ঝুঁকি নিয়ে ডকইয়ার্ডগুলোতে কাজ করছে শ্রমিকরা

371

স্টাফ রিপোর্টারঃ কোন রকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই ঝুঁকি নিয়ে নারায়ণগঞ্জের বন্দরের শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে গড়ে উঠা ডকইয়ার্ডগুলোতে কাজ করছে শ্রমিকরা। গত (২৩ জানুয়ারি) রাতে একটি ডকইয়ার্ডে নবনির্মিত জাহাজ পানিতে নামানোর সময় জাহাজের  নিচে চাপা পড়ে দুই শ্রমিক নিহত হয়, আহত হয় আরও চার শ্রমিক। এরকম হরহামেশাই ঘটছে ডকইয়ার্ডে দুর্ঘটনা।কিন্তু এরপরও শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য মালিক এবং সরকারিভাবে কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ জানিয়েছে শ্রমিকরা।

নারায়ণগঞ্জ বিআইডব্লিউটিএ’র দেয়া তথ্যমতে বন্দর, রূপগঞ্জ, সোনারগাঁ, আড়াইহাজার এবং ফতুল্লায় বৈধ অবৈধ মিলিয়ে ডকইয়ার্ডের সংখ্যা এখন ৭০ টিরও বেশি। প্রায় সব ডকইয়ার্ডে কর্মরত লক্ষাধিক শ্রমিকের মধ্যে প্রায় সবাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শীতলক্ষ্যা নদীর তীর ঘেঁষে, মদনগঞ্জ, থেকে দক্ষিণ দিকে নবীগঞ্জ পর্যন্ত এবং এর আশেপাশের এলাকাতেই রয়েছে ২০ থেকে ২৫ টি ডকইয়ার্ড। নিয়ম অনুযায়ী এখানে কাজ করতে আসা প্রত্যেক শ্রমিককেই নিরাপত্তার জন্য হ্যান্ড গ্লোব, হেলমেট এবং বুট জুতা দেয়ার কথা থাকলেও তা দিচ্ছে না ডকইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ।

বন্দরের উইলসন রোডে অবস্থিত খন্দকার ডকইয়ার্ডে দীর্ঘদিন যাবৎ কাজ করে আতিকুল। কর্তৃপক্ষের দিকে অভিযোগ করে তিনি বলে, আমারা সারাদিন ঝালাইয়ের কাজ করি। এই কাজ করতে গিয়ে আগুনের ছোট ছোট ফুলকি গায়ের মধ্যেই পড়ে। এতে গায়ের বিভিন্ন জায়গা পুড়ে যায়। হাতে ঠোঁসা পড়ে কিন্তু মালিকরা আমাদের হাতের খাপ (হ্যান্ড গ্লোব), বুট জুতো (পায়ের দেওয়ার জন্য তৈরি বিশেষ জুতো) মাথার হেলমেট এগুলো কিছুই দেয়না।

ডকইয়ার্ডের আরেকজন শ্রমিক আমির মোহাম্মদ বলে, ‘প্রায় সময়তেই দেখা যায় কারেন্টের তারে পা লাগলে অল্পতেই আমরা আহত হই। এ সময় এতে আমাদের মৃত্যুরও আশঙ্কা থাকে কিন্তু আমাদের মালিকরা আমাদের পায়ের জুতা, মাথার টুপি (হেলমেট) দেয়না। সরকার থেকে লোক আইসা যদি আমদের এই বিষয়গুলো দেখতো তাহলে মালিকরা ঠিকই এসব প্রয়োজনীয় জিনিস আমাদের দিতো। তখন আর আমাদের কোন সমস্যা হতোনা।’

এ বিষয়ে ডকইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ কোন কথা বলতে না চাইলেও নারায়ণগঞ্জ কল-কারখানা অধিদপ্তরের লেবার ইন্সপেক্টর মেহেদি হাসান বলে, ‘আমি ডকইয়ার্ড নিয়ে বহুদিন ধরেই কাজ করছি। বেশ কয়েকটি ডকইয়ার্ডের বিরুদ্ধে আমি আমাদের অফিস থেকে (কল-কারখানা অধিদপ্তর) নোটিশ পাঠিয়েছি। ওই ডকইয়ার্ডগুলোতে শ্রমিকদের কোন নিরাপত্তা সামগ্রী নেই। তাই আশা করি নোটিশটি পড়লে সেখান থেকেই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

নারায়ণগঞ্জ কল-কারখানা অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক সৌমেন বড়ুয়া বলেন, ‘আসলে এই বিষয়গুলো দেখার জন্য প্রতিটি এলাকাতের আমদের লোক আছে। যেসব ডকইয়ার্ডে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নেই সেখানে আমাদের লোকজন পরিদর্শন করে নোটিশ করলে আমরা সেইসব ডকইয়ার্ডগুলোর বিরুদ্ধে মামলা করবো।’