৯ মে থেকে শুরু হচ্ছে আম রপ্তানি

489

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ গুটি দেখে ধারণা করা হয়েছিলো ফলন ভালো হবে। কিন্তু প্রচন্ড তাপদাহের সঙ্গে সময় মতো বৃষ্টি না হওয়া ছাড়াও অফ ইয়ারের কারণে এবার আমের উৎপাদন কিছুটা কম হবে। পহেলা মে সাতক্ষিরায় স্থানীয়, গোবিন্দভোগ ও গোলাপ খাশ জাতের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে এই মৌসুমের আম পাকা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাতক্ষিরার উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. নূরুল ইসলাম বলেন, সাতক্ষিরা থেকে ৩ মে ইউরোপে আম রপ্তানির কথা থাকলেও তা হয়নি।

আগামী ৯ মে জার্মানিতে ১ টন আম পাঠানোর মধ্য দিয়ে শুরু হবে ইউরোপে এবারের রপ্তানি। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি মৌসুমে সাতক্ষিরা থেকে ইউরোপের জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালী ও যুক্তরাজ্যে ৫০০ মেট্রিক টন আম রপ্তানি হবে। এসব দেশে সাতক্ষিরা অঞ্চলের গোবিন্দভোগ, ল্যাংড়া, হিমসাগর ও আম্রপালি আম পাঠানো হবে। ইসলাম গ্রুপ ও আর আর এন্টারপ্রাইজসহ দেশের ১৪টি বায়ারের সহযোগিতায় এই আম রপ্তানি হচ্ছে। এবছর সাতক্ষিরা জেলায় ৪ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে ৪০ হাজার টন আম উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের (২য় সংশোধিত) প্রকল্প পরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. মেহেদী মাসুদ বলেন, মাস খানেক আগে থেকে বারমাসি বারি আম ১১ পাকা শুরু হয়েছে। ১ মে থেকে সাতক্ষিরায় গোবিন্দভোগ আম পাকতে শুরু করেছে। এর আগে থেকে ঢাকায় যে আম দেখা গেছে তা জোর করে পাকানো। এখন ঢাকার সর্বত্র অলিতে গলিতে সাতক্ষিরার গোবিন্দভোগ ছাড়া যেসব আম দেখা যাচ্ছে তা সবই অপরিপক্ক। আগামী ২৫ মে’র আগে পাকা হিমসাগর ও মোহনভোগ ছাড়া অন্যান্য জাতের সত্যিকারের পাকা আমের দেখা মিলবে না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসেবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে ২৪ লাখ ৬৮ হাজার ৫০ টন আম হয়েছিলো। ঝড় ছাড়া একটু বৃষ্টি হলে অনিশ্চয়তা কেটে যেতো, আরও ভালো হতো। করোনার তীব্রতায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে আম বিপননে গত মৌসুমের মতো ব্যবস্থা না নিলে বিপাকে পড়বে চাষিরা। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ফল বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শরফ উদ্দিন বলেন, ভালো ফলনের জন্য এখন বাগানে সেচ ও সঠিক গ্রুপের কীটনাশক দেওয়া দরকার। এই সঙ্গে পোস্ট অফিসের মাধ্যমেসহ আম পরিবহনে গতবছরের করোনা পরিস্থিতির মতো ব্যবস্থা নিতে হবে।

তিনি জানান, আম এ দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফল। ছোট-বড় সবার পছন্দনীয় এই ফলটির উৎপাদন ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। পুষ্টি উপাদান ও বহুবিধ ব্যবহারের কারণে অন্য কোন ফলের সঙ্গে আমের তুলনা হয় না। পাকা আম উচ্চমানসম্পন্ন ক্যারোটিন বা ভিটামিন এ এবং খনিজ উপাদান সমৃদ্ধ। আম সাধারণত বাংলাদেশের সব এলাকায় আবাদ হয়, তবে উঁচু মান, স্বাদ ও অধিক উৎকৃষ্ট আম চাষের উপযোগী মাটি ও কৃষি জলবায়ুর জন্য দেশের উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে সর্বাধিক আম আবাদ হয়।

বর্তমানে কিছু কিছু পাহাড়ি এলাকায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উচ্চফলনশীল মানসম্পন্ন আমের চাষাবাদ হচ্ছে। আম ওই এলাকার মানুষের আয়ের অন্যতম উৎসে পরিণত হয়েছে। বিবিএস, ২০১৭ অনুযায়ী দেশে ৩৭৮৪৬ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়, যার উৎপাদন প্রায় ১১.৬১ লাখ মেট্রিক টন। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী আম চাষাবাদের এলাকা ও উৎপাদন উভয়ই বেশি। তাদের মতে, ১ লাখ ৭৪ হাজার ২০৮ হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ হয় এবং এর উৎপাদন ২১ লাখ ৪৩ হাজার ৪০৩ মেট্রিক টন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাতে ৩১ হাজার হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়, যার উৎপাদন প্রায় ৩ লাখ মেট্রিক টন। রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ হতে আমের বাণিজ্যিক চাষাবাদ সম্প্রসারিত হয়েছে ২৩টি জেলায়। অন্য ফসলের তুলনায় লাভজনক হওয়ায় নতুন নতুন জেলায় আম বাগান বাড়ছে। নাটোর জেলা প্রশাসনের বরাতে পুরস্কারপ্রাপ্ত ফল ও আম চাষি সেলিম রেজা বলেন, এজেলায় আগামী ১০ মে গাছ থেকে নিরাপদ আম সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। রাসায়নিক পদার্থের অপব্যবহার রোধে পরিপক্ক ফল প্রাপ্তি নিশ্চিতে মৌসুমজুড়ে গাছ থেকে বিভিন্ন জাতের আম সংগ্রহের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশীয় সুস্বাদু ফল আম এক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে ফল চাষিদের ফল সংগ্রহ এবং এর বিপণন ও পরিবহন কার্যক্রমে কোন প্রতিবন্ধকতা দেখা দিলে জেলা প্রশাসন তা নিরসন করবে। ফলের আড়ত এবং বাগানগুলোতে প্রশাসনিক মনিটরিং ব্যবস্থা চলমান থাকবে।

দীর্ঘসময় সংরক্ষণ, কষের মাধ্যমে পচন রোধ ও পরবর্তীতে গাছে কুশি বের হওয়ার সুবিধার জন্য বোটাসহ আম পাড়তে কৃষকদের জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে ক্ষতিকর স্প্রে থেকে বিরত থাকা এবং ব্যাগিং পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে গাছে ছত্রাকনাশক ব্যবহারের পর ফল সংগ্রহের নির্ধারিত সময় পর্যন্ত অপেক্ষা এবং ক্ষতিকর কার্বাইড ও ফরমালিন ব্যবহার করা যাবেনা।
প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুসারে, জেলায় ১০ মে শুরু হয়ে আম সংগ্রহ কার্যক্রম আগামী ১৫ আগস্ট পর্যন্ত চলবে। এ দিন থেকে স্থানীয় গুটি জাতের আম সংগ্রহ শুরু হবে। পরবর্তীতে ২০ মে থেকে গোপালভোগ আম, ২৫ মে থেকে লক্ষণভোগ ও রাণী পছন্দ, ২৮ মে থেকে ক্ষীরসাপাত, ৫ জুন থেকে ল্যাংড়া, ১৫ জুন থেকে মোহনভোগ, ২০ জুন থেকে আম্রপালি, হাড়িভাঙ্গা ও ফজলী, ৩০ জুন থেকে মল্লিকা , ১০ জুলাই থেকে বারি-৪, ১৫ জুলাই থেকে আশ্বিনা জাতের আম এবং সর্বশেষ ১৫ আগস্ট থেকে গৌড়মতি আম সংগ্রহের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ সময়সূচির বাইরে আগে এজেলায় কোন জাতের আম গাছে পরিপক্ক হলে উপজেলা কৃষিবিভাগ ও প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে কৃষক বা ব্যবসায়ী গাছ থেকে আম সংগ্রহ করতে পারবেন। নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের হিসেবে চলতি বছরে জেলায় পাঁচ হাজার ৮৫৭ হেক্টর জমি থেকে ৭৯ হাজার ৬৭১ টন আম উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।