নিজস্ব প্রতিনিধিঃ র্যাব-১১ এর অভিযানে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ হতে অপহরণের ৮ দিন পর ভিকটিম উদ্ধার। অপহরণকারী চক্রের ২ সদস্য গ্রেফতার করেছে। র্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধ এর উৎস উদঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতারসহ আইনশৃঙ্খলার সামগ্রিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য র্যাব ফোর্সেস নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে থাকে। র্যাব-১১ এর দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় প্রতারণা, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, চাঁদাবাজি, ডাকাতি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড দমনের লক্ষ্যে র্যাব অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার ও আইনের আওতায় আনার জন্য র্যাব ফোর্সেস নিয়মিত অপরাধ ও সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে আসছে।
এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-১১ এর একটি আভিযানিক দল গত ১৯ জুন ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে বিকাল ১৭৩০ ঘটিকায় নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন হাউজিং এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ভিকটিম মোঃ রাসেল(২৮)কে উদ্ধারসহ সংঘবদ্ধ অপহরণকারী চক্রের ০২ জন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো ১। মোঃ আল আমিন (২৪) ও ২। ইরা ইসলাম (২২) ।
গত ১৮জুন ২০২০ তারিখে ভিকটিমের মা র্যাব-১১ নারায়ণগঞ্জ বরাবর একটি অভিযোগ করেন যে, গত ১১ জুন ২০২০ তারিখে ভিকটিম মোঃ রাসেল(২৮) চিটাগাং রোডে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। পরবর্তীতে ভিকটিম রাসেল বাড়িতে না ফেরায় তার মা অনেক খোঁজাখুজি করেন। পরবর্তীতে ১২ জুন ২০২০তারিখে অজ্ঞাত এক ব্যাক্তি ফোন করে বলে যে আপনার ছেলে আমাদের কাছে আটক আছে। তারা ভিকটিম রাসেলকে জিম্মি করতঃ হত্যার হুমকি দিয়ে পরিবারের কাছ থেকে মোটা অংকের মুক্তিপণ দাবি করে। উক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে র্যাব-১১ কর্তৃক গোয়েন্দা নজরদারী ও গোপন অনুসন্ধানের মাধ্যমে অভিযোগের সত্যতা পায়।
গ্রেফতারকৃতদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও অনুসন্ধানে জানা যায়, আসামীরা পরষ্পর স্বামী-স্ত্রী। তাদের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার সন্দীপ থানাধীন সাতঘরিয়া এলাকায়। আসামীরা আরো স্বীকার করে যে, তারা একটি পেশাদার অপহরণকারী চক্রের সদস্য, দীর্ঘদিন ধরে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় এই ধরণের অপহরণ কার্যক্রম করে আসছে। অপহরণ করার ক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন ধরণের কৌশল অবলম্বন করে থাকে, তার মধ্যে প্রেমের ফাঁদে ফেলে অপহরণ অন্যতম। তারা ভিকটিম মোঃ রাসেলকে অপহরণের বিষয়ে স্বীকারোক্তি প্রদানসহ অন্যান্য আরও অপরাধের লোমহর্ষক বর্ননা দেয়।
ভিকটিম রাসেল অপহরণ বিষয়ে তারা জানায় যে, ধৃত আসামীরা গত ১১ জুন ২০২০ তারিখে নারায়ণগঞ্জে চিটাগাং রোড থেকে রাসেলকে অপহরণের উদ্দেশ্যে তুলে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাকে চেতনা নাশক ঔষধ প্রয়োগ করতঃ অবচেতন করে তাদের ভাড়া করা একটি ফ্লাট বাসায় নিয়ে যায়। অতঃপর উক্ত বাসায় একটি গোপন কক্ষের ভিতর হাত-পা ও চোখ বেঁধে রাসেলকে মারধর করাসহ বিভিন্ন শারীরিক নির্যাতন করতে থাকে এবং মুক্তিপণের ২ লক্ষ টাকার জন্য রাসেলের পরিবারের কাছে ফোন করে এবং এই বিষয়ে কাউকে কিছু না বলার জন্য রাসেলের পরিবারকে রাসেল হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। উলেখ্য যে, অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা ভিকটিম রাসেলের মুখের ভিতর কাপড় ঢুকিয়ে দেয় এবং গামছা দিয়ে চোখ, মুখ, হাত-পা বেধে লাঠি ও কাঠের তৈরি ব্রাশ দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে এবং হত্যার উদ্দেশ্যে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় সুই দিয়ে খোঁচায়। রাসেলের পরিবার কোনো উপায় না পেয়ে রাসেল জীবন বাঁচাতে ১৫ জুন ২০২০ তারিখে রাতে বিকাশের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা তাদের কাছে পাঠায় এবং বাকী টাকা নগদে পরিশোধ করবে বলে জানায়। পরবর্তীতে ভিকটিম রাসেলের মা র্যাব-১১ বরাবর একটি অভিযোগ দাখিল করে। যার প্রেক্ষিতে র্যাব-১১ এর একটি বিশেষ গোয়েন্দা দল কর্তৃক গোয়েন্দা নজরধারীর মাধ্যমে ঘটনার সত্যতা পেয়ে গত ১৯ জুন ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে বিকাল ১৭৩০ ঘটিকায় নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ হাউজিং হতে সংঘবদ্ধ অপহরণকারী চক্রের ০২ সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে।