কুতুবপুরের কুতুবদের নিয়ন্ত্রনে অপরাধ সেক্টর!

297

তানভীর আহমেদ রাজীবঃ অপরাধ ও অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য বলে খ্যাত ফতুল্লার কুতুবরের অধিকাংশ অপরাধের পেছনে সরকারদলীয় রাজনৈতিক নেতা, হোমড়া-চোমরা ও স্থানীয় জনপপ্রতিনিধিরা দায়ী করছেন সচেতন মহল। শুধু তাই নয়, প্রতক্ষ্য এবং পরোক্ষ ভাবে তারা অপরাধের সঙ্গেও জড়িত। এমনটাই মনে করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। এক সময় নামধারী তারকা সন্ত্রাসীরা কুতুবপুরে সর্ব মহলে কুতুবগিরি করলেও সময়ের পরিবর্তনে তারাই আজ লেবাস পাল্টে কেউ জনপ্রতিনিধি আবার কেউ রাজনৈতিক নেতা। দলীয় সাইনবোর্ড ব্যবহার করে নগদ অর্থ উপার্জন ও প্রভাব বিস্তারে তৈরি করেছে একাধিক সন্ত্রাসী বাহিনী। উঠতি বয়সী যুবক এবং কিশোরদের ব্যবহার করেই এ সকল অর্থ পিপাসু জনপ্রতিনিধি এবং অসাধু রাজনীতিবিদরাই ভূমি দস্যুতা, চাঁদাবাজী, মাদক কারবার, জোরপূর্বক নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ, বিচার-শালিসীর নামে অর্থ আদায়সহ নানা অপরাধের জন্ম দিয়ে স্থানীয়বাসীদের জিম্মি করে রেখেছে। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাদের প্রভাব। যার ফলে নির্যাতিত, ভুক্তভোগী ও  ক্ষতিগ্রস্থরা তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায় না।

এলাকাবাসীর তথ্যমতে, সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার বহুল আলোচিত কুতুবপুর ইউনিয়নের প্রতিটি এলাকার প্রকৃত চিত্র গা শিউরে ওঠার মতো। এখানে অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে যে, অধিকাংশ নেতাই সরাসরি মাদক ও কিশোর গ্যাং পালনে জড়িত। রসিকতা করে অনেকেই বলছেন, কুতুবপুর হলো নারায়ণগঞ্জের টেকনাফ। আদতে এই ইউনিয়নে মাদকের টাকা কোন কোন নেতা খায়, সেই তালিকা করার চেয়ে মাদকের টাকা কে কে খান না, সেই তালিকা করাই সহজ। অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিগত বিএনপি সরকারের আমল থেকে কুতুবপুরে মাদকের বিকিকিনি শুরু হয় প্রকাশ্যে। তৎকালীন সময়ে বিএনপি ক্যাডারেরা উপর মহলের আশীর্বাদ নিয়েই অবাধে মাদক ব্যবসা করেছেন। পট পরিবর্তনে পর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলেও বন্ধ হয়নি মাদকের কারবার। সরকারদলীয় প্রভাবশালী এক নেতার আপন  ভাই সিমেন্ট ব্যবসার অন্তরালে নাগকাটা বাড়ি এলাকায় গড়ে তুলেছে বিশাল মাদকের বাজার। টোকেনের মাধ্যমে খুচরা মাদক বিক্রেতাদের নিকট সেই ভাই মাদকের ছোট ছোট চালান তুলে দেয়। প্রচার রয়েছে গোটা নন্দলালপুর, নয়ামাটি এলাকাজুড়ে তার ইয়াবা, ফেনসিডিল ও গাজাঁ বিক্রি হয়ে থাকে। তার মাদক ব্যবসার প্রতিপক্ষ ছিলো রনি। সেই রনিকে বাগে আনতে না পেরে স্থানীয় প্রশাসন ও ক্যাডার বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে এলাকা ছাড়া করে গোটা নন্দলালপুর একক নিয়ন্ত্রন নিয়েছে সেই ছোট ভাই। কুতুবপুরের চিতাশালে বিশাল আকারে মাদক ও জুয়ার বোর্ড বসায় স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা। সেটি দেখভালের দায়িত্ব নেন তারই গুনধর পুত্র। জনশ্রæতি রয়েছে, চিতাশালের একটি রিক্সার গ্যারেজে চলা ওই জুয়ার বোর্ডে প্রতি রাত্রে কোটি টাকার আনাগোনা হতো। চলতো নেশার আসরও। এমনকি মাদকাসক্ত পুত্রের সাথে ইয়াবা ব্যবসার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে প্রকাশ্যে মারামারির মতো লজ্জাজনক কাÐও ঘটান ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা। সেই জুয়ার বোর্ড ও মাদকের টাকার ভাগ চলে যেতো থানাসহ বিভিন্ন নেতার কাছে, এমনটিই অভিযোগ এলাকাবাসীর। দলের পরবর্তী মেয়াদেও বদলাননি পিতা-পুত্র কেউই। বরং আরো জোরেশোরে বাহিনী দিয়ে চালাচ্ছেন মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধমুলক কর্মকান্ড। জনশ্রæতি রয়েছে ক্ষমতার পট পরিবর্তনে দলীয় বোল পাল্টে জনপ্রতিনিধি হয়ে ভুমি দস্যুতায় মেতে উঠেছে। তার বিরুদ্ধে আশির  দশকের শেষের দিকে পাগলা স্কুলের সামনে পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা, ছাত্রলীগ নেতা মেছের হত্যা সহ বহু সংখ্যক হত্যাকান্ডের অভিযোগ রয়েছে। একের পর এক হত্যা কান্ডের জন্ম দিয়ে দেশান্তর হন তিনি। চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় এলে তিনি দেশে ফিরে আসেন। সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্যের প্রভাবে তার ছোট ভাই পাগলা মুসলিম পাড়া, শাহি মহল্লাসহ আশপাশ এলাকাজুড়ে মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজীসহ নানা অপরাধের জন্ম দিয়ে স্থানীয়বাসীর জীবন যাত্রাকে দুর্বিসহ করে তুলেছে। তার রয়েছে নিজস্ব একটি কিশোর গ্যাং বাহিনী। তথ্য মতে, সাইনবোর্ড, গিরিধারা, ভুইঘর, রুপায়ন টাওয়ার, মাহমুদপুরসহ আশপাশ এলাকাজুড়ে রীতিমতো চলছে প্রভাবশালী এক জন প্রতিনিধির রাম রাজত্ব। তার কথায় হচ্ছে আইন। তার নিকটাত্মীয় স্বজনরাই মাদক ব্যবসা, ভূমীদস্যুতা, চাঁদাবাজী, পরিবহন সেক্টরে চাঁদা আদায়, বিচার- শালিসীসহ অর্থ উপার্জনের প্রতিটি সেক্টর নিয়ন্ত্রন করে আসছে। পাশাপাশি  স্থানীয় এক আওয়ামীলীগ নেতা তার ভাতিজা কে ব্যবহার করে ভুমি দস্যুতা ও চাঁদাবাজীর মহাৎসবে মেতে উঠলেও ভয়ে এই নেতা বা তার ভাতিজার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে না। এখানেই শেষ নয়। কুতুবপুর ইউনিয়নের মুন্সিবাগ, আদর্শনগর, শাহীবাজার, নূরবাগ, বটতলা, রসুলপুর, নন্দলালপুর, নয়ামাটি, রেললাইন, আলীগঞ্জ, ভূইগড়, পাগলাসহ আরো বেশকিছু স্পটে মাদক ও কিশোর গ্যাংয়ের আস্তানা গড়ে ওঠে। আর প্রত্যেকটি আখড়ার নেপথ্যে রয়েছে নামধারী কিছু নেতা। আওয়ামীলীগ বিরোধী দলে থাকাকালীন যাদের অভাব-অনটন লেগেই থাকতো, তারাই মাদক ও জুয়ার টাকায় অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। আধিপত্য বজায় রাখতে দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের মাদক ও প্রভাবের লোভ দেখিয়ে জড়াচ্ছেন মাদক ব্যবসা ও কিশোর গ্যাংয়ে। এলাবাসীর বিভিন্ন তথ্যমতে, কুতুবপুরের মাদকের সর্বগ্রাসী আগ্রাসনের জন্য মূল দায় সরকারদলীয় অর্থ পিপাসু  নেতারা। যারা কিনা দিনের বেলায় মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিহাদ’ করে  এবং কিশোর গ্যাং- সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জ্বালাময়ী বক্তব্য দেয় রাতে আধারে তারাই আবার মাদক বিক্রি করায় এবং কিশোর গ্যাং ও সন্ত্রাসীদের সাথে খোশ গল্পে মেতে উঠে। তাদের এই ফাঁদে পড়ে অকালেই ঝরে যাচ্ছে বহু প্রাণ। মাদকের বিরুদ্ধে নেতাদের বক্তব্যও তাই হাস্যরসের সৃষ্টি করছে এলাকাবাসীর াকছে। তাদের মতে, যারাই মাদকের বিরুদ্ধে বড় কথা বলছে, তাদের প্রায় সবার ছেলে, ভাই, ভাতিজা পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী। বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধিও মাদকাসক্ত বলেও তথ্য উঠে এসেছে। ফতুল্লা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাংবাদিকদের সাথে কথা হয় সরকারদলীয় নেতা মালেক মুন্সির সাথে , তিনি বলেন তার কোন বাহিনী নেই এবং তিনি নিজে কোন অপরাধের সাথে জড়িত নয়। যে সকল এলাকায় মাদক ব্যবসা, ভূমি দস্যুতা, হত্যা, সহিংসতার ঘটনা ঘটছে সে এলাকার নেতারাই হয়তো জড়িত থাকতে পারেন। মুঠোফোনে কথা হয় আওয়ামীলীগ নেতা রাজ্জাক বেপারীর সাথে, তিনি বলেন তিনি যদি কোন অপরাধের সাথে জড়িত থাকেন তাহলে যাচাই- বাছাই করে সংবাদ পওকাশের অনুরোধ করেন। পাশাপাশি তিনি আরো বলেন কেউ অপরাধ করে কখনো স্বীকার করে না। তিনিও চান অপরাধমুক্ত সমাজ। কুতুবপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আলাউদ্দিন হাওলাদার মুঠোফোনে বলেন, তার কোন আতœীয়- স্বজন কোন প্রকার অপরাধের সাথে জড়িত নয়। তাছাড়া তার কোন সন্ত্রাসী বাহিনী নেই। ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ও পাগলা নন্দলালপুরের বাসিন্দা এইচ,এম ইসহাক জানান, তিনি ব্যাংকে চাকুরী করেন। তার ভাইয়েরা সকলেই পওতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তার কোন সন্ত্রাসী বাহিনী নেই। যারা বলে তারা তার ও তার ভাইদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে।