০১৬ সালে মিনু আক্তার(৩৫) এর সহিত ভালবাসার সূত্র ধরে জুনায়েদের দ্বিতীয় বিবাহ হয়। আমার মেয়ে মিনু আক্তার জুনায়েদকে বিবাহ করায় উক্ত বিষয় নিয়ে জুনায়েদের সাথে প্রায় ঝগড়া বিবাদ করে মারধর করত এবং বিভিন্ন ভয়ভীতি সহ প্রাণ নাশের হুমকি দিত। এরপর গত বছর জুনায়েদ মিনুকে তালাক দেয়। তালাক দেওয়ার পরেও সে মিনুর সাথে জোরপূর্বক মেলামেশা করতে চাইলে মিনু তা করতে অ¯^ীকার করত। তারই প্রেক্ষিতে গত ২১ মে ২০১৯ইং তারিখ আনুমানিক রাত্রি ০৩০০ ঘটিকার সময় জুনায়েদ আমার মেয়েকে ফোন দিয়ে আমার বাসা হইতে তার ভাড়া করা বাসায় ডেকে নিয়ে যায়। অতঃপর হইতে অদ্যবধি পর্যš— আমার মেয়ে বাড়ীতে ফিরে না আসায় আমি জুনায়েদের বাসায় গিয়ে জানতে চাই আমার মেয়ে কোথায় সে বলে মিনু এখানে আসেনি। আমি তাদের বাড়ী থেকে ফিরে আসার পর জুনায়েত ও তার স্ত্রী বাসা থেকে পালিয়ে যায়। পরদিন সকালে তাদের বাসায় গেলে বাসায় তালা লাগানো থাকে। তালা ভেঙ্গে বাসা তলাশী করে দেখতে পায় ফ্লোরে রক্তে ভরা ও জুনায়েত এর রক্ত মাখা লুঙ্গি এবং মিনুর রক্তমাখা ওরনা পাওয়া যায়। বাড়ির আশেপাশে খোজাখুজির পর মিনুর মাথার চুল পাওয়া যায়।
অভিযোগ প্রাপ্তির পর র্যা ব-১১ এর একটি বিশেষ গোয়েন্দা দল নিখোঁজ মিনু আক্তারের সান্ধান ও সন্দেহভাজন জুনয়েতকে গ্রেফতারের জন্য গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু করে। বেশ কয়েকটি স্থানে অভিযান চালিয়ে সর্বশেষ ০৭ জুন ২০১৯ খ্রীষ্টাব্দে রাত ১২১৫ ঘটিকায় নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন, চিটাং রোড় এলাকা হতে আসামী জুনায়েদ (৪০), পিতা- মৃত সৈয়দ রফিক উদ্দিন, সাং- হরিপুর, পোঃ- হিরনবের, থানা- নাছিরনগর, জেলা- ব্রাম্ব্রণবাড়ীয়া, এ/পি- কাঁচপুর, মঞ্জুরখলা (জিহাদ খানের বাসার ভাড়াটিয়া), থানা- সোনারগাঁ, জেলা- নারায়ণগঞ্জকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, মোঃ জুনায়েদ (৪০), কাঁচপুরে জিহাদ খানের বাড়ীতে ভাড়াটিয়া হিসেবে সোনারগাঁয়ে থাকে এবং অলিম্পিক কোম্পানীর পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে কাজ করে। তার প্রথম স্ত্রী রোকিয়াও অলিম্পিক কোম্পানীর পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে কাজ করে। গত ২০১৬ সালে মিনু আক্তারের সাথে মোঃ জুনায়েদ এর দ্বিতীয় বিবাহ হয় এবং ২০১৮ সালে তাদের মধ্যে ডিভোর্স হয়ে যায়। এরপর থেকে জুনায়েদ এর প্রথম স্ত্রী নাইট ডিউটিতে গেলে জুনায়েদ মিনু আক্তারের সাথে একত্রে রাত কাটাতো। গত ২১ মে ২০১৯ ইং তারিখ আনুমানিক রাত্রি ০৩০০ ঘটিকার সময় মোঃ জুনায়েদ মিনু আক্তারকে ফোন দিয়ে তার ভাড়া বাসায় আসতে বলে। এর কিছুক্ষন পরে মিনু আক্তার তার ভাড়াটিয়া বাসায় আসলে মোঃ জুনায়েদ তাকে জোরপূর্বক ফুসলিয়ে ধর্ষন করে। পরবর্তীতে মিনু আক্তার ঈদের মধ্যে কাপড়ের ব্যবসা করার জন্য জুনায়েদের কাছে ২০,০০০/- টাকা দাবি করলে জুনায়েদ মিনু আক্তারকে চড়-থাপ্পড় দেয় এবং এক পর্যায়ে জুনায়েদ আনুমানিক রাত্রি ০৩৪০ ঘটিকার সময় ঘরের মধ্যে থাকা একটি বাশের লাঠি দিয়ে মিনু আক্তারকে মাথায় আঘাত করে। তখন মিনু আক্তার ঘরের মেঝেতে পড়ে গেলে জুনায়েদ মিনু আক্তারের বুকের উপরে বসে গলা টিপে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে। হত্যার পর রাত্রি ০৪১০ ঘটিকার সময় মিনু আক্তারের বুকে রশি বেধে বিবস্ত্র অবস্থায় ঘর থেকে টানতে টানতে বাড়ীর পাশের পুকুরের কচুরীপানার ভিতরে রেখে দিয়ে জুনায়েদ ঘরে ফিরে আসে। পরবর্তীতে জুনায়েদ সকালের দিকে তার কর্মস্থলে চলে যায়। ২১ মে ২০১৯ ইং তারিখ আনুমানিক রাত্রি ২২০০ ঘটিকার সময় বাড়ীর পাশের পুকুরের কচুরীপানা থেকে মিনু আক্তারের মরা দেহ উঠিয়ে রশি দিয়ে বেধে পাশের ড্রেজারে বালি ফেলার স্থানে নিয়ে গিয়ে জুনায়েদ বালির গর্ত করে মিনু আক্তারের লাশ গুম করে। পরবর্তীতে মিনুর খোঁজে তার মা জুনায়েদ এর বাসায় আসলে জুনায়েদ সু-কৌশলে পালিয়ে যায়।
এরই প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত মোঃ জুনায়েদ(৪০) ও নিখোঁজ মিনু আক্তারের মোবাইল কল লিষ্ট, ও ঘটনার দিনের গতিবিধি পর্যালোচনা করে দেখা যায় ঐ দিন রাতে তারা কাঁচপুরে জিহাদ খানের বাড়ীতে ভাড়াটিয়া বাসায় অবস্থান করে। ধারণা করা হয় মোঃ জুনায়েদ তার অপকর্ম আড়াল করতে মিনু আক্তারকে হত্যা করে তার লাশ গুম করেছে। ০৭ জুন ২০১৯ খ্রীষ্টাব্দে রাত ১২১৫ ঘটিকায় নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন, চিটাং রোড় এলাকা হতে মোঃ জুনায়েদকে গ্রেফতার করা হয়। জুনায়েদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক র্যা বের আভিযানিক দল স্থানীয় জনসাধারণ, সাংবাদিক ও পুলিশের উপস্থিতিতে তার বাড়ির পাশের ড্রেজার এলাকার মাটিখুঁড়ে অদ্য বেলা ১১৩০ ঘটিকার সময় নিহত মিনু আক্তারের লাশ উদ্ধার করে সোনারগাঁ থানা পুলিশের কাছে হস্থান্তর করে।
গ্রেফতারকৃত মোঃ জুনায়েদ এর বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ থানায় আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
Home
আইন ও অপরাধ লাশ উদ্ধারসহ চাঞ্চল্যকর”মিনু আক্তার’ ধর্ষণ এবং লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন এবং মূল...