ভোজ্য তেলের দাম ফের বাড়ার শঙ্কা

438

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ সরকারের নানা উদ্যোগেও ভোজ্য তেলের দাম নাগালের মধ্যে রাখা যাচ্ছে না। গত এক বছরেই দাম বেড়েছে তিনবার। এর পরও আশঙ্কা কাটছে না, অস্থির হয়ে উঠেছে বাজার। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধি এবং চীনের স্থানীয় বাজার স্থিতিশীল রাখতে দেশটি বিপুল মজুদ করায় এমন সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানাচ্ছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিশ্ববাজারে দাম কমছে; শিগগিরই এর প্রভাব পড়বে বাজারে। এ ছাড়া টিসিবিকে আবারও মাঠে নামানো হচ্ছে।

এদিকে বাজার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আমদানিতে প্রতিযোগিতা বাড়াতে আরো প্রতিষ্ঠানকে সুযোগ দেওয়া না হলে বাজার স্থিতিশীল রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। এ ছাড়া এ বাজার নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ট্যারিফ কমিশন ও জেলা প্রশাসনের নজরদারি আরো বাড়াতে হবে।

রাজধানীর শান্তিনগর বাজারে মতলব স্টোরের বিক্রয়কর্মী রফিক মিয়া জানান, বর্তমানে সয়াবিনের পাঁচ লিটার বোতল বিক্রি হচ্ছে ৬৭০ থেকে ৬৭৫ টাকা, আগের সপ্তাহে ছিল ৬৬৫ টাকা। খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়। গত সপ্তাহে দাম ছিল ১১৮ থেকে ১২২ টাকা। খোলা প্রতি লিটার পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকায়, সাত দিন আগে ছিল ১০৮ টাকা। জানতে চাইলে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহসভাপতি নাজের হোসাইন বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লেই সঙ্গে সঙ্গে বাজারে প্রভাব পড়ার কথা নয়। দু-এক মাস সময় লাগে। অন্যদিকে দাম কমলে সঙ্গে সঙ্গে কমে না। তাই বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়াতে আরো ব্যবসায়ীকে ভোজ্য তেল আমদানির সুযোগ দেওয়া উচিত।

নাজের হোসাইন আরো বলেন, ‘গত এক বছরে তিনবার ভোজ্য তেলের বাজারে দাম বাড়লেও এখনো স্থিতিশীল হয়নি। ফলে ব্যবসায়ীরা সরকারকে তোয়াক্কা না করে বাজারে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এ ছাড়া চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে চীন স্থানীয় বাজার স্থিতিশীল রাখতে বিপুল পরিমাণ ভোজ্য তেল মজুদ করেছে। এর প্রভাব পড়েছে বিশ্ববাজারে; একই সঙ্গে আমাদের স্থানীয় বাজারে।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য অনুবিভাগের দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেল নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করছে। এতে দেখা যায়, গত এক বছরে ভোজ্য তেলের দাম তিনবার বেড়েছে। প্রায় ৯৫ শতাংশ ভোজ্য তেল আমদানিনির্ভর। তাই আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে স্থানীয় বাজারেও এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে যে পরিমাণে মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, স্থানীয় বাজারে সেই পরিমাণে মূল্য বাড়েনি। মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে কভিডের আগে (এক বছর) আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের মূল্য যেখানে কেজিপ্রতি ছিল ৫২.১১ টাকা; বর্তমানে তার মূল্য ১৩৫.৮৪ টাকা। অর্থাৎ এই সময়ে সয়াবিন তেলের আন্তর্জাতিক মূল্য বেড়েছে প্রায় ১৬০ শতাংশ। একই সময়ে স্থানীয় বাজারদর পর্যালোচনায় দেখা যায়, এক বছর আগের খোলা সয়াবিন তেলের বাজারদর ছিল ৮৮ থেকে ৯৩ টাকা। বর্তমানে ১২০ থেকে ১২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ এই সময়ে স্থানীয় ও দেশীয় বাজারে মূল্য বৃদ্ধির পরিমাণ প্রায় ৩৫ শতাংশ।

জানতে চাইলে বাণিজ্যসচিব ড. জাফর উদ্দিন বলেন, ভোজ্য তেল ছাড়া বাজারে অন্য ভোগ্য পণ্যের দাম বাজারে স্থিতিশীল রেখেছে। তবে ভোজ্য তেল প্রায় ৯৫ শতাংশ আমদানিনির্ভর হওয়ায় বাজার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। এর পরও আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় দাম তেমন একটা বাড়তে দেওয়া হয়নি। এখনো প্রায় ১২৫ শতাংশ কম। তবে বাজার স্থিতিশীল রাখতে জুনের প্রথম সপ্তাহে আবারও টিসিবিকে মাঠে নামানো হবে। এতে ভোজ্য তেলকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

তিনি আরো জানান, বিশ্ববাজারে কিছু দাম কমতে শুরু করেছে; জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে এর সুফল পাবে ভোক্তারা।