মোঃ মোক্তার হোসাইন: নারায়নগঞ্জ রুপগঞ্জ-
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের আলোচিত ইউপি সদস্য বজলুর রহমান ওরফে বজলু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। ৩১ মার্চ শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে তিনি মারা যান।
বজলুর রহমান রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন। তার বিরুদ্ধে রূপগঞ্জের আলোচিত চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ ছিল।
রূপগঞ্জ থানার চনপাড়া বস্তির মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ করতেন বজলুর রহমান ওরফে বজলু (৫২)। বস্তির প্রায় ২০০টি স্পটের মাদক কারবারিদের কাছ থেকে মাসিক ভিত্তিতে টাকা তুলত তার সিন্ডিকেট।
গত বছরের ১৮ নভেম্বর বিকেলে র্যাব-১ এর অভিযানে চনপাড়ার পূর্বগ্রাম এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন বজলু। র্যাব তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও জাল টাকা রাখার অভিযোগে তিনটি মামলা করে। এই তিন মামলার বাইরেও বজলুর রহমানের বিরুদ্ধে হত্যা, মাদকসহ অন্তত ২৩টি মামলা ছিল বলে তখন জানিয়েছিল র্যাব।
ওই সময়ে র্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লেফট্যানেন্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, বজলু একজন চিহ্নিত অস্ত্রধারী, দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী। এ ছাড়াও তিনি চনপাড়া এলাকার পুরো মাদকের কারবার নিয়ন্ত্রণ করতেন। নারায়ণগঞ্জ ছাড়াও বেশ কয়েকটি জেলায় তার সহযোগী আছেন, যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও মাদকের কারবার নিয়ন্ত্রণ করেন।
তিনি বলেন, ১৮ নভেম্বর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানার চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র (চনপাড়া বস্তি) এলাকার চিহ্নিত শীর্ষ সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী বজলুর রহমান ওরফে বজলুকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগজিন, পাঁচ রাউন্ড গুলি, ২২০ গ্রাম হেরোইন, একটি মোবাইল, ভারতীয় ২৫ হাজার জাল রুপি, বাংলাদেশি ৭৫ হাজার জাল টাকা এবং মাদক বিক্রির নগদ ২১ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বজলু জানান, তিনি কায়েতপাড়া ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার। তিনি স্থানীয় উঠতি বয়সের ছেলেদের কাছে ‘বজলু ভাই’ নামে পরিচিত। বিভিন্ন সোর্স তার ছত্রছায়ায় এলাকার ছেলেদের টাকা দিয়ে হত্যা, মাদক কেনাবেচা, চাঁদাবাজি, ভয়ভীতি, কিশোর গ্যাং, ধর্ষণ, যৌন হয়রানি এবং পতিতালয় পরিচালনা করত। কেউ চাঁদা না দিলে তাকে ব্যাপক মারধর করত। গত এক-দেড় বছরে ছয়জন খুন হয়েছেন।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর অপরাধী গ্রেফতারে র্যাব চনপাড়া এলাকায় অভিযান চালালে বজলুর রহমান ওরফে বজলুর নির্দেশে অপরাধীরা তাদের ওপর আক্রমণ করে অপরাধী ছিনিয়ে নেওয়ারও অপচেষ্টা চালায়। বজলুর রহমান এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন বলেও জানান র্যাব-১ এর অধিনায়ক।
বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ হত্যাকাণ্ডের পর ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে বজলুর নাম।
নারায়ণগঞ্জের জেল সুপার মোকাম্মেল হোসেন বলেন, “বজলুর ডায়বেটিক, হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ছিলেন। ২৩ মার্চ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ওইদিনই ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের তত্ত্বাবধানে ঢামেকে চিকিৎসাধীন ছিলেন।”
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, সপ্তাহখানেক ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের তত্ত্বাবধানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল বজলুর রহমান। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যায় তিনি মারা যান।