৫১ দেশ বলছে স্পুটনিক টিকা ভাল

242

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রুশ টিকা স্পুটনিক ভি কতটা কার্যকরী, বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় মেডিক্যাল জার্নাল দ্য ল্যানসেটের এমন প্রশ্নের জবাবে রাশিয়ার ভ্যাকসিন নির্মাতা সংস্থা গ্যামেলিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ভাইরোলজিস্টরা বলেছেন, বিশ্বের ৫১টি দেশে স্পুটনিক ভি টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পর সব দেশই বলছে রুশ টিকা ভাল, কোনও গলদ নেই।

গত বছর করোনা মহামারী ছড়িয়ে পড়ার পর সর্বপ্রথম রাশিয়াই দাবি করে ভ্যাকসিনটি তৈরির। স্পুটনিক ভি টিকার খবর প্রকাশ্যে আসার পরেই সমালোচনা শুরু হয়ে যায়। এত কমদিনে, কম সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবকের ওপর পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করে কীভাবে টিকার কার্যকারিতা প্রমাণ করছে রাশিয়া, সে নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেক দেশের বিজ্ঞানীরাই। এমনকি রাশিয়ার কয়েকজন নামী ভাইরোলজিস্টও দাবি করেন, তিন পর্যায়ের ট্রায়াল হয়নি স্পুটনিক টিকার। বরং প্রথম দুই পর্বের পরেই টিকা নিয়ে আসার দাবি করা হয়েছে। বিতর্ক আরও বাড়ে। গ্যামেলিয়া ও রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তরফে দাবি করা হয়, তিন পর্যায়ের ক্লিনিকাল ট্রায়াল সম্পূর্ণ করা হয়েছে। টিকা মানুষের শরীরে কার্যকরী হচ্ছে বলে দাবিও করা হয়। গ্যামেলিয়ার এই দাবি নিয়ে ফের বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। স্পুটনিক ভি টিকা আদৌ সুরক্ষিত কিনা সে নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিজ্ঞানীরা। তার জন্য বেছে নেওয়া হয় ল্যানসেট মেডিক্যাল জার্নালকে। গত ১২ মে ল্যানসেটের একটি প্রতিবেদনে আমেরিকার টেম্পল ইউনিভার্সিটির গবেষক এনরিকো এম বুসি বলেন, স্পুটনিক টিকার শুধুমাত্র প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বেরই ট্রায়াল হয়েছে। দুই পর্বের ট্রায়ালের বিস্তারিত তথ্য সামনে আনেনি গ্যামেলিয়া। তাছাড়া দুই পর্বের ট্রায়াল করে টিকার এফিকেসি প্রমাণ করা যায় না।

মার্কিন গবেষকের বক্তব্য ধরেই আমস্টারডাম ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী গৌরী গোপালকৃষ্ণণ দাবি করেন, রাশিয়া তার স্পুটনিক ভি টিকা নিয়ে যে তথ্য দিয়েছে তা অসম্পূর্ণ। ক্লিনিকাল ট্রায়ালের সেফটি ডেটা চাওয়া হয়েছিল, তাও সবটা প্রকাশ করেনি রুশ সংস্থা। টিকার কার্যকারিতা কেমন সে নিয়েও সংশয় রয়ে গেছে। ক্লিনিকাল ট্রায়ালে যে স্বেচ্ছাসেবকদের টিকার ডোজ দেওয়া হয়, পরে তাদের আরটি-পিসিআর টেস্ট করিয়ে দেখে নেওয়া হয় যে তারা সংক্রমিত হয়েছেন কিনা। সে তথ্যও জমা করতে হয়। কিন্তু রুশ সংস্থা তা করেনি। তাহলে কীভাবে টিকার স্বচ্ছ ট্রায়াল হয়েছে বলা যাবে, প্রশ্ন তুলেছেন গোপালকৃষ্ণণ। রুশ সংস্থা গ্যামেলিয়া দাবি করেছে, ৫১টি দেশ তাদের টিকাকে ছাড়পত্র দিয়েছে। টিকা নিয়ে কোনও খারাপ অভিযোগও আসেনি। গ্যামেলিয়া আরও জানায়, তৃতীয় পর্বের ট্রায়াল শুরুর ২১ দিন পরে প্রথম রিপোর্ট সামনে আনা হয়েছিল। সেটা ছিল টিকার প্রথম ডোজের ক্লিনিকাল রিপোর্ট। দেখা গিয়েছিল স্পুটনিক ভি টিকার একটা ডোজে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে শরীরে। টিকা ৯১.৪ শতাংশ কার্যকরী হয়েছে।

২১ দিনের পরে টিকার দ্বিতীয় ডোজ দিয়ে পর্যবেক্ষণে রাখা হয় স্বেচ্ছাসেবকদের। আরও ২১ দিন পরে অর্থাৎ প্রথম ডোজ দেওয়ার পর থেকে মোট ৪২ দিন পরে দেখা যায় টিকা আরও বেশি ভাল কাজ করছে। ইমিউন পাওয়ার আরও বেড়েছে। রক্তে অ্যান্টিবডির পরিমাণও বেশি। সব মিলিয়ে দেখা গেছে টিকা ৯৫ শতাংশেরও বেশি কার্যকরী হয়েছে। গ্যামেলিয়ার দাবি তাদের টিকার এফিকেসি ৯১ শতাংশের কাছাকাছি যা বিশ্বের অন্যান্য টিকায় নেই।