নুরুজ্জামান, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে গত ৬ দিনের টানা বর্ষণের পর বৃহস্পতিবার রাত থেকে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হলেও অব্যাহত পাহাড়ি ঢলে পানি বৃদ্ধির ফলে পানিবন্দি লাখো মানুষের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। উপজেলার কনসখাই, নাইন্দা, বন্দেহরি, পান্ডারখাল, গৌরিপুর, হিঙ্গিমারি, শান্তিপুর, গোয়ারাই, বড়ঝাই, কানলা ও দেখার হাওর তলিয়ে গেছে। ঢলের তোড়ে ভেসে গেছে শতাধিক পুকুরের মাছ। তলিয়ে গেছে শতাধিক হেক্টর উঠতি আউশ-ইরি, সদ্য বপন করা আমনের বীজতলা, সবজি ক্ষেতসহ মাঠঘাট ও গোচারণ ভূমি।
গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়াসহ শ্রেণিকক্ষে পানি ঢোকায় বৃহস্পতিবার থেকে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করায় পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। উপজেলা সদরে সুরমার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে অফিসপাড়াসহ বাসাবাড়িতে পানি ঢুকছে। উপজেলা পরিষদের সম্মুখস্থ পাকা সড়কসহ নদীপাড়ের অব্যাহত ভাঙনে রাতদিন আতঙ্কে কাটছে ব্যবসায়ীদের। ইতোপূর্বে দোয়ারাবাজার-সুরমা লাফার্জ সড়কের মাস্টার পাড়া এলাকায় দীর্ঘ রাস্তা ও দোকানপাটসহ ৭টি স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত দোয়ারাবাজার সদর ও সুরমা ইউনিয়ন ছাড়াও বগুলা, লক্ষীপুর, নরসিংপুর, বাংলাবাজার, দোহালিয়া, পান্ডারগাঁও ও মান্নারগাঁও ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
দোয়ারাবাজার-ব্রিটিশ সড়কের সংস্কারকাজে উভয় পাশে ইটের গার্ডওয়াল বসানোর ফলে খানাখন্দে ভরা দুই কিলোমিটার রাস্তাজুড়ে হাটুসমান কাঁদাপানি লেগে থাকায় এবং অপরদিকে দোয়ারাবাজার-বগুলা সড়কে মহব্বতপুর (মামনপুর) এলাকার মোকামের কাছে শতাধিক ফুট প্রশস্ত ভাঙনসহ রাস্তাজুড়ে হাটুসমান কাঁদা থাকায় উপজেলা সদরের সাথে চার ইউনিনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোনিয়া সুলতানা, ওসি আবুল হাশেমসহ বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দিনভর উপদ্রুত এলাকা পরিদর্শন করেন। উপজেলা সদরে একটি কন্ট্রোলরুম ও একটি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোনিয়া সুলতানা জানান যে, উপদ্রুত এলাকায় শুকনো খাবার বিতরণ ছাড়াও আমাদের মেডিকেল টিম পানি বিশুদ্ধিকরণ ও প্যারসিটামল ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ বিতরণ করছেন। তিনি জানান,দূর্যোগ মোকাবেলায় ইতোমধ্যে উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করা করা হয়েছে । আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্ঠা করছি সবার জন্য কিছু করার। তবে সরকারের পাশাপাশি উপজেলার বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে এলাকার গরীবদের অনেক উপকার হত।