সোনালী ব্যাংকের শত কোটি টাকা আত্মসাত, জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তা

308

ক্রাইম রিপোর্টারঃ শত কোটি টাকার বেশি ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষের দায়েরকৃত দুটি মামলার পলাতক আসামি মনিরুল ইসলাম। কখনও ব্যবসায়ীকে মারধর করে চাঁদা আদায় করছেন। আবার কখনও শিক্ষককে ফোন করে চাঁদা দাবি করছেন। এ সব ঘটনায় থানায় তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এতে ফাঁস হয়ে যায় শত কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতি করা মনিরুল আসলে বিদেশে পলাতক নন, দেশেই অবস্থান করছেন। এ নিয়ে খোদ বিস্ময় প্রকাশ করেছেন নারায়ণগঞ্জ সোনালী ব্যাংক শাখার কর্মকর্তারা। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানতেন মনিরুল বহু আগেই মালয়েশিয়া পালিয়ে গেছেন।

সোনালী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়ায় অবস্থিত সোনালী ব্যাংক নারায়ণগঞ্জ কর্পোরেট শাখা থেকেই ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে শত কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে মনিরুল ইসলাম নামের ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে। সে জামতলা এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলামের ছেলে।

ব্যাংক কর্তৃক নারায়ণগঞ্জ অর্থ ঋণ আদালতে করা মামলা সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বিসিক শিল্পনগরীতে অবস্থিত বন্ধঘোষিত মেসার্স মুন নিটওয়্যারের কাছে সোনালী ব্যাংক নারায়ণগঞ্জ কর্পোরেট শাখার ২০১৪ সালের ১৪ মে পর্যন্ত পাওনা ছিল ৬৭ কোটি ৬৩ লাখ ৭৫ হাজার ১৫৪ টাকা। মেসার্স মুন নিটওয়্যারের মালিক হলেন মনিরুল ইসলাম ও তার আরও ৩ সহোদর।

এ ঘটনায় যুগ্ম জেলা জজ অর্থঋণ আদালতে মামলা দায়ের হয়। মেসার্স মুন নিটওয়্যারের নামে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার কাশিপুর মৌজায় বন্ধকীকৃত জমির পরিমাণ ছিল মাত্র ১০ শতাংশ। কাশিপুর মৌজায় জমির দাম শতাংশপ্রতি সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা হতে পারে। অর্থাৎ জমি বিক্রি করেও ঋণ পরিশোধ সম্ভব নয়।

অপরদিকে ফতুল্লার ধর্মগঞ্জের ডালডা কলোনি এলাকার মেসার্স এইচ এস ফ্যাশনের মালিক ছিলেন শুধুমাত্র মনিরুল ইসলাম। মেসার্স এইচ এস ফ্যাশনের কাছে সোনালী ব্যাংক নারায়ণগঞ্জ কর্পোরেট শাখার ২০১৪ সালের ১৪ মে পর্যন্ত পাওনা ছিল ৩৩ কোটি ৭৭ লাখ ৯১ হাজার ৩৬২ টাকা। ওই ঘটনায় যুগ্ম জেলা জজ অর্থঋণ আদালতে মামলা দায়ের করা হয়।

মেসার্স এইচ এস ফ্যাশনের নামে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ধর্মগঞ্জ মৌজায় বন্ধকীকৃত জমির পরিমাণ ছিল মাত্র ২২ শতাংশ। ধর্মগঞ্জ মৌজায় জমির দাম শতাংশ প্রতি সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা হতে পারে। অর্থাৎ জমি বিক্রি করে এই ঋণও পরিশোধ সম্ভব নয়। মামলা ২টিতে মনিরুল ইসলামকে বিবাদী করে ১০১ কোটি ৪১ লাখ ৬৬ হাজার টাকার ঋণখেলাপী দেখানো হয়েছে। সেই সঙ্গে ব্যাংক আদালতের কাছে ১২ শতাংশ হারে ওই টাকার সুদসহ ফেরতের আর্জি করেছে। সুদ সমেত মনিরুলের কাছে ব্যাংকের পাওনা দাঁড়িয়েছে বর্তমানে প্রায় ২০০ কোটির ঘরে।

এদিকে সম্প্রতি ওই ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিজেকে ব্যবসায়ী দাবি করছেন। শুধু তাই নয় ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করেছেন মনির। গত ২৪ ডিসেম্বর মাদারীপুরের শিবচরের এক মাদ্রাসার শিক্ষককে চাঁদার দাবিতে ফোন করার অভিযোগ উঠে মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। পরে সেই চাঁদা না দেয়ায় সেই শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছিল।

মনিরুল ইসলামের নিকটাত্মীয় মোঃ শফিউদ্দিন বলেন, মনিরুল ইসলামের বাবা ইসলাম গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব পাওয়ার পর কয়েক বছর পর ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির কারণে মনিরুল ইসলাম সকল শিল্প কারখানা বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যায়।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের ডিজি এম মোহাম্মদ ইয়াসীন জানান, মনিরুলের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়েছে। আমাদের করা মামলায় সে পলাতক রয়েছে। আমার শুনেছিলাম সে মালয়োশিয়া পালিয়ে গেছে। কিন্তু মনিরুল বিভিন্ন ঘটনায় সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ চষে বেড়াচ্ছেন এ খবর শুনে অনেকটা বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমরা দ্রুত এ বিষয়ে আইনের আশ্রয় নেব।

এ ব্যাপারে ফতুল্লা মডেল থানার ওসি মোঃ আসলাম হোসেন জানান, আমরা মনিরুলের বিরুদ্ধে একটি মামলাসহ আরও কয়েকটি অভিযাগে পেয়েছে। সেগুলি খতিয়ে দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নিচ্ছি। তবে ব্যাংক লোনের বিষয়ে আমাদের কাছে তথ্য নেই। এ বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।