জামিনে এসেই সংঘবদ্ধ হয়ে উঠছে প্রতারক দল

201

বন্দর প্রতিনিধিঃনূন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকা সত্বেও ডাক্তার, সাংবাদিক পরিচয়ে  প্রতারণা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে র‌্যাব-১১ কাছে গ্রেপ্তার হয়েছিল বন্দরের চিড়ইপাড়া কলোনীর সংগবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য নূর মোহাম্মদ সুজন ও সোহাগ।অভিযান চলাকালে র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে ঐ সময় ছটকে পড়ে একই সংগবদ্ধ চক্রের আরো দুই সদস্য  আক্তার ও তার ভাই আশিক । এর মধ্যে নূর মোহাম্মদ সুজন ও সোহাগ বেশ কিছুদিন কারাভোগের পর তারা জামিনে এসে পালিয়ে যাওয়া আক্তার ও তার ভাই আশিকসহ বেশ কয়েকজন সংগবদ্ধ প্রতারক চক্র আবারও সুসংগঠিত হয়ে উঠছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এই চক্রটি কখনো ভূয়া ডাক্তার আবার কখনো সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে নিরিহ মানুষের সাথে প্রতারণা ও চাঁদাবাজিতে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে স্থানীয় শিল্প কলকারখানা মালিক,ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ।

চিড়ইপাড়া কলোনী এলাকার সংগবদ্ধ প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য আক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে থানায় চাঁদাবাজির অভিযোগ দায়ের করেন টোটাল ফ্যাশন গার্মেন্টেসের এডমিন ফিরোজ খান।

৪ এপ্রিল সোমবার রাতে বন্দর থানায় এ অভিযোগটি দায়ের করা হয়। প্রতারক ভূয়া ডাক্তার ও ভূয়া সাংবাদিক পরিচয় দানকারি আক্তার হোসেন বন্দর উপজেলার চিড়ইপাড়া কলোনী এলাকার মৃত জয়নাল আবেদীন জনুর ছেলে। তার বিরুদ্ধে বন্দর থানায় একাধিক চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান,কলোনীর মৃত জয়নাল আবেদীন জনুর দুই ছেলে আক্তার হোসেন অষ্টম শ্রেণী ও তার ভাই  আশিক ৬ বিষয়ে ফেল করে অষ্টম শ্রেনী পাশ। একই এলাকার মৃত মনির হোসেনের ছেলে পেশাদার ড্রাইভার সোহাগ, তার ছোট ভাই নুর মোহাম্মদ সুজন ডাইং ফ্যাক্টরী শ্রমিক।

একই এলাকার হওয়ায় তারা কখনো ডাক্তার আবার কখনো সাংবাদিক বনে যাচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে নানা অপকর্ম করলেও র‌্যাব-১১র চোখ ফাঁকি দিতে পারেনি সংঘবদ্ধ কলোনীর প্রতারক চক্র। গত ৮ মার্চ রাতে  র‌্যাব-১১র একটি দলের অভিযানে ভূয়া ডাক্তার ও সাংবাদিক পরিচয় দানকারি দুই ভাই সুজন ও সোহাগকে বন্দরের লাঙ্গলবন্দ চিড়াইপাড়া কলোনী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‌্যাবের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিএমডিসি কর্তৃক অনুমোদিত কিংবা একাডেমি সার্টিফিকেটধারী কোন রেজিষ্টার্ড ডাক্তার নয়, তারা ভূয়া ডাক্তার। তাদের কারো মেডিকেল এবং মেডিসিন বিষয়ক শিক্ষাগত যোগ্যতার কোন সার্টিফিকেট নেই।

পরবর্তীতে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের সাংবাদিকতার পরিচয় পাওয়া গেলেও তাদের সাংবাদিকতার নূন্যতম যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও সাংবাদিকতাকে পুঁজি করে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের নিকট উক্ত ভূয়া ডাক্তারের নিকট চিকিৎসা নিতে প্রচারণা ও উৎসাহ দিয়ে থাকে।

এছাড়া তারা ড্রাগ লাইসেন্স ব্যতিত উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানের ফার্মেসীতে বিভিন্ন প্রকার যৌন উত্তেজক ঔষধ এবং স্বল্পমূল্যে মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ বিক্রি করে। মূলত এসব কর্মকান্ডের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করে নিজেরা আর্থিক ভাবে লাভবান হয়ে থাকে।

তারা আরো জানায় যে, পরস্পর যোগসাজসে দীর্ঘদিন যাবৎ লোকচক্ষুর আড়ালে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে সুকৌশলে সাধারণ মানুষের সাথে চিকিৎসার নামে প্রতারণা করে আসছে। এছাড়াও সাংবাদিকতাকে পুঁজি করে তারা বিভিন্ন অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আসছিল।

র‌্যাবের ঐ অভিযান চলাকালে র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে আক্তার ও তার ভাই আশিক পালিয়ে  গিয়ে গ্রেপ্তার থেকে রক্ষা  পেয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন।

র‌্যাবের ওই মামলায় সোহাগ ও সুজন করাভোগের পর জামিনে এসে আবারও সংঘবদ্ধ হয়ে আক্তার হোসেন আশিককের মাধ্যমে চাঁদাবাজি সহ নানা  অপকর্ম প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে ওই সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে। এর ধারাবাহিকতায় গত সোমবার দুপুরে কামতাল এলাকায় অবস্থিত টোটাল ফ্যাশন গার্মেন্টের নিরাপত্তা বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণের জন্য মাটি কাটছিলেন শ্রমিকরা।

এসময় চিড়ইপাড়া কলোনীর সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য আক্তার হোসেন সহ ১০-১২ জন নির্মাণ কাজে বাঁধা দেয়। এবং শ্রমিকদের মারধর সহ অকথ্য ভাষায় গালাগাল করলে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসলে কথিত সাংবাদিক পরিচয়দানকারী আক্তারসহ তার সহযোগীরা পালিয়ে যায়।

এঘটনায় গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীর মালিক পক্ষে এডমিন ফিরোজ খান বাদী হয়ে আক্তারসহ ৭ জনের নাম উল্লেখ করে বন্দর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগ তদন্তকারি কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর মাহবুব আলম জানান,  টোটাল ফ্যাশন গার্মেন্টেসের ফিরোজ খান বাদী হয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগটি তদন্তাধীন। ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে।