সোনারগাঁয়ে বৈদ্যেরবাজার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে জালিয়াতির মাস্টার খ্যাত ওমেদার জাকিরের দুর্নীতি চরমে

826

নিজস্ব রিপোর্টঃ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে জালিয়াতির মাস্টার খ্যাত ওমেদার জাকির হোসেনের দূর্ণীতি এখন চরম আকার ধারন করেছে। তার জন্য উপজেলার বৈদ্যেরবাজার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসটি বর্তমানে দুর্নীতি ও অনিয়মের আখড়ায় পরিনত হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি জানান, একজন সামান্য ওমেদারের এত ক্ষমতা দেখে রীতিমত হতবাক আমরা সোনারগাঁবাসী। জালিয়াতির মাস্টার ওমেদার জাকির হোসেনের অনিয়ম, ঘুষ ও দুর্নীতি ঢাকতে রীতিমত আট-ঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছেন বৈদ্যেরবাজার রেজিস্ট্রি অফিসের সাব-রেজিস্ট্রার আব্দুর রশিদ মন্ডল ও কয়েকজন দলিল লেখক সমিতির নেতারা। এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার এই দুই সাব-রেজিস্ট্রার কয়েক দফা বৈঠক করে দলিল লেখক সমিতির নেতাদের সাথে। তবে, স্থানীয়রা জানিয়েছেন, জালিয়াতির মাস্টার ওমেদার জাকির হোসেনের অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত হলে তার সাথে ফেঁসে যাবে সাব-রেজিস্ট্রার আব্দুর রশিদ মন্ডল ও কয়েকজন দলিল লেখকও। এ কথার সত্যতা পাওয়া যায় ওমেদার জাকির হোসেনের বক্তব্য থেকে। তিনি মুঠোফোনে জানান, আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগগুলো শতভাগ মিথ্যা। কারন জমির দলিল সম্পাদনসহ যাবতীয় কাজ করেন সাব-রেজিস্ট্রার। আর আমার কাজ হলো কাগজপত্র টেনে দেয়া।

জানা গেছে, জমির দলিল আটকে রেখে ঘুষ দাবি, মারাত্মক অসৌজন্যমূলক আচরন বর্তমানে সোনারগাঁয়ের বৈদ্যেরবাজার সাব-রেজিস্ট্রার, ওমেদার, পিওন ও নকল নবিশদের নিয়মিত আচরণে পরিণত হয়েছে। আর এ সকল কাজের নেতৃত্ব দেয় ওমেদার জাকির হোসেন নিজেই। এক কথায় বৈদ্যেরবাজার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের হর্তাকর্তা হলো ওমেদার জাকির হোসেন।

জালিয়াতির মাস্টার খ্যাত ওমেদার জাকির হোসেনের নেতৃত্বে বৈদ্যেরবাজার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসটি এখন চরম দুর্নীতি ও অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। তবে এ বিষয়টি এখন পুরোপুরি ওপেন সিক্রেট। বৈদ্যেরবাজার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ঘুষ ছাড়া কোনো কাজই হয় না। জমির সাব-কবলা দলিল, হেবা দলিল ও বন্টননামা দলিলে মাত্রাতিরিক্ত ঘুষ এবং জাল কাগজপত্র ও ভূয়া দাতা সাজিয়ে জমি রেজিস্ট্রি এবং জমি দখলসহ নানা ঘটনায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন ভুক্তভোগীরা।

আরও জানা গেছে, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন ম্যানুয়াল-২০১৪ এর অধ্যায়-২৬ এ উল্লেখ আছে যে, সহকারীগণ কর্তৃক দলিল পরীক্ষাকরণ কাক্সিখত নহে, এই কাজটি অবশ্যই স্বয়ং নিবন্ধনকারী কর্মকর্তা কর্তৃক সম্পাদিত হইবে। কিন্তু বৈদ্যেরবাজার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ঘুষ আদায়ের কৌশল হিসেবে সাব-রেজিস্ট্রারের রুটিনমাফিক সব কাজ করেন ওমেদার জাকির হোসেন। এছাড়াও কমিশনে দলিল রেজিষ্ট্রি করলে সাব-রেজিস্ট্রার হিসাবে উপস্থিত হয় এই ওমেদার জাকির। এই সুযোগে সাব রেজিস্ট্রারের সাথে সাথে ওমেদার জাকিরও কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। দলিল চেক করার কাজ সাব-রেজিস্ট্রারদের করার নিয়ম থাকলেও তা করছেন ওমেদার জাকির। এর আগে বৈদ্যেরবাজার সাব রেজিস্ট্রি অফিসের ওমেদার জাকিরের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরা একাধিকবার অভিযোগ তুললেও দুর্নীতিবাজ ওমেদার জাকিরের বিরুদ্ধেই নেয়া হয়নি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কোন পদক্ষেপ। তবে লোক দেখানোভাবে ওমেদার জাকিরকে নামমাত্র বদলি করার দু’মাসের মধ্যেই সে পূনরায় এই বৈদ্যেরবাজার রেজিস্ট্রি অফিসে যোগ দেয়।

এছাড়াও জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য সোনারগাঁয়ে গণশুনানির আয়োজন করে যাতে ভুক্তভোগীরা তুলে ধরেছেন তাদের নানা সমস্যার কথা। তার মধ্যে ছিল সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের চরম দুর্নীতি ও অনিয়মের চিত্র।

তাই ভুক্তভোগী জনগণের দাবি, রেজিষ্ট্রি সংক্রান্ত নানা কাজে জনগণের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে দুর্নীতি করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছেন সাব-রেজিস্ট্রারসহ অন্যান্য কর্মচারীরা। তখনও ওমেদার জাকিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠলেও অদৃশ্য কারনে বেঁচে যায় সে। শুধু এ ঘটনা নয়, জাল দলিলের মাধ্যমে জমি বিক্রির পর ওই জমি রেজিস্ট্রির মতো একাধিক ঘটনার নেপথ্য কারিগর হিসেবে কাজ করে ওমেদার জাকির হোসেন। সোনারগাঁয়ে ওমেদার জাকির হোসেন জালিয়াতির মাস্টার হিসেবে খ্যতি পেয়েছেন। প্রভাবশালী অপরাধী চক্র তার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে জাল দলিল তৈরি করছে।

সরেজমিনে গিয়ে বৈদ্যেরবাজার সাব রেজিস্ট্রার আব্দুর রশিদ মন্ডলের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত উৎকোচ আদায় ও অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সাব রেজিস্ট্রার আব্দুর রশিদ মন্ডল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দোহাই দিয়ে অতিরিক্ত উৎকোচ আদায় করে আসছিল বলে অভিযোগ দলিল লেখকদের। সাব-রেজিস্ট্রারের হয়ে প্রতিদিন বিকালে দলিল লেখকদের কাছ থেকে টাকা তুলে ওমেদার জাকির হোসেন। সাব-রেজিস্ট্রারের সাথে ওমেদার জাকিরের গভির সখ্যতা থাকায় ভয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহস পায় না স্থানীয় দলিল লেখকরাও।

বৈদ্যেরবাজার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের ওমেদার জাকির হোসেন তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ শতভাগ মিথ্যা। কারন জমির দলিল সম্পাদনসহ যাবতীয় কাজ করেন সাব-রেজিস্ট্রার। আর আমার কাজ হলো কাগজপত্র টেনে দেয়া।

এ বিষয়ে জানতে উপজেলার বৈদ্যেরবাজার সাব-রেজিস্ট্রার আব্দুর রশিদ মন্ডলের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।