সোনারগাঁ প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিলুপ্ত প্রায় লোকজ ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার ও হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মকে পরিচয় করে দিতে পহেলা মার্চ সোমবার থেকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন চত্বরে শুরু হচ্ছে মাসব্যাপী লোক কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব।
করোনা পরিস্থিতির কারনে মালে ১৪ জানুয়ারীর পরিবর্তে পহেলা মার্চ শুরু হচ্ছে। ইতিমধ্যে ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ মেলার সকল প্রস্তুতি শেষ করেছেন। পহেলা মার্চ সোমবার বিকেলে সোনারতরী মঞ্চে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি।
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক ড. আহমেদ উল্লাহর সভাপতিত্বে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. বদরুল আরেফিন। বিশেষ অতিথি থাকবেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম পিপিএম, সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন, সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সার, সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আতিকুল ইসলাম, সোনারগাঁ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ রফিকুল ইসলামসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে কারুশিল্পী মেলায় প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছেন। এর মধ্যে নওগাঁ ও মা-রার শোলা শিল্প, রাজশাহীর শখের হাড়ি, রংপুরের শত রঞ্জি, সোনারগাঁয়ের হাতি ঘোড়া পুতুল ও কাঠের কারু শিল্প, নক্শিকাঁথা, বেত ও বাঁশের কারুশিল্প, নক্শি হাতপাখা, চট্টগ্রামের তালপাখা ও নক্শি পাখা, সিলেট ও মুন্সিগঞ্জের শীতল পাটি, কুমিল্লার তামা-কাঁসা পিতলের কারুশিল্প, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলার ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠীর কারু পণ্য, কিশোরগঞ্জের টেরা কোটা শিল্প, সোনারগাঁয়ের পাটের কারু শিল্প, নাটোরের শোলার মুখোস শিল্প, মুন্সিগঞ্জের পট চিত্র, ঢাকার কাগজের হস্ত শিল্পসহ মোট ৭৫টি স্টল থাকছে। এছাড়া লোক কারু শিল্প মেলা ও লোকজউৎসবে ভাওয়াইয়া ও ভাটিয়ালী গান, বাউলগান, পালাগান, কবিগান, জারি-সারি ও হাছন রাজার গান, লালন সংগীত, মাইজভান্ডারী গান, মুর্শিদী গান, আলকাপ গান, গাঁয়ে হলুদের গান, বান্দরবান, বিরিশিরি, কমলগঞ্জের-মণিপুরী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শরিয়তী-মারফতি গান, ছড়া পাঠের আসর, পুঁথি পাঠ, গ্রামীণ খেলা, লাঠি খেলা, দোক খেলা, ঘুড়ি উড়ানো, লোকজ জীবন প্রদর্শনী, লোকজ গল্প বলা, পিঠা প্রদর্শনী থাকবে।
বাংলাদেশ লোক ও কারু শিল্প ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক রবিউল ইসলাম জানান, করোনা পরিস্থিতির কারনে মেলা সঠিক সময়ে হয়নি। এ মেলা দেড় মাস পিছিয়ে ১ লা মার্চ থেকে শুরু হচ্ছে। ইতিমধ্যে মেলার প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্পের ঐতিহ্য, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিলুপ্তপ্রায় লোকজ ঐতিহ্যকে পুনরুদ্ধার, সংগ্রহ, সংরক্ষণ, গবেষণা, প্রদর্শন এবং পুনরুজ্জীবন এ মেলার মূল উদ্দেশ্য। তিনি আরো জানান, অন্যান্য বছরের মতো এবছরও মেলা নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
মেলা উপলক্ষে ফাউন্ডেশনের পুরো এলাকায় বর্নাঢ্যভাবে সাজানো হয়েছে। মেলা চত্বর প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। পহেলা মার্চ সোমবার থেকে শুরু হওয়া মেলা চলবে পুরো মার্চ মাস।