আওয়ামীলীগের কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব চরমে, তৃণমূলে ক্ষোভ

191


মোঃ মোক্তার হোসাইন: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে কর্মীদের মধ্যে চরম দ্বন্দ্ব ও তৃর্নমুলে ক্ষোভ দেখা যায়।
জেলা আওয়ামীলীগ ঘোষিত সোনারগাঁ আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রত্যাখ্যান করেছে কমিটির সভাপতি এডভোকেট শামসুল ইসলাম ভূইয়া ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত।

৪ জুলাই মঙ্গলবার রাতে দলীয় প্যাডে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মোঃ শহীদ বাদল স্বাক্ষরিত ৭১ সদস্য বিশিষ্ট একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ করা হয়।
৫ জুলাই বুধবার দুপুরে পূর্ণাঙ্গ কমিটির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই। কমিটি প্রকাশের পর থেকেই স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। পদ বঞ্চিত নেতাকর্মীরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জেলা কমিটির বিরুদ্ধে।

সোনারগাঁ আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট শামসুল ইসলাম ভূইয়া বলেন,”জেলা কমিটির পক্ষ থেকে এভাবে উপজেলা কমিটি অনুমোদন দেয়া ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। আমরা এ কমিটি প্রত্যাখ্যান করেছি। এ জন্য যা কিছু প্রযোজন তাই করা হবে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।”

এদিকে ৫ জুলাই বুধবার কমিটির তালিকা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরলে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। জেলা আওয়ামীলীগের অনুমোদিত এ কমিটিতে দলের অনেক পরীক্ষিত নেতারা বাদ পরায় এ কমিটি প্রত্যাখ্যান করেছে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের ৭১ সদস্য বিশিষ্ট প্রস্তাবিত কমিটি থেকে ২০জন সদস্যকে বাদ দিয়ে, বেশ কিছু পরিবর্তন করে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন জেলা কমিটি। বাদ পরা ২০ জনের মধ্যে জনপ্রতিনিধিসহ উপজেলা আওয়ামীলীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নাম রয়েছে।

সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মরহুম আব্দুল হাই এর পুত্র আহসান হাবীব টিপু জানান, “অনুমোদিত কমিটি নিয়ে আমি হতাশ। আমার বাবা সোনারগাঁ আওয়ামীলীগের জন্য অনেক ত্যাগ শিকার করেছেন। বিএনপি জামায়াত সরকারের সময় বাবাসহ আমার পুরো পরিবার অসংখ্য মামলা হামলার শিকার হয়েছে। কিন্তু আমার নাম প্রস্তাবিত কমিটিতে থাকলেও পুর্নাঙ্গ কমিটি থেকে আমাকে বাদ দেয়া হয়েছে। কিভাবে এমন কমিটি হলো তা আমার বোধগম্য নয়।”

কমিটি নিয়ে সোনারগাঁ আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত বলেন, “জেলা আওয়ামীলীগের কমিটি আমরা মানি না। আমাদের সাথে কোন ধরনের পরামর্শ না করেই জেলা আওয়ামীলীগ এ কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন। যাদের কেউ চিনে না এমন অনেক ব্যক্তিদেরকে কমিটিতে রাখা হয়েছে। এ বির্তকিত কমিটির অভিযোগ নিয়ে প্রয়োজনে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে যাব।”
তিনি আরও জানান, “উপজেলা পর্যায়ে আমরা কাদের নিয়ে রাজনীতি করব সেটা আমাদের চেয়ে জেলা ভাল কেউ জানেন না। শুনেছি বিপুল অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে প্রস্তাবিত কমিটিকে ওলোট পালট করে তারা এ কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন।”
এব্যাপারে সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম হজ্বে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই জানান, “আমরা যে কমিটি অনুমোদন দিয়েছি তা সঠিক মনে করে দিয়েছি। সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগ এ কমিটিকে না মানলে আমাদের কিছু করার নেই।” মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে কমিটির পদ দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,” অর্থের বিনিময়ে কমিটিতে পদ দেয়ার প্রশ্নই আসে না। যারা যোগ্য তাদেরকেই পদ রাখা হয়েছে।”

উল্লেখ্য গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর সম্মেলনের মাধ্যমে কেন্দ্রেীয় নেতৃবৃন্দ সভাপতি, সহ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৩ সদস্য বিশিষ্ট সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটি গঠন করে দেন এবং এ কমিটিকে নির্দেশ দেয়া হয় তিন মাসের মধ্যে উপজেলা আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি যাতে গঠন করা হয়। নানা করণে উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটি গঠন বিলম্বিত হয়। চলতি বছরের মে মাসে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের ৭১ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রস্তাবিত কমিটি ঘোষণা দেন সোনারগাঁ আওয়ামীলীগ। গত ৭ জুন প্রস্তাবিত কমিটিকে নিয়ে একটি পরিচিতি সভাও করেন সোনারগাঁ আওয়ামীলীগ। এ সভা করায় ক্ষিপ্ত হোন জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দরা।