সময়ের চিন্তাঃরবিবার দুপুরে বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি বলেছেন, এখনো চক্রান্ত চলছে। সরকারকে উত্খাতের পাঁয়তারা চলছে। তাই যে কোনো মূল্যে আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ২৯ নভেম্বর দুপুরে রাজধানীর ফার্মগেটের খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মত্স্যজীবী লীগের জাতীয় সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে দোষারোপ করে বলেছিলেন, সরকার হটানোর ষড়যন্ত্র চলছে। পরে আরো কয়েকটি অনুষ্ঠানে একই কথা বলেছেন তিনি।
গতকাল ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, বিএনপির নেতৃত্ব এখন অস্তিত্বের সংকটে। বিএনপির নেতৃত্ব এখন টেমস নদীর তীর থেকে আসছে, আর মির্জা ফখরুল সেই কথায় পুতুলের মতো নাচছে। খালেদা জিয়া দুই বছর জেলে। দুই বছরে তারা দুই মিনিটেরও আন্দোলন করতে পারেনি। শুধু বিদেশিদের কাছে নালিশ করেছে। নয়াপল্টনে তাদের এক আবাসিক প্রতিনিধি রয়েছেন, যিনি সেখানে বসে প্রেস ব্রিফিং করেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হলে ত্যাগী নেতাদের বাঁচাতে হবে। আর এ জন্য শেখ হাসিনার সরকারকে বারবার ক্ষমতায় দরকার। সুবিধাবাদীরা উইপোকার মতো দলকে খেয়ে ফেলতে পারে, তাই প্রধানমন্ত্রীর শুদ্ধি অভিযান সফল করার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগে চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজদের দরকার নেই। শীতের অতিথি পাখিদের বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে এবং ত্যাগীদের মূল্যায়ন করতে হবে।
সম্মেলনের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু এমপি। প্রধান বক্তা ছিলেন পাবর্ত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক (মন্ত্রী) আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি। বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী স ম রেজাউল করিম, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব) জাহিদ ফারুক শামীম। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপদপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় সদস্য ইকবাল হোসেন অপু এমপি, কেন্দ্রীয় সদস্য আনোয়ার হোসেন ও গোলাম রাব্বানী চিনু। স্বাগত বক্তৃতা করেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। সভাপতিত্ব করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম আব্বাছ চৌধুরী দুলাল। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্যসচিব ছিলেন মহানগর সাধারণ সম্পাদক এ কে এম জাহাঙ্গীর। অনুষ্ঠানের শুরুতে সম্মেলনস্থলে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন অতিথিবৃন্দ। বেলা ১১টায় শুরু হওয়া প্রথম অধিবেশন বেলা ৩টায় শেষ হওয়ার পর বরিশাল ক্লাবে দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয়।
সর্বশেষ ২০১২ সালে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ঐ সম্মেলনে বিসিসির সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরন সভাপতি ও আফজালুল করিম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে শওকত হোসেন হিরনের মৃত্যুর পর নেতৃত্বে সংকট দেখা দেওয়ায় ২০১৬ সালে কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। সেখানে অ্যাডভেকেট গোলাম আব্বাছ চৌধুরী দুলালকে সভাপতি, অ্যাডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীরকে সাধারণ সম্পাদক ও সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে যুগ্ম সম্পাদক করা হয়। ঐ কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে বা ভোটাভুটির মাধ্যমে গঠিত না হওয়ায় সাত বছর পর এই সম্মেলন ঘিরে নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উত্সাহ-উদ্দীপনা লক্ষ করা যায়।
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন যথাক্রমে অ্যাডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীর ও সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। কাউন্সিলরদের কণ্ঠভোটে পাশ হলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে সভাপতি পদপ্রত্যাশী অ্যাডভোকেট গোলাম আব্বাছ চৌধুরী দুলালকে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ঘোষণা করেন। বিকালে বরিশাল ক্লাব মিলনায়তনে এই নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়।