প্রশাসনের নীরব ভুমিকায় বিভিন্ন পাড়া-মহল্লাসহ সোনারগাঁয়ে মীম আবাসিক বোর্ডিংয়ে চলছে রমরমা দেহ ব্যবসা

1519

স্টাফ রিপোর্টারঃ নারায়ণগঞ্জের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহসড়কের সোনারগাঁ উপজেলার পিরোজপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মীম আবাসিক বোর্ডিং ব্যবসার অন্তরালে রমরমা দেহ ব্যবসা চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন বয়েসর নারী পুরুষদের আনাগোনা হয়ে থাকে এ বোর্ডিংয়ে। বছর খানিক আগে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা একত্রিত হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে দেহ ব্যবসার অভিযোগে অপর একটি বোর্ডিংয়ে হামলা চালালে এতে সাময়িকভাবে মীম বোর্ডিংটিতে দেহ ব্যবসা বন্ধ রাখা হয়। পরে সুযোগ বুঝে পুনরায় এ বোর্ডিংয়ে একচ্ছত্রভাবে দেহ ব্যবসা চলছে বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা।

এ ব্যাপারে সোনারগাঁয়ের আইন-শৃক্সখলা বাহিনী কোন ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছেনা বলেও অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী। জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পিরোজপুর বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় পিরোজপুর গ্রামের স্থানীয় প্রভাবশালী হাজী তাজু মোল্লার মালিকানাধীন মোল্লা প্লাজায় গড়ে উঠে মীম আবাসিক বোর্ডিং নামের একটি আবাসিক হোটেল। এই আবাসিক বোর্ডিংটি গড়ে উঠার পর পরই শুরু হয় অসামাজিক কার্যকলাপ, মাদক ও দেহ ব্যবসা। প্রতিদিন বাহির থেকে বিভিন্ন বয়সের নারী এনে বোর্ডিংটিতে চলে অবৈধ দেহ ব্যবসা। এছাড়া দেহ ব্যবসার অন্তরালে চলে রাতভর জুয়া ও মাদক সেবন। এমস অভিযোগের ভিত্তিতে এর আগে সোনারগাঁ থানা পুলিশ এই বোর্ডিংটিতে অভিযান চালিয়ে দুইজন নারী ও খদ্দেরসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছিল। পরে কিছুদিন বন্ধ থাকার পর আবারও সেখানে শুরু করে অবৈধ দেহ ব্যবসা।

স্থানীয় মুসল্লীরা জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে মোগরাপাড়া চৌরাস্তা এলাকায় নোয়াব প্লাজায় অবস্থিত কুইন গার্ডেন গেস্ট হাউজ নামের একটি আবাসিক হোটেলে গত বছর দেড়েক আগে জুম্মার নামাযের পর স্থানীয় মুসল্লীরা একত্রিত হয়ে হামলা ও ভাংচুর করে আটজনকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এর পর থেকে কুইন গার্ডেন গেস্ট হাউজটি একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। সে ঘটনার পর পরই সোনারগাঁ থানা পুলিশ মীম আবাসিক বোর্ডিংয়ে অভিযান চালালে পনের থেকে বিশ দিনের মতো মীম-আবাসিক বোর্ডিংয়ে দেহ ব্যবসা বন্ধ থাকার পর পূনরায় সেখানে দেহ ব্যবসা শুরু করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিরোজপুর গ্রামের একাধিক বাসিন্দারা জানান, সোনারগাঁয়ের মতো একটি ঐতিহাসিক ও পবিত্র স্থানে আবাসিক হোটেল গড়ে তুলে অবৈধ দেহ ব্যবসা তা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আর প্রশাসন সব কিছু জেনেও কেন কোন প্রকার ব্যবস্থা নিচ্ছে না সেটাও বুঝতে পারছি না। আমাদের স্কুল কলেজ পড়–য়া ছোট ছোট ছেলে মেয়ে রয়েছে। চোখের সামনে এভাবে দেহ ব্যবসা চলতে থাকলে একদিন তারাও বিপদগামী হতে পারে। তারা আরও দাবি করেন, পুলিশী অভিযান নয়, এগুলোকে স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিতে হবে। কিছু বহিরাগত লোক সোনারগাঁয়ে প্রবেশ করে আবাসিক হোটেল গড়ে তুলে সোনারগাঁয়ের সুনাম নষ্ট করার অপচেষ্টা করছে। এটা কোন ভাবেই আমার মেনে নিতে পারছিনা।

বিষয়টি সোনারগাঁ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামানকে জানালে তিনি বলেন, মিম আবাসিক হোটেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। আমরা খুব শীঘ্রই যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করব।

উল্লেখ্য, মিম আবাসিক হোটেলের পাশাপাশি উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের গঙ্গানগর গ্রামে মিনি পতিতালয়ের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। রয়েছে দেহ ব্যবসার আসর মিনি পতিতালয় ও বাড়ছে অসামাজিক কার্যকলাপ। তারই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার বিকেলে সেখানে অভিযান চালিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে ৫ নারীসহ ৩ খদ্দেরকে আটক করেছে সোনারগাঁ থানা পুলিশ।

সোনারগাঁ থানার উপ-পরিদর্শক আলমগীর হোসেন জানান, উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন বাড়িতে বাসা ভাড়া নিয়ে কিছু লোক মিনি পতিতালয় খুলে দেহ ব্যবসা করছে বলে স্থানীয়রা পুলিশের কাছে অভিযোগ করে আসছে। সে অভিযোগের ভিত্তিতে শুক্রবার বিকালে পুলিশ মেঘনা পাওয়ার স্টেশন রোডের গঙ্গানগর গ্রামের আক্তার হোসেনের বাসা বাড়িতে অভিযান চালায়। এসময় মিনি পতিতালয় পরিচালনাকারী জরিনাসহ ৫ নারীকে আটক করে এবং অসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগে আপত্তিকর অবস্থায় ৩ পুরুষকে আটক করা হয়। আটককৃত নারী ও পুরুষদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা ঘুরে অনুসন্ধান করে জানা গেছে, বেশ কিছু অভিজাত এলাকায় বিভিন্ন বয়সী পতিতারা বাসা ভাড়া নিয়ে পতিতাবৃত্তি করে থাকে। এর মধ্যে উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য এলাকা, মেঘনা শিল্পনগরী এলাকা, কাঁচপুর, আমিনপুর পৌরসভা এলাকায় এসব বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এছাড়াও অন্যান্য ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায়ও এই অবৈধ দেহ ব্যবসা ও অনৈতিক কর্মকান্ডগুলো বিভিন্ন কীটপতঙ্গের ন্যায় ছড়িয়ে পড়ছে। পতিতারা বাসা ভাড়া নিয়ে এলাকার প্রভাবশালী ও সন্ত্রাসীদের ছত্রছায়ায় পতিতাবৃত্তি করে থাকে। এবিষয়ে এলাকার লোকজন প্রতিবাদ করার কোন সাহস পায় না। এতে করে সমাজের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, বিপথগামী হচ্ছে সমাজের মা-বোন ও স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা পড়–য়া শিক্ষার্থীরা।

রাতের বেলা ভাসমান পতিতারা কাঁচপুর ও মোগরাপাড়া বাস স্ট্যান্ডসহ আশেপাশের এলাকায় পতিতাবৃত্তি করে থাকে। প্রশাসন থাকে নীরব ভ‚মিকায়। বাসা বাড়ির পতিতারা পতিতাবৃত্তির পাশাপাশি মাদক বিক্রির সাথেও জড়িত বলে জানিয়েছে একাধীক সূত্র। আর এ সকল কাজে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করে থাকে বাড়ির কেয়ারটেকার বা পাহাড়াদাররা এবং স্থানীয় এলাকার প্রভাবশালী ও সন্ত্রাসীরা।

জানা গেছে, এসব পতিতারা স্থানীয় সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে বিভিন্ন পর্যায়ের খদ্দেরদের নিকট থেকে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে এবং মারধর করে জোরপূর্বক সব টাকা পয়সা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়।

তাই যত দ্রুত সম্ভব প্রশাসনের মাধ্যমে বাড়িওয়ালাদেরকে ডেকে সতর্ক করতে হবে, যাতে করে বাড়িওয়ালারা সতর্কতার মাধ্যমে বুঝে ও জেনে-শুনে তাদের বাড়ি ভাড়া দেন এবং বাড়িওয়ালারাও যাতে সর্বদা ভাড়াটিয়াদের দিকে লক্ষ্য রাখেন সে বিষয়ে তাদেরকে সচেতন করে তুলতে হবে।