নিজস্ব প্রতিনিধিঃ মারে ডাক্তার রাখে কে??? রাইফা, দৈনিক সমকালের স্টাফ রিপোর্টার রুবেল খানের আদরের দুলালী। মেয়েটার গলাব্যথা। খাবার খেতে কষ্ট হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার বাবা তাকে নিয়ে গেলেন নগরীর মেহেদীবাগের ম্যাক্স হাসপাতালে। একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন। ভর্তির কারণ-স্যালাইনের মাধ্যমে শরীরে খাবারের ঘাটতি পূরণ।
ভর্তির পর কর্তব্যরত ডাক্তার অন্য ওষুধের সাথে এন্টিবায়োটিক দেন। প্রথমবার এন্টিবায়োটিক খাওয়ানোর পর রাইফার হালকা খিঁচুনি শুরু হয়। বাবা সাথে সাথে বিষয়টি ডিউটি ডাক্তারকে জানান এবং বলেন, এন্টিবায়োটিক হয়তো তার মেয়ের শরীর সহ্য করতে পারছে না। ডিউটি ডাক্তার তখন একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে কল করার পরামর্শ দেন। কল দেওয়া হয় ডা. বিধান রায় চৌধুরীকে। শুক্রবার সকালে আসার কথা থাকলেও তিনি আসলেন দুপুরে। রোগী দেখলেন, কিন্তু এন্টিবায়োটিক দেয়ার পর খিঁচুনির কথা বললেও ডাক্তার কোনো উত্তর দেননি। ২২০০ টাকা ফিস নিয়ে তিনি রোগী দেখলেন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে-একবার হাতটাও ধরলেন না। বাবার নানা প্রশ্নের কোনো জবাব না দিয়ে ডা. বিধান চলে গেলেন।পরে মেয়ের বাবাকে নার্স জানালেন-ডাক্তার পরামর্শ দিয়েছেন এন্টিবায়োটিক খাওয়ানোর জন্য। সাংবাদিক বাবা তো আর ডাক্তারের চেয়ে বড় কেউ নয়। বাবার আপত্তি সত্ত্বেও আবারও আড়াই বছরের মেয়েটাকে এন্টিবায়োটিক দেয়া হলো। পরেরবার ওষুধ খাওয়ানোর পর আর হালকা নয় চরম খিঁচুনি হতে লাগল ছোট্ট রাইফার। এমন খিঁচুনি হতে লাগল যে, বাচ্ছাটা দাঁতে দাঁত চেপে সেটা সহ্য করার চেষ্টা করল। আর তাতে একটা দাঁত ভেঙ্গে মাটিতে পড়ে গেল। দেবশিশুটির মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে লাগল। বিষয়টি দ্রুত ডিউটি ডাক্তার ও নার্সকে জানানো হলে তারা এসে বাচ্চাটার মুখে গজ ঢুকিয়ে দিয়ে রক্ত পড়া বন্ধের চেষ্টা করল। তখন ডিউটি ডাক্তার ডা. বিধানের সাথে কথা বললেন। বিধান রোগীকে ঘুমের ওষুধ দিতে বললেন।তখন নার্স ডিউটি ডাক্তার দেবাশীষের কাছে জানতে চাইলেন, ঘুমের ওষুধ কতটা দেবেন। ডিউটি ডাক্তার দেবাশীষ নির্দেশ দিলেন পুরোটাই দিতে। নার্স তখন বললেন, ও তো শিশু। ডা. দেবাশীষ বললেন, কোনো সমস্যা নেই, এই বয়সের বাচ্চাকে এর চেয়ে বেশিও দেওয়া যায়। নার্স ডিউটি ডাক্তারের কথামতো ঘুমের ওষুধু পুরোটাই দিলেন। এরপর সব শেষ। ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে গেল রাইফা, আমাদের কন্যা। রাত তখন ১২টা।
সাংবাদিক রুবেল খান এই বর্ণনা দিয়েছেন তার সহকর্মী ও বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকদের। এবার আপনারাই বলুন-ছোট্ট শিশুটি ডাক্তারদের অবহেলার শিকার কি না? এটা কি রোগে মৃত্যু না ডাক্তারের হাতে হত্যা? আর এই হত্যার সাথে জড়িতদের বাঁচাতে এক ঘণ্টার মধ্যে সারা চট্টগ্রামের সব হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেয়।
এখন প্রশ্ন, একজন সাংবাদিক অন্যায় করলে অন্যরা তার দায় নেন না। একজন জজ দোষ করলে তার দায় সকর্মীরা নেন না। একজন পুলিশ অপরাধ করলে তার দায় ডিপার্টমেন্ট নেয় না। তাহলে বিএমএ কেন কিছু ডাক্তারের অপরাধের দায় নিচ্ছে? অপরাধীর সাথে যোগ দিয়েছে? আর দুই একজন ডাক্তারের ভুলে হাজার ডাক্তার চুপ কেন? তারা কি একটু সহানুভূতিও জানাতে পারেন না?