সম্বল থালা বাটি কম্বল

393

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বহুল আলোচিত নাম সাহেদ, আরিফ, ডা. সাবরিনা ও পাপিয়া। প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়ে বিলাসী জীবন ছিল তাঁদের। ব্যবহার করত দামি গাড়ি, থাকত রাজকীয় ফ্ল্যাটে। এয়ারকন্ডিশনার ছাড়া জীবন ভাবতেই পারত না তাঁরা। সেই তাঁরা বর্তমানে তীব্র গরমের মধ্যে সাধারণ বন্দির জীবন কাটাচ্ছে কারাগারে। সেখানে তাঁদের সম্বল বলতে আছে কারাগার কর্তৃপক্ষের দেওয়া থালা, বাটি ও কম্বল।

প্রতারণা করে বিপুল বিত্ত গড়ে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ। করোনা পরীক্ষা নিয়ে প্রতারণা ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে জেলে যেতে হয় তাঁকে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে এখন তাঁর সম্বল একটি বালিশ, তিনটি কম্বল, থালা আর বাটি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিরাপত্তার কারণে সাহেদকে রাখা হয়েছে একটি সেলে। কোনো দিন সকালে মিলছে খিচুড়ি, কোনো দিন গুড় দিয়ে রুটি। সাহেদ যে সেলে থাকে, সেখানে একটি সিলিং ফ্যান রয়েছে। প্রচণ্ড গরমে সেই ফ্যানে খুব একটা কাজ হয় না। ফলে সারাক্ষণ হাঁসফাঁস করতে থাকে সাহেদ। রাতের বেলায় সেলে একা থাকতে ভয় পায়। এ কারণে তাঁর সেলের সামনে একজন কারারক্ষী দায়িত্ব পালন করে। কারাগারে অনেকটা চুপচাপ থাকছে সাহেদ।

একইভাবে করোনা পরীক্ষা নিয়ে প্রতারণার দায়ে জেকেজির আরিফ এবং তাঁর স্ত্রী ডা. সাবরিনাও কারাগারে। আরিফকেও রাখা হয়েছে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। তবে তাঁকে রাখা হয়েছে অন্য বন্দির সঙ্গে সাধারণ সেলে। জানা গেছে, কারাগারে সাহেদের বিপরীত চিত্র আরিফের মধ্যে। তিনি চিৎকার-চেঁচামেচি করে অতিষ্ঠ করে তুলছে অন্য বন্দিসহ কারারক্ষীদের। গরম সহ্য করতে না পেরে গালাগাল পর্যন্ত করছে। নিজের বাড়ির মতো করে থাকতে চায় কারাগারে। সম্ভব না হওয়ায় পাগলামো করছে। কারাগারের নিয়ম-কানুন অমান্য করতে চায়,দাপট দেখানোর চেষ্টা করে, কারাগারের খাবার নিয়ে করে চিৎকার-চেঁচামেচি। ফলে তাঁর সঙ্গে অন্য বন্দিরা থাকতে অনীহা প্রকাশ করছে বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহাবুবুল ইসলাম বলেন,‘তাঁদের সাধারণ বন্দির মতোই রাখা হচ্ছে। বাড়তি কোনো সুবিধা দেওয়া হয়নি আর উপায়ও নেই।’

ডা. সাবরিনাকে রাখা হয়েছে কাশিমপুরে মহিলা কারাগারে। গত ১২ জুলাই করোনাভাইরাস পরীক্ষার ভুয়া প্রতিবেদন দেওয়ার মামলায় জোবেদা খাতুন সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার (জেকেজি হেলথকেয়ার) চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সাবরিনা জাতীয় হৃদেরাগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের একজন নিবন্ধিত চিকিৎসক। টাকার বিনিময়ে নমুনা সংগ্রহ ও ভুয়া প্রতিবেদন দেওয়ার অভিযোগে তেজগাঁও বিভাগের পুলিশ ডা. সাবরিনা, তাঁর স্বামী আরিফুল হক চৌধুরীসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিরাপত্তার কারণে কারাগারে সাবরিনাকে আলাদা সেলে রাখা হয়েছে। সেখানে তিনি চুপচাপই থাকে। আয়েশি জীবনে অভ্যস্ত ড. সাবরিনাকেও কারাগারে ফ্লোরেই থাকতে হয়। স্বামীর মতোই একটি বালিশ, তিনটি কম্বল, থালা ও বাটি এখন তাঁর সম্বল। কারাগারের নিয়ম মতোই পায় তিন বেলা খাবার।

প্রতারণা, অবৈধ অর্থ পাচার, জাল টাকা সরবরাহ, মাদক কারবার এবং অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি নরসিংদী যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়াকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। সেই থেকে কারাগারেই কাটছে তাঁর জীবন। তাঁকেও রাখা হয়েছে কাশিমপুর মহিলা কারাগারে। পাপিয়া ছিল উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপনে অভ্যস্ত। তবে কারাগারে অনেক শান্ত থাকছে পাপিয়া। যেই আচরণ সে বাইরে থাকতে করত, সেই আচরণ সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে বলে কারা সূত্রে জানা গেছে। আলোচিত দুই নারী ডা. সাবরিনা ও পাপিয়া একই জেলে থাকলেও আলাদা সেলে থাকায় তাঁদের মধ্যে দেখা হয় না বলে জানা গেছে।

কাশিমপুর মহিলা কারাগারের জেলার আনোয়ার হোসেন বলেন, কারাবন্দিদের যে নিয়মে রাখা হয়, সেভাবেই সাবরিনা ও পাপিয়াকে রাখা হয়েছে।  সূএ কালের কন্ঠ