ছেলে ধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে যুবক নিহত, আহত এক নারী

442

সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ছেলে ধরা সন্দেহে গণপিটুনীতে অজ্ঞাত এক যুবক (২৫) নিহত ও শারমিন (২০) নামে এক নারী গুরুতর আহত হয়েছে। গতকাল শনিবার (২০ জুলাই) সকাল ৮ টায় মিজমিজি আল আমিন নগর ও ১০ টার দিকে মিজমিজি পাইনাদী নতুন মহল্লা পিএম এর মোড় এলাকায় এ পৃথক দু’টি ঘটনা ঘটে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। অপর ঘটনায় জনরোশ থেকে শারমিনকে উদ্ধার করতে গেলে পুলিশের সাথে আধা ঘন্টাব্যাপী ধাওয়া-পাল্টা হয় এলাকাবাসীর। উত্তেজিত জনতা পুলিশকে লক্ষ করে ইটপাটকেল ছুড়ে। ভাংচুর করে পুলিশের গাড়ি। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে ওই নারীকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ খানপুর হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা শেষে থানায় নিয়ে আসে। তাকে আটক করে পুলিশ। এ দু’টি ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ধৃত শারমিন পটুয়াখালী জেলা সদরের মরিচবুনিয়া এলাকার সালমান শাহর স্ত্রী। সে ঢাকার কেরানীগঞ্জ ঝিলমিল হাসপাতাল এলাকার বাসিন্দা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকাল ৮ টার দিকে আল আমিন নগর এলাকার মহিউদ্দিনের বাড়ীর ভাড়াটিয়া রাজমিস্ত্রি সোহেলের মেয়ে সাদিয়া (৭) মজিবুর রহমান সড়ক দিয়ে স্কুলে যাওয়ার পথে এক যুবক তার হাতে ধরে হেটে যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজন সন্দেহবশত জিজ্ঞাসা করে। এসময় সে অসংলগ্ন কথাবার্তা বললে স্থানীয় জনতা উত্তেজিত হয়ে ছেলে ধরা সন্দেহে গণপিটুনি দিলে সে আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাকে উদ্ধার করে আশঙ্কা জনক অবস্থায় নারায়ণগঞ্জ ৩’শ শয্যা হাসপাতালে পাঠালে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সাদিয়ার পিতা সোহেল ভোলা জেলার দৌলতখান থানার সদরপুর ২ নং ওয়ার্ড এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা।
অপরদিকে, সকাল ১০ টার দিকে পাইনাদী নতুন মহল্লা শাপলা চত্ত¡র এলাকায় ইটালী প্রবাসী বিল্লালের বাড়ীর চার তলায় খাদিজার ফ্লাটে শারমিন প্রবেশ করে তার নাতী নাদিমকে (৩) পুতুল দেয়। এতে পরিবারের লোকজনের সন্দেহ হলে বাড়ীওয়ালাকে খবর দেয়। এ ঘটনায় বাড়ীর সামনে লোকজন জড়ো হয়ে পরে। একপর্যায়ে উত্তেজিত জনতা শারমিনকে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনি দিয়ে পিএমের মোড়ে আল বালাগ স্কুলে আটকে রাখে। খবর পেয়ে পুলিশ ওই নারীকে উদ্ধার করতে গেলে উত্তেজিত জনতা পুলিশকে লক্ষ করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। তখন পুলিশের সাথে জনতার ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। আধ ঘন্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে ওই নারীকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য নারায়ণগঞ্জ ৩’শ শয্যা হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। চিকিৎসার পর তাকে থানা নিয়ে এসে আটক করা হয়।
এ দিকে দু’টি ঘটনার খবর পেয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ছুটে আসেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হেডকোয়ার্টার) সুবাস চন্দ্র সাহা। ঘটনার সত্যতা স্বীকার তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর জন্য মানুষের মাথা লাগার একটি গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এ গুজবে সন্দেহজনক ভাবে কিছু ঘটনা ঘটছে। আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে পুলিশকে সহায়তা করার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
এ ব্যাপারে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর শাহীন শাহ পারভেজ জানায়, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। নিহতের লাশ উদ্ধার করে মর্গে আর আহত নারীকে চিকিৎসা শেষে আটক করা হয়েছে। নিহতের পরিচয় সনাক্তের চেষ্টা চলছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ জনকে থানায় আনা হয়েছে। পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি চলছে।