নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকার সংশোধিত বাজেট পাস হয়েছে। মূল বাজেটে ৬২টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের অনুকূলে মোট বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে ২৯ হাজার ১৭ কোটি টাকা কাটছাঁট করা হয়েছে।
সোমবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে ‘নির্দিষ্টকরণ (সম্পূরক) বিল ২০২১’ উত্থাপন করেন। এতে ১৯টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের জন্য ১৩ হাজার ৯৮৭ কোটি ২৭ লাখ ৩২ হাজার টাকার সম্পূরক বাজেট বা অতিরিক্ত বরাদ্দ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে ৪৩টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের বরাদ্দ বা ব্যয় কমেছে ৪২ হাজার ৪৮১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। সংসদে আলোচনার পরে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। প্রসঙ্গত সরকারের যেসব মন্ত্রণালয় বা বিভাগ তাদের মূল বরাদ্দের থেকে বেশি ব্যয় করেছে সেগুলোর অনুমোদন প্রদানে সম্পূরক বাজেট পাস করা হয়।
সংসদে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা ১৯টি মঞ্জুরি দাবি সংসদে পেশ করেন। এসব মঞ্জুরি দাবির বিপরীতে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও গণফোরামের ১১ জন সংসদ সদস্য ১৯০টি ছাঁটাই প্রস্তাব দেন। ছাঁটাই প্রস্তাবগুলোর মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। পরে সেগুলো কণ্ঠভোটে বাতিল হয়ে যায়। সম্পূরক বাজেটে স্থানীয় সরকার বিভাগ সর্বোচ্চ ২ হাজার ৮৯০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ পেয়েছে। চলমান ১২৬টি ও ৩১টি নতুন প্রকল্পের বিপরীতে এ অতিরিক্ত বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে সবচেয়ে কম অতিরিক্ত বরাদ্দ পেয়েছে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ। এ বিভাগের ১২টি চলমান প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
সংশোধিত বাজেটে মূল বাজেটের আকারের পাশাপাশি রাজস্ব আয় ও জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে। মূল বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছিল ৮ দশমিক ২ শতাংশ। এটি কমিয়ে ৬ দশমিক ১ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে।
বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর আওতাধীন রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৫১ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা এবং এনবিআর-এর আওতাধীন রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ২৬ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা এবং এনবিআর-এর লক্ষ্যমাত্রা থেকে ২৯ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে।
এ বিষয়ে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে কোভিড-১৯-এর প্রভাব থেকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হবে ধরে নিয়ে এগুলোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু মহামারির প্রভাব দীর্ঘতর হওয়া, করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ ও পুনরায় লক-ডাউন ঘোষণার কারণে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে শ্লথ অবস্থা বিরাজমান রয়েছে এবং আমদানি-রপ্তানি কাঙ্খিত গতি ফিরে পায়নি। এসব কারণে রাজস্ব আয় ও ব্যয়ে প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হবে না মর্মে প্রতীয়মান হচ্ছে।’
চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে (জুলাই ২০২০-ফেব্রুয়ারি ২০২১) সরকারি ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে বার্ষিক বরাদ্দের ৩৩ দশমিক ৫ শতাংশ। সরকারের ব্যয় কম হওয়ার কারণে বাজেট ঘাটতি কমেছে এবং ব্যাংক থেকে ঋণও লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম নেয়া হয়েছে। মূল বাজেটে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এটি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা (জিডিপি’র ৬.১ শতাংশ)। অর্থাৎ ঘাটতি কমেছে। বাজেট ঘাটতি পূরণে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে নেয়া হচ্ছে ৭৯ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা। অন্যদিকে বৈদেশিক উৎস থেকে ৮০ হাজার ১৭ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ঋণ নেয়া হয়েছে ৭২ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ উভয় খাতে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম ঋণ নেয়া হয়েছে।
তবে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অধিক ঋণ নেয়া হয়েছে। এ খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ঋণ নেয়া হয়েছে ৩০ হাজার ৩০২ কোটি টাকা।
চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের মূল এডিপি’র আকার ছিল ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা এবং সংশোধিত বাজেটে কাটছাঁট করে এডিপি’র আকার দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা।