আশিকুজ্জামানঃ র্যাব-১১ এর অভিযানে আর্ন্তজাতিক নারী পাচারকারী চক্রের ৮ সদস্য গ্রেফতার।বিপুল পরিমান পাসপোর্ট ও বিমান টিকেটসহ ০২ জন তরুণী উদ্ধার।র্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধ এর উৎস উদ্ঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতারসহ আইন শৃংখলার সামগ্রিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। র্যাব শুরু থেকে যে কোন ধরনের অপহরণ ও জিম্মি প্রতিরোধ এবং অপহরণ চক্রকে সনাক্ত, অপহৃত ভিকটিম উদ্ধারসহ অপহরণকারী ও মানব পাচারকারীদের গ্রেফতারে সার্বক্ষণিকভাবে অভিযান পরিচালনা করে থাকে।
গোপন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব ১১ এর অভিযানে গত ২৩ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে নারায়ণগঞ্জের তারাবো এলাকা হতে ০৪ জন ভিকটিম তরুণী উদ্ধারসহ আর্ন্তজাতিক নারী পাচারকারী চক্রের ০৬ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় গ্রেফতারকৃত আসামীদের দখল হতে ৭০ টি পাসপোর্ট, নগদ ১,৫৮,০০০/- টাকা, ২০০ টি পাসপোর্টের ফটোকপি, ৫০ টি বিমান টিকেট, ৫০ টি ট্যুরিস্ট ভিসার ফটোকপি, ০১টি সিপিইউ, ০১টি মনিটর ও ০১টি অত্যাধুনিক বিলাসবহুল মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়। গ্রেফতাকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে ও প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায় গ্রেফতারকৃত আসামীরা একটি সংঘবদ্ধ আর্ন্তজাতিক নারী পাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য এবং তারা ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সী সুন্দরী তরুনীদের বিদেশে উচ্চ বেতনে চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে ডান্সবারে ডান্স ও অসামাজিক কার্যকলাপের উদ্দেশ্যে পাচার করে। উক্ত সিন্ডিকেটের সদস্যরা পাচারকৃত নারীদের হোটেলে নিয়ে গৃহবন্দি করে রাখত। বিদেশে অবস্থানকালীন সময়ে এই সকল তরুণীদেরকে কোন অবস্থাতেই নিজের ইচ্ছায় হোটেল তথা ডান্স বারের বাইরে যেতে দেওয়া হত না। প্রাথমিক অবস্থায় তরুণীরা এসকল আসামাজিক কর্মকান্ডে লিপ্ত হতে রাজি না হলে বিভিন্ন নেশাজাতীয় দ্রব্য জোরপূর্বক প্রয়োগ করা হত।
এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব ১১ এর এক বিশেষ অভিযানে গত ২৬ জানুয়ারি ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকার কামরাঙ্গীরচর, কেরানীগঞ্জ ও মুগদা এলাকা হতে আর্ন্তজাতিক নারী পাচারকারী চক্রের সদস্য ১। মোঃ শাহাবুদ্দিন (ধানসিড়ি ট্রাভেল এজেন্সির মালিক), বয়স-৩৭, থানা-চন্দ্রগঞ্জ, জেলা-লক্ষীপুর, ২। মোঃ হৃদয় আহম্মেদ @ কুদ্দুস (তরুণী সংগ্রহকারী এজেন্ট), বয়স-৩৫, থানা-শ্যামবাগ, জেলা-নোয়াখালী, ৩। মোঃ মামুন (তরুণী সংগ্রহকারী এজেন্ট), বয়স-২৪, থানা-হাজীগঞ্জ, জেলা-চাঁদপুর, ৪। মোঃ স্বপন হোসেন (তরুণী সংগ্রহকারী এজেন্ট), বয়স-২০, থানা-কালকিনি, জেলা-মাদারীপুর, ৫। মোঃ শিপন (তরুণী সংগ্রহকারী এজেন্ট), বয়স-২২, থানা-মীরসরাই, জেলা-চট্টগ্রাম, ৬। রিজভী হোসেন @ অপু (তরুণী সংগ্রহকারী এজেন্ট), বয়স-২৭, থানা-লৌহজং, জেলা-মুন্সীগঞ্জ, ৭। মোঃ মুসা @ জীবন (তরুণী সংগ্রহকারী এজেন্ট), বয়স-২৮, থানা-বাউফল, জেলা-পটুয়াখালী ও ৮। শিল্পী আক্তার (তরুণী সংগ্রহকারী এজেন্ট), বয়স-২৭, থানা-মতলব, জেলা-চাঁদপুর’দেরকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীদের দখল হতে ৩৯ টি পাসপোর্ট, ৬৬ টি পাসপোর্টের ফটোকপি, ১৮ টি বিমান টিকেটের ফটোকপি, ৩৬ টি ভিসার ফটোকপি, ০১ টি সিপিইউ, ১৯ টি মোবাইল জব্দ করা হয়। এসময় তাদের হেফাজত হতে ০২ জন ভিকটিম তরুণী’কে উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত আসামী শাহাবুদ্দিন ধানসিড়ি ট্রাভেল এজেন্সির মালিক। শাহাবুদ্দিন তার নিয়োগকৃত বিভিন্ন এজেন্টের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে ১৫ হতে ২৫ বছর বয়সী সুন্দরী নারীদের সংগ্রহ করত। এরপর এই সকল নারীদের বিদেশে উচ্চ বেতনে চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে মধ্যপাচ্যে অবস্থিত বিভিন্ন ড্যা›সবারে পাচার করত। ধানসিড়ি এজেন্সির মালিক শাহাবুদ্দিনের সাথে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের ডান্স মালিকদের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। গ্রেফতারকৃত অন্যান্য আসামীরা শাহাবুদ্দিন এর নারী সংগ্রহকারী এজেন্ট হিসেবে কাজ করত। জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় এই চক্রের মাধ্যমে বিগত ০২ বছরে সহস্রাধিক তরুণী মধ্যপ্রাচ্যে পাচার হয়েছে।
গত ২৩ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে র্যাব-১১ এর অভিযানে উক্ত নারী পাচারকারী চক্রের ০৬ সদস্য গ্রেফতার হওয়ার ফলে পাচারকারী চক্রের অন্যান্য সদস্যরা সর্তক হয়ে যায় এবং আইন শৃংখলা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিতে তারা পাচারের কৌশল ও রূট পরিবর্তন করে। বর্তমানে তারা সরাসরি মধ্যপ্রাচ্যে না পাঠিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের এয়ারপোর্ট ব্যবহার করে নারী পাচার অব্যাহত রেখেছে। পূর্বে তারা শুধুমাত্র ঢাকার শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দর ব্যবহার করত কিন্তু বর্তমানে দেশের অন্যান্য আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দর ব্যবহার করছে। এই মানব পাচারকারী চক্রের উপর দীর্ঘদিন যাবৎ র্যাব-১১ বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারী চালিয়ে গত ২৬ জানুয়ারি ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে অভিযান চালিয়ে উক্ত মানব পাচারকারী চক্রের ৮ জন’কে গ্রেফতার করে। এই সমস্ত মানব পাচারকারী চক্রের মূলোৎপাটন করার লক্ষ্যে র্যাবের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন