আশিকুজ্জামানঃ র্যাব-১১ এর অভিযানে উত্তরা থেকে ভুয়া এমএলএম কোম্পানীর নামে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের ২৪ জন গ্রেফতার, ১০১ জন প্রতারিত ভিকটিম উদ্ধার করে। র্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধ এর উৎস উদঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতারসহ আইন শৃংখলার সামগ্রিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। র্যাব শুরু থেকে যে কোন ধরনের অপরাধ, প্রতারনা মূলক অপরাধ প্রতিরোধ এবং প্রতারক চক্রকে সনাক্ত ও গ্রেফতারের জন্য নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে থাকে। এছাড়াও যেকোন সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সাথে সম্পৃক্তদের প্রায়শই র্যাবের নিয়মিত অভিযানের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
এরই ধারাবাহিকতায়, র্যাব-১১, সিপিএসসি’র একটি আভিযানিক দল গোপন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ২৪ নভেম্বর ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে ২০০০ ঘটিকার সময় ডিএমপি ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানাধীন ১০নং সেক্টর এলাকায় ‘লাইফওয়ে বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড’ নামক ভুয়া এমএলএম কোম্পানীতে অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের ২৪ জনকে গ্রেফতারসহ ১০১ জন প্রতারিত ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়। অভিযানের সময় প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিপুল পরিমান নথিপত্র জব্দ করা হয়।
অতীতে বিভিন্ন এমএলএল কোম্পানী প্রতারণার মাধ্যমে দেশের সাধারণ জনগণের নিকট হতে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছে। এরই প্রেক্ষিতে সরকার পরবর্তীতে বিভিন্ন এমএলএম কোম্পানীর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে। তদুপরি বিভিন্ন এমএলএম কোম্পানী নানা পন্থায় এখনো প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে এবং বেকার যুব সমাজকে চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রতারিত ও ভূক্তভোগী কয়েক জনের কাছ থেকে প্রাপ্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে এবং অনুসন্ধানে প্রাপ্ত অভিযোগের সত্যতার ভিত্তিতে র্যাব-১১, সিপিএসসি এর একটি আভিযানিক দল ডিএমপি ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানাধীন ১০নং সেক্টরের ৭নং রোড হতে “লাইফওয়ে বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড” নামক ভুয়া এমএলএম কোম্পানীতে অভিযান পরিচালনা করে প্রতারকচক্রের ২৪ জন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো ১। মোঃ নজরুল ইসলাম(২৮), ২। মোঃ গোলাম কিবরিয়া(৩৮), ৩। মোঃ সিদ্দিকুর রহমান(৩৭), ৪। বিপুল চৌধুরী(২৮), ৫। সালমান ফারসি(২০), ৬। মোঃ সেলিম রেজা(২৭), ৭। মোঃ খায়রুজ্জামান টিটু(২৫), ৮। মোঃ আলী আকবর(২২), ৯। সুজন মিয়া(২৫), ১০। মোঃ কামরুল আহসান(৪৯), ১১। মোঃ রুহুল আমিন(২১), ১২। মোঃ সুমন মুন্সী(৩১), ১৩। মোঃ ইসমাইল হোসেন(২৩), ১৪। মোঃ রেজাউল করিম(২৫), ১৫। মোঃ ইসমাইল হোসেন(২২), ১৬। মোঃ আরিফুল ইসলাম যাদু(২৬), ১৭। মোঃ আল আমিন(২১), ১৮। মোঃ মোবারক হোসেন(২০), ১৯। মোঃ মাহাবুর রহমান(২৬), ২০। মোঃ মেহেদী হাসান(২২), ২১। মোঃ মাইদুল ইসলাম(২৬), ২২। মোঃ সোহাগ(২৯), ২৩। রাকিব শেখ(২৪), ও ২৪। মোঃ সাদ্দাম হোসেন(২৫)।
গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ও জব্দকৃত নথিপত্র পর্যালোচনা করে জানা যায় যে, উক্ত “লাইফওয়ে বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড” নামক ভুয়া এমএলএম কোম্পানী মাসিক ১৬ হাজার ও তদুর্ধ টাকা বেতনের প্রতিশ্র“তিসহ লোভনীয় অফার দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে চাকুরী প্রত্যাশী বেকার যুবক-যুবতীদের ফাঁদে ফেলে। ভর্তির শুরুতে কোম্পানীর আর্থিক লাভ ও পণ্য বিক্রির কমিশনের আশ¡াসে বাধ্যতামূলক জামানত হিসাবে জন-প্রতি ৫৫ হাজার বা তদুধর্¡ টাকা গ্রহন করে। পরবর্তীতে প্রশিক্ষনের নামে সপ্তাহ খানেক কালক্ষেপন করে প্রত্যেককে নতুন ০২ জন সদস্য সংগ্রহের শর্ত প্রদান করে। নতুন সদস্য সংগ্রহ করে দিলে সংগৃহীত টাকার সামান্য কমিশন প্রদান করে। নতুন সদস্য দিতে না পারলে কুট-কৌশলের আশ্রয় নিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে খালি ষ্ট্যাম্প ও আপোষনামায় জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিয়ে তাড়িয়ে দেয়। প্রতিবাদ করলে ভাড়াটিয়া লোকজন দ্বারা আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতনও করে থাকে।
অভিযানকালে ভুয়া এমএলএম কোম্পানীর প্রশিক্ষণের নামে সেমিনার কক্ষ হতে প্রতারণার শিকার ১০১ জন ভূক্তভোগীদের উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও উক্ত কোম্পানীর অফিস থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ০৮টি মনিটর, বিপুল সংখ্যক নথিপত্র ও নগদ ৩১২০০/- টাকা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।