সময়ের চিন্তা ডট কমঃ দু’জন পুলিশ সদস্যের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ওসি কামরুল ইসলামের নাম আসার পরেও অভিযোগপত্রে তাকে অন্তর্ভুক্ত না করায় প্রায় ৫০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধারের মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। আগামী দুই মাসের মধ্যে ওই তদন্ত সম্পন্নের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেন।
আদালত বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আসামির জবানবন্দিতে নাম আসার পরেও ওসিকে অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। আমরা মনে করি এই অভিযোগপত্র ডিফেকটিভ (ত্রুটিযুক্ত)। এ কারণে মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হলো। গত বছরের ৭ মার্চ নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার রুপালি আবাসিক এলাকা থেকে সদর মডেল থানার এএসআই সরোয়ার্দি ও মাদকবহনকারী সাবিনা আক্তার রুনুকে ইয়াবা ও টাকাসহ গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মো. মাসুদ রানা। সরোয়ার্দির বাসা থেকে মাদক উদ্ধারের পরদিনই বন্দর থানায় চারজনকে আসামি করে মামলা করা হয়।
ওই মামলার আসামি আলম সরোয়ার্দি জবানবন্দিতে বলেন, ইয়াবাসহ আটকের পর ওসি কামরুল ইসলামকে ফোন করি। উনি আমাকে নিরাপদ স্থানে যেতে বলে। এরপর ঘাটের কাছেই বাসা হওয়ায় আমি আসামিসহ আমার বাসায় চলে যাই। পরে ওসি আলামত (৪৯ হাজার পিস ইয়াবা) ও টাকা রেখে রুনুসহ দু’জনকে মোর্শেদের কাছে দিতে বলে। মোর্শেদ রুনুকে নিয়ে বাসার নিচে যাওয়ার পর আমাকে ফোন দিয়ে অপর আসামিকে ছেড়ে দিতে বলে। আসামি ছেড়ে দেওয়ার আগে আমি আলামত ও টাকা রেখে দেই। ওই আলামত থেকে ৫ হাজার পিস ইয়াবা এনে ওসির কথামত জনি নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসি। রাতে ডিবি অভিযান চালিয়ে আলামত ও টাকা জব্দ করে।
আসামি কনস্টেবল মো. আসাদুজ্জামান জবানবন্দিতে বলেন, সরোয়ার্দির বাসায় গিয়ে দেখি রুনু ও আ. রহমানকে দেখতে পাই। সে দুজনকে ইয়াবাসহ ধরেছে। মাদকগুলো থানায় না এনে বাসায় আনার কারণ জিজ্ঞাসা করলে সরোয়ার্দি বলেন, ওসি কামরুল স্যার আমাকে আসামিসহ মাদকগুলো বাসায় রাখতে বলেছে।
এই দুই আসামির জবানবন্দিতে ওসির নাম আসার পরেও তাকে বাদ দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজিমউদ্দিন আল আজাদ। এই মামলায় জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন কনস্টেবল আসাদুজ্জামান। তার জামিন প্রশ্নে জারিকৃত রুল শুনানিতে ওসিকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আসে। এরপরই তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করে আদালত। পাশাপাশি দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে নাম আসার পরেও অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত না করার বিষয়ে দুই সিনিয়র আইনজীবীর বক্তব্য গ্রহণ করে হাইকোর্ট। এরপরই উপরোক্ত রায় দেয় আদালত। এ সময় আসাদুজ্জামানের পক্ষে অ্যাডভোকেট ফরহাদ আহমেদ ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারোয়ার হোসেন বাপ্পী উপস্থিত ছিলেন।