সময়ের চিন্তা ডট কমঃ নারায়নগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে নিজের মেয়েকে জখম করে দুই কন্যাসহ শ্যালিকাকে জবাই করে হত্যার ঘটনায় ঘাতক দুলাভাই আব্বাসকে গ্রেফতার করেছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক (ডিআই-২) সাজ্জাদ রোমন গণমাধ্যম কর্মীদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরো জানান এই ঘটনায় সন্ধ্যা ৭ টায় পুলিশ লাইনে সংবাদ সম্মেলনে করবেন মাননীয় পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ পিপিএম (বার), বিপিএম (বার)। সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হবে।
একই দিন সকালে সিদ্ধিরগঞ্জের ১নং ওয়ার্ডের পাইনাদী সিআই খোলা এলাকার আনোয়ারের ৭ম তলা ভবনের ৬ষ্ঠ তলার পূর্বপাশের একটি ফ্লাট বাসা থেকে মা ও দুই মেয়ের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় আহত অবস্থায় আরেকজনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পারিবারিক কলহের জের ধরে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা পুলিশের। পরে ময়না তদন্তের জন্য লাশ নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ।
নিহতরা হল, মহানগরের আদমজী সুমিলপাড়া আইলপাড়া এলাকার সুমন মিয়ার স্ত্রী নাজনিন বেগম (২৮), তাঁর মেয়ে নুসরাত (৫) ও খাদিজা (২)। নাজনিনের বোনের মেয়ে প্রতিবন্ধি সুমাইয়াকে (১৫) ছুরিকাঘাত করা হয়। তাকে আশংকাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহতের স্বামী সুমন জানান, তিনি সিদ্ধিরগঞ্জের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সানারপাড় এলাকার জোনাকি পেট্রোল পাম্পে রাতে ডিউটি শেষে সকাল ১০টায় বাসায় ফিরেন। ঐ সময় বাসার দরজা খোলা ছিল। ভিতরে প্রবেশ করতেই স্ত্রী সন্তানদের লাশ দেখতে পায়। আর আহত অবস্থায় আত্মীয় সুমাইয়া পড়ে আছে।
ভাড়াটিয়া ও আত্মীয় স্বজনকে সহ পুলিশকে খবর দেয়। পড়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার শুরু করে।
খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে আসেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ফারুক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক-সার্কেল) মেহেদী ইমরান সিদ্দিকী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মনিরুল ইসলাম, জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনাম আহমেদ।
দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ বলেন, মূলত পারিবারিক কলহের জের ধরেই এ তিনটি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। আজ সকাল ৮টায় ঘটনাটি ঘটেছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে এ হত্যাকান্ডের ঘাতক হলেন আব্বাস। আব্বাসের সাথে তার স্ত্রীর বিরোধ ছিল। ওই বিরোধের কারণে জিদ করে আব্বাসের শ্যালিকার বাসায় তার স্ত্রী চলে আসে। সে একটি গার্মেন্টে চাকরি করে।
বৃহস্পতিবার সকালে সে কারখানায় চলে যায়। শ্যালিকার সঙ্গে আলাপকালে কোন বিরোধের জের ধরেই শ্যালিকা ও তার দুই মেয়েকে ছুরি দিয়ে জবাই করে হত্যা করেছে। আর আব্বাস তার প্রতিবন্ধী মেয়েকেও জখম করেছে। নিহতের শ্বশুর নিজাম জানায়, আমার ছেলে সুমন নাজনিনের সাথে প্রেম করে বিয়ে করার পর থেকে এই এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছে। আমরা মাঝে মধ্যে এ বাসায় আসা যাওয়া করতাম। কিন্তু কখনো তাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে অমিল দেখিনি। সকাল ১০টার দিকে আমার ছেলে পেট্রোল পাম্প থেকে নাইট ডিউটি করে বাসায় এসে তার স্ত্রী সন্তানদের লাশ পরে থাকতে দেখে আমাদেরকে খবর দেয়। আমরা এ ঘটনার জন্য দৃষ্টান্ত মূলক বিচার দাবী করছি।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল ফারুক জানান, সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের কর্মকর্তারা আলামত সংগ্রহ করেছে। পাশাপাশি জেলা গোয়েন্দা (ডিব) পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন ও র্যাবসহ অন্যান্য সংস্থা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।