সোনারগাঁয়ে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

314

হুমায়ুন কবির, সোনারগাঁঃ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে এশিয়ান হাইওয়ে সড়কে রাস্তা পার হতে গিয়ে বেপরোয়া ট্রাক চাপায় নিহত মাসুমের মৃত্যুর জন্য ট্রাক চালকের শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে ললাটি গ্রামবাসী ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন সুবর্ণগ্রামের আয়োজনে সোনারগাঁও প্রেস ক্লাবের সভাকক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ললাটি বাস স্ট্যান্ড এলাকায় একটি ফুটওভার ব্রীজ নির্মাণেরও দাবি করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, কবি ও মানবাধিকার কর্মী শাহেদ কায়েস। এসময় উপস্থিত ছিলেন, গজারিয়া কলিমউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ মোনতাজউদ্দিন মর্তুজা, কাঁচপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ নজরুল ইসলাম, সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত মাসুমের চাচা মোঃ হান্নান মিয়া, সিরাজুল ইসলামসহ এলাকাবাসী।
শাহেদ কায়েস বলেন, কাঁচপুর ইউনিয়নের ললাটি বাস স্ট্যান্ড থেকে বটতলা পর্যন্ত পাঁচশ মিটারের দূরত্বের মধ্যে রাস্তা পার হতে গিয়ে গত ১৫ বছরে এ গ্রামে ১২জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এদের মধ্যে মোঃ দেলোয়ার, জাহিদুল আলম শামীম, মোসাম্মৎ তসিরুন বেগম, মোসাম্মৎ শিউলি আক্তার ও তার দাদা মোঃ জলিল, মোঃ মজিবুর রহমান, মোঃ সিরাজুল হক, মোঃ মাসুম। এছাড়াও এ গ্রামে বেড়াতে এসে আরও দু’নারী ও এক শিশু নিহত হয়।
মাসুমের সড়ক দূর্ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ঘটনার দিন এশিয়ান হাইওয়ে সড়কের ললাটি এলাকায় উত্তর থেকে দক্ষিণের দিকে রাস্তা পার হচ্ছিলেন মোঃ মাসুম মিয়া। হঠাৎ একটি ট্রাক (ঢাকা মেট্রো ন- ১৫-৭৮৬০) অন্য একটি গাড়িকে ওভারটেক করে রং সাইড দিয়ে এসে মাসুমকে চাপা দেয়। ঘটনাস্থলেই মাসুম মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। ২৬ বছরের একটি তাজা প্রাণ এভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। গাড়ির চালকের অবহেলা ও খামখেয়ালির কারণেই মৃত্যুকে আমরা দুর্ঘটনা না বলে হত্যাকান্ড বলতে চাই। এ বিষয়ে সোনারগাঁ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হচ্ছে রাস্তায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি এবং চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালানো। গাড়ির ফিটনেস আছে কি না তা পরীক্ষা করে রাস্তায় নামানো উচিৎ। কিন্তু ব্যাপক দুর্নীতি ও ¯^জনপ্রীতির কারনে ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় দেখা যায় অহরহ। ফলে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। রোড পারমিট আপটুডেট ছাড়া যদি রাস্তায় গাড়ি বের হয় এবং ধরা পড়ে তাহলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। এছাড়াও অতিরিক্ত দ্রুত গতিতে চালানো, প্রতিযোগিতামূলকভাবে গাড়ি চালানো, যখন তখন ওভারটেক করা, চালকদের প্রশিক্ষণ না থাকা, আইন কানুন না মানা এগুলো সড়ক দুর্ঘটনার জন্য সবচেয়ে বেশী দায়ী। এছাড়া বর্তমান আইনে সড়ক দুর্ঘটনায় চালকদের অবহেলায় কারো মৃত্যু হলে সর্বোচ্চ শাস্তি ৩ বছরের কারাদন্ড করা হয়েছে। মোবাইল ফোনে কথা বলা অবস্থায় গাড়ি চালালে শাস্তি ৫শ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। এ আইনেরও সঠিক কোনও প্রয়োগ নেই। এ আইন দিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ সম্ভব নয়। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ¶তিপূরণের বিধান রেখে কঠোর আইন প্রণয়ন এবং আইনের সঠিক প্রয়োগের দাবি জানান তিনি।
তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা বর্তমানে বাংলাদেশে মহামারী আকারে রূপ নিয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কঠোর আইন ও শাস্তির বিধান রাখতে হবে। দোষী চালকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির উদাহরণ থাকলে চালকরা সাবধানে গাড়ি চালাতে বাধ্য হবেন। সড়ক দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে সর্বোচ্চ মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে মামলা দায়েরের বিধানের ব্যবস্থা করা উচিৎ।
পরিশেষে, ললাটি বাসস্ট্যান্ডে একটি ফুটওভার ব্রীজ নির্মাণ করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলন শেষে ললাটি গ্রামবাসী বাস স্ট্যান্ড এলাকায় ফুট ওভার ব্রীজের দাবী মানা না হলে জীবন বাঁচাতে অনির্দিষ্টকালের জন্য আন্দোলন করে এশিয়ান হাইওয়ে সড়ক বন্ধ করে দেয়ার ঘোষনা দেন।