সোনারগাঁ প্রতিনিধিঃ সোনারগাঁ নির্বাহী কর্মকর্তাকে চাঁদা না দেয়ায় মিথ্যা তথ্যের অভিযোগে বহিষ্কার করায়, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের পিরোজপুর ইউপি মেম্বার কবির হোসেন সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ করেন। আজ সোমবার (২৯ জুন) দুর্নীতি দমন কমিশনে সুষ্ঠ তদন্ত ও ক্ষমতার অপব্যবহারের জন্য আইনানুগ বিচার দাবি করে তিনি এ অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত (১২ এপ্রিল) রবিবার স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ ইফতেখার আহম্মেদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। করোনা কালীন সংকটে সরকারী ত্রাণ আত্মসাৎ ও গুজব ছড়িয়ে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার যে অভিযোগে তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছিল তা শতভাগ মিথ্যা ও বানোয়াট। বাংলাদেশ সচিবালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের একান্ত সচিব হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনারগাঁ হিসেবে ন্যাস্ত হওয়ায় অনৈতিক প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ করে মাকে সাময়িক বহিষ্কার করান।
অভিযোগে মো. কবির হোসেন আরো উল্লেখ করেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুল ইসলামের অনৈতিক চাহিদার ভিত্তিতে ত্রাণ বিতরণের অজুহাতে তাকে নগদ দুই লক্ষ টাকা চাঁদা হিসেবে প্রদান না করায় বা অন্যকোন অসৎ উদ্দেশ্যে বা ব্যক্তিগত আক্রোশে বা অন্য কাহারো ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা প্ররোচনায় ক্ষুব্ধ হয়ে রাগ-অনুরাগ ও আবেগের বশবর্তী হয়ে আমার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমার জান-মাল, সম্মান ও সুনাম ক্ষুন্ন করার হীনস্বার্থে উল্লেখিত ১০০% মিথ্যা, কাল্পনিক অভিযোগে আমাকে সোনারগাঁ উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের ০৮ নং ওয়ার্ডের নির্বাচিত সদস্য পদ হতে বরখাস্তের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছেন।
একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমার অজান্তে, আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে, স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক কোনরূপ কারণ দর্শানোর নোটিশ ইস্যু ছাড়াই ১০০% মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও প্রামাণ্য বিহীন অভিযোগ আনয়ন করে আমাকে অন্যায় ও অনৈতিকভাবে বরখাস্তের ব্যবস্থা গ্রহণ করায় আমি সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও পারিবারিকভাবে চরম অপমানিত ও হেয় প্রতিপন্ন হই। আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগে সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ত্রাণ আত্মসাতের পরিমাণ সম্পর্কিত তথ্য, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আত্মসাৎকৃত ত্রাণ উদ্ধার সম্পর্কিত তথ্য, গুজব ছড়ানোর মাধ্যমে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার বিষয়ে কোনরূপ প্রামাণ্য আলামত এবং নির্দিষ্ট কোনো উপকারভোগী কর্তৃক কোনরূপ অভিযোগ ছাড়াই আমার বিরুদ্ধে শাস্তির প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করতঃ মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রেরিত হঠাৎ সাময়িক বরখাস্তের আদেশ ও কারণ দর্শানো নোটিশ পেয়ে আমি হতবিহ্বল ও মানসিকভাবে চরম বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি। বিষয়টি যে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক তার প্রমাণ- নোটিশ পাওয়ার পূর্বেই তা স্থানীয় বিভিন্ন ইলেকট্রিক মিডিয়া, ফেসবুক, পত্রিকায় প্রচার ও প্রকাশিত হওয়া। এর ফলে বর্তমানে আমার স্বাভাবিক জীবনযাপনে চরমভাবে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছি। অভিযোগে মো. কবির হোসেন আরও উল্লেখ করেন, করোনা মোকাবেলায় পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদ (চেয়ারম্যান) কর্তৃক আমার অনুকূলে বরাদ্দকৃত ৫৪ (চুয়ান্ন) প্যাকেট ত্রাণ গ্রহণ করি এবং মানবিক সহায়তা হিসেবে আমি এলাকার দরিদ্র, কর্মক্ষম পরিবারের মাঝে অগ্রাধিকার তালিকার ভিত্তিতে প্রাপ্ত ৫৪ (চুয়ান্ন) প্যাকেটই সুষ্ঠুভাবে বিতরণ করি, যার আনুমানিক মূল্য ২৬ হাজার ৯০০ টাকা। আমার বিরুদ্ধে ত্রাণ আত্মসাৎ করার যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক এজন্য যে, আমার তথা আমার এখতিয়ারভূক্ত কোন স্থান হতে ০১ কেজি ত্রাণও উদ্ধার হয়নি। বরং সরকারী বরাদ্দ প্রাপ্ত ৫৪ (চুয়ান্ন) প্যাকেট ত্রান বিতরণের পরও আমার নিজস্ব অর্থায়নে ৪৯৫ জন অসহায় মানুষকে আমি ত্রাণ দিয়েছি। যার মূল্য ১ লক্ষ ৩৬ হাজার ২২৫ টাকা। এছাড়া গুজব ছড়ানোর মাধ্যমে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অভিযোগটিও সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও কল্পনাপ্রসূত। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা অন্য কোন উপায়ে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার মতো একটি শব্দও আমি উচ্চারণ করি নাই এবং গুজব ছড়ানোর মতো সামান্যতম কর্মকান্ডেও আমি জড়িত নই। বরং আমি এলাকাবাসী সবাইকে মাইকিং করে সরকারী নিয়মনীতি মেনে চলার জন্য বিভিন্নভাবে সামাজিক সচেতনতামূলক কর্মসূচী (সামাজিক ও শারীরিক দুরত্ব বজায় রাখা, গণজমায়েত না করা, নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করা, জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাহিরে বের না হওয়া, ওয়াক্ত নামাজের ক্ষেত্রে ০৫ (পাঁচ) জন এবং জুমুআ নামাজের ক্ষেত্রে ১০ (দশ) জন মুসল্লী নিয়ে নামাজ পড়া এবং স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা ইত্যাদি) গ্রহণ করেছি যা এলাকাবাসী সকলেই অবগত এবং প্রশংসিত।
উল্লেখ্য যে, মিথ্যা অপবাদ দেয়ায় সামাজিক মান সম্মান হারিয়ে মানসিক চাপে সাময়িক বহিষ্কৃত ইউপি সদস্য কবির হোসেন পর পর ৩ বার আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন।