স্টাফ রিপোর্টারঃনারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার দাপা ইদ্রাকপুর শৈলকুড়া এলাকায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক ভ্রাম্যমান আদালতে ইটভাটা গুলোকে জরিমানা করার পর বন্ধের নির্দেশনা দিলেও অদৃশ্য শক্তির বলে আবারও ৪টি ইটভাটা পুরোদমে কাজ করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শুধু তাই নয়, ইটভাটা মালিকপক্ষের দাবী পরিবেশ অধিদপ্তরকে ম্যানেজ করেই নাকি তারা পুনরায় ইট উৎপাদন শুরু করেছে। আর মালিক পক্ষের এমন কথা শুনে অনেকটাই হতবাক স্থানীয়রা।
এ দিকে ফতুল্লায় আদালতের নির্দেশ অমান্য করে আবারও ইটভাটা চালু রয়েছে এ বিষয়ে স্থানীয় গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর সেখানকার আশপাশের বাসিন্দাদের মাঝে নানা প্রশ্নের জমাট বেধেছে। কেউ কেউ বলছেন মালিক পক্ষের কথাই সত্য যে তারা পরিবেশ অধিদপ্তরকে ম্যানেজ করেই আবারও ভাটা চালু করেছেন।
যদি তাই না হতো তাহলে আদালতের নির্দেশনা অমান্য করার মত সাহস সাধারন মানুষের ভেতরে থাকার কথা নয়। অপরদিকে মালিকপক্ষের দাবী,তারা উচ্চ আদালতে রিট করেই পুনরায় ইট উৎপাদন শুরু করেছেন। মালিকপক্ষের সাথে পরিবেশ অধিদপ্তরের কি এমন সৌহার্দপুর্ন সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে তা নিয়ে চলছে সর্বমহলে কানাঘুষা।
সরেজমিনে গিয়ে শৈলকুড়া এলাকায় দেখা যায়, ৪টি ইটভাটাতে শ্রমিকরা যেমন কাজ করছে পুরোদমে আবার ইটভাটা গুলোতে কাঠ ও গাড়ির পুরোনো টায়ার ব্যবহারের অনুমতি না থাকলেও তারা তা মানতে নারাজতাই ইটভাটাতে কাঠ এবং গাড়ির পুরোনো টায়ার সে গুলোও ব্যবহার করছে তাদের ইচ্ছেমত। গত ৩রা ডিসেম্বর উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে পরিবেশ দূষণের অভিযোগে ফতুল্লায় ৪টি ইটভাটা ভেঙ্গে দিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। ইটভাটার ইট নষ্ট করে দেবার পাশাপাশি ওই ৪টি ভাটাকে ১৫ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে।
ইট ভাটা গুলো হলো, হাজী শাহাবুদ্দিনের ম্যানুফ্যাকচারার্স (এস.বি.এম), বোরহান হাজীর মের্সাস সাউথ আরবান (এসইউএ), হাজী মনির উদ্দিনের মেসার্স সুপার ব্রিকস(এস.বি.এম), ও সামসুজ্জামানের পপুলার ব্রিকস ম্যানুফ্যাকচারার্স (পি.বি.এম)।
ফতুল্লার দাপা শৈলকুড়া এলাকায় পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একটি টিম ওই ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন। ওই টিমে ছিলেন-নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সাঈদ আনোয়ার, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আসমা সুলতানা নাসরিন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আসমা সুলতানা নাসরিন ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে এস. ইউ. এ ব্রিকসকে ৫ লক্ষ টাকা এস. বি. এম ব্রিকসকে ৩ লক্ষ টাকা,পি.বি.এম ব্রিকসকে ৩ লক্ষ টাকা,এস.বি.এম ব্রিকসকে ৪লক্ষ টাকা । ছাড়পত্র না থাকায়, পরিবেশ দূষণ করার পাশাপাশি উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করায় মোট ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। সেই সাথে ইটাভাটাগুলোর ইট নষ্ট করে ভাটাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ও মেজিষ্ট্রেট কর্তৃক অভিযানের শেষে ঐদিন রাত থেকেই ভেঙ্গে দেয়া চুল্লিগুলো পুনরায় সংস্কার করে মাত্র ৭দিনের মধ্যেই আবার ইট উৎপাদনে যায় মুনাফালোভী মালিকপক্ষ।
বোরহান হাজীর মের্সাস সাউথ আরবান (এসইউএ)’র ম্যানেজার জোড় গলায় বলেন,আমাদের ক্ষমতা আছে বলেই আমরা আবারো ইটভাটা চালু করেছি। আপনারা লিখে কিছু করতে পারবেননা। কারন আমাদের টাকা পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্তাবাবুরা নিয়ে আয়েশী জীবন যাপন করেন। এমনকি পরিবেশ অধিদপ্তরকেও কিছু দিয়েছি নতুবা আমরা কি নতুন করে ইট উৎপাদনে যেতে পারবো নাকি।
মেসার্স সুপার ব্রিকস(এস.বি.এম)’র মালিক হাজী মনির উদ্দিনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করে জানতে চাইলে তিনি জাগো নারায়ণগঞ্জ’কে বলেন,ভাই এমনিতেই আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। লেইখ্যা আমাদের আর ক্ষতি কইরেন না। আপনি প্রয়োজনে আমার ইটভাটায় কালকে আসেন বসে চা খাই।
এস.ইউ.এ ব্রিক ফিল্ডের মালিক হাজী বোরহানউদ্দিনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,বাবা আমি অসুস্থ মানুষ সেখানে যাই না। আপনি বরং আমার ছেলের সাথে কথা বলেন সব জানতে পারবেন।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যালয়ে গিয়ে উপ-পরিচালক সাঈদ আনোয়ার এর সাথে কথা বলতে গেলে তিনি অফিসে উপস্থিত ছিলেন না। পরবর্তীতে মুঠোফোনে তার যোগাযোগ করা হলে তিনি তা রিসিভ করেনি।