শহরে সড়ক জুড়ে হকারদের রাজত্ব

404

স্টাফ রিপোর্টারঃকালীরবাজার শায়েস্তা খান সড়কের অবস্থা দেখা যায় বেগতিক। তৈরি হয়েছে তীব্র যানজট। সড়কটির মধ্যে অবস্থিত জনতা ব্যাংকের সামনে থেকে পূর্ব দিকে ফ্রেন্ডস মার্কেটের বরাবর তাকিয়ে মনে হলো এটা সাধারণ মানুষের চলাচলের রাস্তা নয়, বরং বিশাল এক জনসভার মঞ্চ।

মানুষ আর মানুষ। এর কারণ সড়কের দু’পাশে হকাররা ছোট ছোট গাড়িতে ও মাটিতে কাপড় পেতে নানান পন্যের পসরা সাঁজিয়ে বসেছেন। যার ফলে, মূল সড়কের জায়গা সংকুচিত হয়ে পথচারীদের যাতায়ত এবং যানচলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা।

এ সময় পুলিশ সদস্যরা যানজটের এই করুণ অবস্থা দেখে পরিস্থিতি সামাল দিতে চাইলেও কোন কাজ হচ্ছে না। বাঁশি ফু-দিলেই হকাররা মালপত্র নিয়ে কিছুক্ষণ উদ্দেশ্যহীন ভাবে ছোটাছুটি করে। অনেককে বলতে দেখা গেছে, ফুঁ দেয়া মানে ম্যানেজ ম্যাসেজ। ম্যাসেজ ক্লিয়ার হলেই আবার বসে যাচ্ছেন নিজ নিজ স্থানে।

অবৈধ ভাবে দোকান বসিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরির সাথে সাথে তাদের বিরুদ্ধে এখন অভিযোগ নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্যে পন্যের মূল্য চাওয়া। আর এ সব বিষয়ে যদি কেউ কোনো প্রতিবাদ করে তাদের সাথে উগ্র ও আশালীন আচরণ করছে। তাই রাগে ক্ষোভে অনেকের মধ্যেই প্রশ্ন যে, মূলত সড়ক কাদের জন্য হকার না নগর বাসীর?

কালীবাজার আমিজ ভবনের পাশে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হকার বলেন, আমরা তো আর মাগনা (টাকা ছাড়া) বাসিনা। কয়েকটা ভাগে প্রতিদিন ১০০ টাকার বেশি খরচ করলে বাদে এদিকে বসা যায়।

আর শীতের কয়েক দিনই আমরা এখানে ভালো ভাবে মাল বিক্রি করতে পারবো কারণ এখন গরম কাপড়ের চাহিদা প্রচুর বেড়েছে। তাই আমাদের এদিক থেকে তাড়িয়ে দিলেও আমরা আবার এখানেই বসবো। কিছু করার নাই।

এদিকে বঙ্গবন্ধু সড়কেও দেখা যায় একই অবস্থা চাষাঢ়া শহীদ মিনার থেকে নারায়ণগঞ্জ ক্লাব পর্যন্ত হকার আর হকার। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এ সড়কে কিছু সংখ্যক হকারের উপস্থিতি দেখা গেলেও বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই হকারদের ভীড়ে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেল রাস্তার দু’পাশ।

এদিকেও ফুটপাতের উপরে শার্ট, প্যান্ট, জুতো, প্রসাধনী সামগ্রী ও বিভিন্ন খাবারসহ হরেক রকম জিনিসের পসরা সাঁজিয়ে বসে পড়েন হাকরারা। আর শীতকাল আসাতে গরমকাপড় বিক্রি করতে নতুন করে ভীড় করছেন অনেক মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। যার ফলে বঙ্গবন্ধু সড়কেও চলাচলে ভোগান্তী পোহাচ্ছে সাধারণ পথচারীরা।

অন্যদিকে শুধু শায়েস্তা খাঁন সড়ক ও বঙ্গবন্ধু সড়কই নয় সরেজমিনে শহরজুড়েই দেখা যায় হকারদের দাপট। ফুটপাত ও মূল সড়কসহ হকাররা দখল করে নিয়েছে আশে পাশের অলি গলিও। একটু জায়গা পেলেই মালপত্র নিয়ে বসে যাচ্ছেন তারা। এতে নগর বাসীর চলাচলে ভোগান্তীর সাথে সাথে তৈরী হচ্ছে যানজট।

শায়েস্তা খাঁন রোডে আল-আমিন নামে এক পথচারী বলেন, রাস্তায় এতো ভীড় যে, ১০ মিনিট যাবৎ এক জায়গাতেই আটকে আছি সামনে যেতে পারছিনা। আসলে আমরা যদি রাস্তা দিয়ে হাঁটাচলা করতেই না পারি তাহলে রাস্তা তৈরি করে লাভ কি? এই মূহুর্তে মনে হচ্ছে আসলে রাস্তা কি আমাদের চলাচলের জন্য না হকারদের জন্য?

নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে আব্দুল করিম নামে একজন বলেন, হকাররা তো মালপত্র নিয়ে রাস্তার অর্ধেক জায়গা দখল করে নিয়েছে। তাই ফুটপাতে চলাচলের সমস্যা তো আগেই ছিলো, আর এখন মূল রাস্তায়ও চলাচল করা যাচ্ছেনা। আমি প্রশাসনের কাছে বলবো যাতে তারা এই বিষয়ে একটু নজর দেয়।

চাষাড়া খাঁজা সুপার মার্কেটের সামনে দাড়িয়ে থাকা এক ভুক্তভোগী ক্রেতা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, হকারদের অধিক মূল্য দাবি ও অশালিনের ঘটনার সময় ১০ গজের মধ্যেই পুলিশের দুটি গাড়ি থাকলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো কিছু সময় পর ওই হকারের সাথে হ্যান্ডশ্যাক করে গাড়ি দুটি নিয়ে চলে যায়।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান ম্যানেজ পক্রিয়ার বিষয়টি সঠিক নয় বলে দাবি করে বলেন, আমরা সব সময় সড়ক থেকে হকারদের উচ্ছেদের জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছি।

তবুও দেখা যাচ্ছে এখন আমরা বঙ্গবন্ধু সড়কে একটু বেশি কাজ করছি যাতে করে হকাররা বসতে না পারে তাই শায়েস্তা খাঁন সড়কে একটু হকারদের ভীড় বেড়ে গেছে। আর এর বিরুদ্ধে আমরা দ্রুতই ব্যবস্থা নেব যেন হকাররা বসতে না পারে।