কমলগঞ্জ প্রতিনিধি: সম্প্রতি সময়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই রোগাক্রান্ত পশু জবাই ও বিক্রি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপকহারে গবাদি পশুর লাম্পিং স্কিন ডিজিজ দেখা দিয়েছে। এরমধ্যে একাধিক গরু মারা যাওয়ারও খবর পাওয়া গেছে। এই সময়েও কোন ধরণের পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই পৌরসভাসহ হাটবাজারে রোগাক্রান্ত পশু জবাই ও মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে করোনার সময়কালেও জনস্বাস্থ্য মারাত্নক হুমকির মুখে বলে অভিযোগ উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি কমলগঞ্জ উপজেলাসহ আশপাশ এলাকায় গবাদি পশুর লাম্পিং স্কিন ডিজিজ মারাত্নক আকার ধারণ করেছে। রোগে আক্রান্ত হয়ে কমলগঞ্জেও চারটি গরু মারা গেছে। গায়ে গোটা, গলা ফুলাসহ নানাভাবে এরোগ বিস্তার লাভ করছে। এই সময়ে আক্রান্ত পশু কেউ কেউ স্বল্প মূল্যেও বিক্রি করছেন। বর্তমানে একদিকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমাণ, অন্যদিকে গবাদি পশুর চর্মরোগ জাতীয় মহামারি দেখা দিয়েছে। এসময়কালে রোগাক্রান্ত পশু জবাই করে মাংস বিক্রির বিষয়টি তদারকি করা প্রয়োজন বলে স্থানীয় সচেতন মহল দাবি তুলেছেন। অথচ নিয়ম অনুযায়ী পশু জবাই করার আগে প্রাণী সম্পদ বিভাগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ছাড়পত্র নিয়ে জবাই করার কথা। তবে এবিষয়ে কারো কোন তৎপরতা নেই। ফলে সাধারণ ক্রেতারা মাংস কিনে নিলেও মারাত্নক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হচ্ছে।
উপজেলার ভানুগাছ, শমশেরনগর, মুন্সীবাজার, আদমপুর ও পতনউষার বাজারে নিয়মিত গরু, মহিষ ও ছাগল জবাই করে বিক্রি করা হয়। তবে কোন ধরণের ডাক্তারি পরীক্ষা ও ছাড়পত্র ছাড়াই হাটবাজারে কসাইরা অবাধে বিক্রি করছেন জবাইকৃত পশুর মাংস। পশু জবাইখানায় পশু জবাই করার কথা থাকলেও পৌরসভাসহ হাটবাজারের সুনির্দিষ্ট জবাইখানা না থাকায় যত্রতত্র পশু জবাই করা হচ্ছে। বাজারে অসুস্থ্য, নিম্মানের পশু জবাই করেও বিক্রি করা হচ্ছে।
সহিদুল মিয়া বলেন, প্রতিদিন ভোরে কসাইরা গরু জবাই করে থাকেন। যেখানে সেখানে পশু জবাই করে বাজারে নিয়ে মাংস বিক্রি করেন। ভোরে শহরের আড়ালে পশু জবাই করলেও রোগব্যাধী আছে কি না তা দেখার কেউ নেই।
সুমন আহমদ, রোমেল মিয়া, কায়েস আহমেদসহ মাংস ক্রেতারা বলেন, বাজারে নিম্মানের ও অসুস্থ্য পশু জবাই করে বিক্রি করা হচ্ছে। পশু জবাইয়ের নিয়মনীতি কেউ মানতে রাজি নন। অথচ এসব গাবদিপশুর নানা জটিল রোগে আক্রান্তও থাকতে পারে। এই সময়ে পরীক্ষা ছাড়া পশু জবাই মোটেও ঠিক নয়। তারা আরও বলেন, আমরা মরা গরু না রোগাক্রান্ত গরু-মহিষের কিনছি তা বোঝার কোন উপায় নেই। তবে কসাইরা বলছেন আমরা উন্মক্ত স্থানে পশু জবাই ও বিক্রি করে থাকি। অসুস্থ্য ও রোগাক্রান্ত কোন পশু জবাই করে বিক্রি করা হয় না।
এব্যাপারে কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জুয়েল আহমেদ বলেন, নিয়মনীতি মেনে পশু জবাই করার জন্য কসাইদের বলেছি। তাছাড়া বিষয়টি প্রাণী সম্পদ ও স্বাস্থ্য পরিদর্শকের দেখভাল করার কথা।
কমলগঞ্জ উপজেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টর মো. দুলাল আহমদ বলেন, পশু জবাইয়ের ক্ষেত্রে স্যানিটেশন ও হাইজেনিং হচ্ছে কি না সে বিষয়টি দেখে থাকি। তবে কোন অভিযোগ পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কমলগঞ্জ উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকতার্ ডা. মো. হেদায়েতউল্লাহ বলেন, প্রকৃত অর্থে এখানে কোন স্বীকৃত কসাইখানা নেই। এগুলো পৌরসভা, হেলথ স্যানিটারী ইন্সপেক্টরেরও দেখার কথা। তাছাড়া পশু জবাই কোন নির্দিষ্ট স্থানে হচ্ছে জানলে বা আমাদের জানালে সেখানে লোক রাখতাম।
মৌলভীবাজার জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সহকারী পরিচালক আলা-আমীন বলেন এখন বেশিরভাগ গবাদি পশু রোগে আক্রান্ত কেউ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া যদি গবাদি পশু জবাই করে এবং তথ্য-প্রমাণসহ আমাদের কাছে দিলে আমরা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করব।