ধারালো অস্ত্র ও ককটেলসহ সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের ৯ সদস্য গ্রেফতার

318

র‍্যাব-১১ এর অভিযানে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার হতে ধারালো অস্ত্র ও ককটেলসহ সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের ৯ সদস্য গ্রেফতার করে। র‍্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধ এর উৎস উদঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতারসহ আইনশৃঙ্খলার সামগ্রিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য র‍্যাব ফোর্সেস নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে থাকে। দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় ডাকাতি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড দমনের লক্ষ্যে অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সাথে র‌্যাব জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার ও আইনের আওতায় আনার জন্য নিয়মিত সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে থাকে।

সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার এলাকায় বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর ডাকাতির ঘটনা ঘটে। উক্ত ডাকাতি সংক্রান্ত ঘটনাগুলোর প্রেক্ষিতে এলাকার সাধারণ জনগণের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। ডাকাতির ঘটনাগুলো নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় গণমাধ্যমসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ডাকাতির ঘটনা ঘটার দ্রæততম সময়ের মধ্যে র‍্যাব ঘটনা সংক্রান্তে প্রয়োজনীয় তথ্য, এজাহার ও এফআইআর সংগ্রহ করে সেগুলো পর্যালোচনা শুরু করে। এছাড়াও ভুক্তভোগীদের নিকট থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য এবং ডাকাতদের গ্রেফতারের জন্য আবেদন পাওয়া যায়। লক্ষ্য করে দেখা যায় যে, গত বেশ কিছুদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে ডাকাতির ঘটনা ঘটছে এবং সবগুলি ডাকাতির ঘটনা প্রায়  একই রকম। এতে ধারণা করা যায়, একটি বড় সংঘবদ্ধ ডাকাত দল অত্র এলাকাসমূহতে পরিকল্পিতভাবে ডাকাতি করে আসছে। ডাকাতদের বয়স, ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত অস্ত্রের ধরন এবং লুণ্ঠিত দ্রব্যাদি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে র‍্যাবর একটি চৌকস গোয়েন্দা দল গোপনে ডাকাত প্রবণ এলাকায় কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে এলাকার কিছু সক্রিয় ডাকাত সদস্যকে সনাক্ত করে তাদের গতিবিধি লক্ষ্য করা হয় এবং একইসাথে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-১১, সিপিএসসি এর একটি আভিযানিক দল কর্তৃক ১২ মে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে গভীর রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানাধীন মারুয়াদী বাজার এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতি গ্রহণকালে ধারালো অস্ত্র ও ককটেলসহ সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্র সবুজ বাহিনীর ০৯ জন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো, উক্ত ডাকাত চক্রের গ্যাং লিডার ১। মোঃ সবুজ (২৮), পিতা- মোঃ নূর মোহাম্মদ, সাং- মাওরাদি, থানা- আড়াইহাজার, জেলা- নারায়ণগঞ্জ, এ/পি- যাত্রাবাড়ী (আজিজ মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া), ডিএমপি, ঢাকা ও অপর গ্যাং লিডার ২। মোঃ সাখাওয়াত হোসেন রনি (২৪), পিতা- বাবুল মিয়া, সাং- নিমাইকাশারী (কালা হাজীর বাড়ির সামনে), থানা- সিদ্ধিরগঞ্জ, জেলা- নারায়ণগঞ্জসহ সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের সক্রিয় সদস্য ৩। মোঃ সোহেল @ ইসমাইল (৩০), পিতা- মৃত নুকু, সাং- জাঙ্গালিয়া, দামীরদার, থানা- আড়াইহাজার, জেলা- নারায়ণগঞ্জ, এ/পি- সাং রায়েরটেক, কাঁচপুর থানা- সোনারগাঁও, জেলা- নারায়ণগঞ্জ; ৪। মোঃ আবুল কাশেম (৩৩), পিতা- মৃত আবু তালেব,  সাং- গোপালদী ইসলামপুর, সদাসদি, থানা- আড়াইহাজার, জেলা- নারায়ণগঞ্জ;  ৫। মোঃ মিজান (২২), পিতা- সাইফুল শেখ, সাং- মুক্তিনগর, ৩নং ওয়ার্ড, থানা- সিদ্ধিরগঞ্জ, জেলা- নারায়ণগঞ্জ; ৬। মোঃ ওমর ফারুক (২৫), পিতা- মোঃ হামিদ, সাং- উলুকান্দি, সদাসদি, থানা- আড়াইহাজার, জেলা- নারায়ণগঞ্জ; ৭। মোঃ সোহেল (২৮), পিতা- মৃত আনোয়ার আলী, সাং- ধুপতারা কাঠালিয়াপাড়া, থানা- আড়াইহাজার, জেলা- নারায়ণগঞ্জ, এ/পি- সাং- বাগানবাড়ী, থানা- সিদ্ধিরগঞ্জ, জেলা- নারায়ণগঞ্জ ৮। মোহাম্মদ রবিউল শেখ (২৪), পিতা- মৃত মোঃ রশিদ শেখ সাং- পূর্ব নারায়ণপুর,  থানা- মোহাম্মদপুর, জেলা- মাগুড়া, এ/পি- সাং- চিটাগাং রোড, আটি ওয়াপদা কলোনী (ইব্রাহীম এর বাড়ীর ভাড়াটিয়া), থানা- সিদ্ধিরগঞ্জ, জেলা- নারায়ণগঞ্জ; ৯। মোঃ জাহাঙ্গীর সিকদার (৩৮), পিতা- মৃত আনু সিকদার, সাং-মধ্য মহাখালী, থানা- মুন্সীগঞ্জ সদর, জেলা- মুন্সীগঞ্জ, এ/পি- ওমর আলী স্কুল রাজারচেক, থানা- সোনারগাঁও, জেলা- নারায়ণগঞ্জ। গ্রেফতারকৃত উক্ত ডাকাত চক্রটি গত ০৬ এপ্রিল ২০২২ এবং ২৪ এপ্রিল ২০২২ তারিখ আড়াইহাজার থানা এলাকায় সংঘটিত ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ছিল মর্মে প্রাথমিক জিজ্ঞাসবাদে জানা যায়। গ্রেফতারকৃত আসামীদের হেফাজত হতে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ০৭টি ককটেল, ০২টি রামদা, ০৪টি ছোড়া, ০২টি শাবল, ০১টি চাইনিজ কুড়াল, ০১টি তালা কাটার, ০২টি তরবারী ও ০৫টি টেটা উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও ডাকাতি হয়ে যাওয়া ০১টি মোবাইল ফোনও উদ্ধার করা হয়। ডাকাতি করা টাকাগুলো এবং লুট করা স্বর্ণালংকারগুলো উক্ত গ্যাং এর সদস্যগণ ভাগ বাটোয়ারা করে নেয়। গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে আড়াইহাজার ও সোনারগাঁ থানায় একাধিক ডাকাতি ও মাদক মামলা রুজু রয়েছে। এর মধ্যে গ্রেফতারকৃত ১নং ও ৩নং আসামীদের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক একাধিক গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে।

প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃতরা সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের সক্রিয় সদস্য এবং তারা দীর্ঘদিন যাবৎ আড়াইহাজার থানা এলাকায় বিভিন্ন প্রবাসীদের বাড়িতে অথবা বিভিন্ন ব্যবসায়ী বা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল পরিবারগুলোকে টার্গেট করে পরিকল্পিতভাবে তাদের ডাকাতি কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। গভীর রাতে আড়াইহাজারের বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে অতর্কিতভাবে হাজির হয়ে ধারালো অস্ত্র প্রদর্শন করে জনমনে ভয়ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করে সাধারণ লোকজনদের জিম্মি করে ডাকাতি করে সিএনজি/মোটরসাইকেলযোগে দ্রæততার সাথে ঘটনাস্থল হতে পালিয়ে যায়। দুষ্কৃতিকারী এই ডাকাত দলের সদস্যরা ডাকাতি করতে গিয়ে জনসাধারণকে মারধর, ছুরিকাঘাত ও গাড়ি ভাংচুরসহ গুরুতর জখম করে থাকে। দীর্ঘদিন দিন ধরে তারা নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানা এলাকায় বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে তাদের অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে ডাকাতি করে আসছিল।

গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।