নিজস্ব প্রতিনিধিঃ চারা লাগিয়ে বছরের পর বছর অপেক্ষা করেও কাঙ্খিত ফলের দেখা মেলেনি। চটকদার প্রচারণার ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হয়েছে দেশের লাখ লাখ কৃষি উদ্যোক্তা। যে যেমন করে পারছেন, দেশ-বিদেশ থেকে এনে বাহারি নামের রকমারি ফলের চারা বিক্রি করছে। এতে নার্সারি মালিকদের অঢেল টাকার ব্যবসা হলেও বাণিজ্যিক ফলবাগানসহ দেশের কৃষি ক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে অশনি সংকেত।
জাতীয়-আন্তর্জাতিক ৭৫টি পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষক সেলিম রেজা বলেন, ফেসবুক ও ইউটিউবে এক শ্রেণির নার্সারি মালিকের দেওয়া মুখরোচক বিজ্ঞাপন দেখে ফল চাষের জন্য কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে প্রতারিত হয়েছেন প্রবাসীসহ লাখ লাখ উদ্যোক্তা। এই সঙ্গে চাষের বাইরে চলে গেছে দেশের মূল্যবান হাজার হাজার হেক্টর জমি।
মুখরোচক বিজ্ঞাপনে মুগ্ধ হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রবাসীদের অনেকেই না বুঝে বিদেশি ফলের বাগান গড়ে তুলতে মোটা টাকা বিনিয়োগ করছেন। কিন্তু ফল না পেয়ে তারা হতাশ হচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে কোন গবেষণা ও সরকারের অনুমোদনের দরকার হচ্ছে না। শুধু নরিকেল গাছ না আরও অনেক বিদেশি ফল-ফুল নিয়ে অবিরত কৃষককে ঠকানো হচ্ছে।
বিগত বছরগুলোতে খাটোজাতের নারিকেল, সৌদি জাতের খেজুর, কাঠিমন আম, ত্বিন ফল, পার্সিমন ফলের, আপেল ও আঙ্গুরের চারাসহ দেশে যেসব চারা লাগানো হয়েছে তাতে বলতে গেলে কোনো ফল পাওয়া যায়নি। বিখ্যাত আপেল এর জাত ‘হরিমন-৯৯’ এর বিরাট বাগান। গাছগুলো সরাসরি ভারত এর হরিমন শর্মার কাছ থেকে নিয়ে আনা হয়েছিলো। এখন গাছগুলো অনেক মোটা ও বড়। তবে বাগানে একটি আপেলও নেই। ফলসহ বিভিন্ন ফসলের চারা বা কাটিং আনা, নার্সারি গড়ে তোলা ও বিক্রির ক্ষেত্রে দেশে কোনো নীতিমালা নেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোয়ারেন্টাইন আইন ও বিধিবিধানকে উপেক্ষা করেই আনা হয় এসব চারা ও কাটিং। এর কোনো মাতৃগাছও দেখা যায় না। বিভিন্ন বেসরকারি নার্সারিছাড়াও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার সেন্টারগুলো থেকে সংগ্রহ করা চারাতেও ফল পাওয়া যায়নি।
ফল পাওয়া না গেলেও দেশের বেসরকারি নার্সারিগুলোতে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি চারা বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। এসব নার্সারিতে প্রতিটি সৌদি খেজুর চারা ১২০০০ টাকা থেকে ৫০০০০ টাকা, ত্বিন ফলের চারা ২৫০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা, পার্সিমন ৩০০০ টাকা থেকে ১৫০০০ হাজার টাকা এবং আপেল ও আঙ্গুরের চারা ২৫০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. নাজিরুল ইসলাম জানান, সময় যত পার হবে হতাশাও তত বাড়বে। কারণ এই খাটো জাতের নারিকেল গাছের জীবনকাল ১০ বছর, বেঁচে থাকলেও ফল হবে না। বিজ্ঞানভিত্তিক ধারণা ছাড়াই এসব গাছের চারা আনা হয়। দেশিয় পরিবেশে কেমন হবে, ফল দেবে কেমনÑ তার কোনো গবেষণাও হয়নি, অথচ সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এসব গাছের চারা। অবিবেচনায় ফলের বাগান করতে যেয়ে অনেক জমি চাষের আওতার বাইরে চলে গেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন পোস্টে জানা যায়, জনৈক উদ্যোক্তা নাটোর হর্টিকালচার থেকে ২০১৮ সালে ভিয়েতনাম জাতের ১টি চারা ৫০০ টাকা দিয়ে এনে লাগিয়েছিলেন, তিন বছরেও কোনো ফলের দেখা মেলেনি। অন্য এক উদ্যোক্তা ৫ বছর আগে লাগিয়ে আজও ফল পাননি।
এছাড়া জনৈক উদ্যোক্তা জানায়, বাংলাদেশের মাটি আবহাওয়া পানি ও পরিবেশের জন্য একমাত্র উপযোগী হলো নোয়াখালীর নারিকেল গাছ। ঢাকার ধানমন্ডি এলাকার একটি বাসায় দুইটি নারিকেল গাছ ছিলো, নোয়াখালীর এই জাতে একটু দেরিতে আসলেও ফল হত অনেক এবং সুমিষ্ট। সাইজও খুব ভাল ছিল। তিনি অনুরোধ করে জানান, এরপর যারা নারিকেল গাছ লাগানোর ইচ্ছা করবেন তারা দেশের উপযোগী গাছ লাগাবেন।