মোঃ মোক্তার হোসাইন: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ অমান্য করে মেঘনা নদীতে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে সোনারগাঁও উপজেলার চরকিশোরগঞ্জ এলাকার প্রয়াত আওয়ামীলীগ নেতা নাসির মেম্বারের ছেলে রাসেল গংদের বিরুদ্ধে।অবৈধভাবে মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে নদী গর্ভে বিলীন হতে বসেছে কৃষকদের কৃষি জমি ও শত শত বসতবাড়ী,তবে স্থানীয় প্রশাসন এ বিষয়ে কোন অভিযান পরিচালনা করেননি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভুক্তভোগী কৃষকরা। আদালত কর্তৃক স্থগিতাদেশের ফলে মেঘনা নদীতে স্থানীয় প্রশাসন বালু মহাল ইজারা দেননি। তাই আদালতের নিষেধাজ্ঞার পরও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার শম্ভুপুরা ইউনিয়নের চরকিশোরগঞ্জ এলাকায় প্রায় ৩০টি ড্রেজারের মাধ্যমে মেঘনা নদীতে দিনরাত অভিরাম চলছে বালু উত্তোলন। যার ফলে নদী তীরবর্তী চরকিশোরগঞ্জ এলাকার মানুষের কৃষি জমি ও ঘরবাড়ি
মেঘনায় বিলীন হতে চলেছে।এই বর্ষা মৌসুমে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের কারনে ভাঙ্গন আতঙ্কে রয়েছেন ওই এলাকার শত শত গ্রামবাসী।
অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ঝুঁকিতে রয়েছেন সোনারগাঁ উপজেলার চরকিশোরগঞ্জ,কাশেম নগর, মধ্য,চরহোগলা,চরহোগলা, আদর্শগ্রাম ও মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার হাজীপুর,দড়িকান্দি, দৌলতপুর, ফুলদি, ইসমানীচর ও ভাটিবলাকি এলাকার প্রায় ৪০ হাজার গ্রামবাসী।
মেঘনা নদীতে দিনরাত অভিরাম বালু উত্তোলনের ফলে নদীর তলদেশের মাটি সরে গিয়ে ইতোমধ্যে ৩৫টি ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। অবৈধ এই
বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য এলাকাবাসীর পক্ষে চরকিশোরগঞ্জ এলাকার সায়েব আলী মাতাব্বর নামে এক ব্যক্তি নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়,নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয় ও সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর নিজ সাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের অভিযোগ উঠেছে, চরকিশোরগঞ্জ এলাকার প্রয়াত আওয়ামীলীগ নেতা নাসির মেম্বারের ছেলে রাসেল মিয়ার নেতৃত্বে তার সহযোগি সোহেল রানা, শামীম আহম্মেদ স্বপন, আরমান, তুষার, ফিরোজ মিয়া, আলী হোসেন, মোসলেম মিয়া, মিন্টু মিয়া, মুকুল হোসেন, মুরাদ হোসেন, সোহাগ মিয়া, শাহাদাত মিয়া, সাকিব আহম্মেদসহ ৩০-৩৫ জনের একটি সিন্ডিকেট সোনারগাঁ উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে মেঘনা নদী তীরবর্তী বিভিন্নস্থান থেকে বালু উত্তোলন করে নিয়ে যাচ্ছে। সরকার দলীয় ও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বালু সন্ত্রাসীরা অনেক প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ মূখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।এর আগে বালু সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি মিথ্যা মামলার আসামি হয়েছেন।
চরকিশোরগঞ্জ এলাকাবাসী জানান, সোনারগাঁ উপজেলার একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চরকিশোরগঞ্জ এলাকায় প্রায় ১৮ হাজার মানুষের বসবাস। চরকিশোরগঞ্জ
এলাকায় রয়েছে একটি বাজার, দুটি উচ্চ বিদ্যালয়, দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়,দুটি মাদরাসা ও মিনি কক্সবাজার নামে একটি বিনোদন কেন্দ্র। বালু উত্তোলন বন্ধ করে এ প্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষা করা এখন খুবই জরুরি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বাসিন্দা জানান, সাবেক ইউপি সদস্য নাসির উদ্দিনের মৃত্যুর পর তার ছেলে রাসেল মিয়া চরকিশোরগঞ্জ চরহোগলা এলাকায় নদীতে চাঁদাবাজি ও ড্রেজারের মাধ্যমে অবৈধ বালু
উত্তোলনের দায়িত্ব নিয়েছে। রাসেল মিয়ার সঙ্গে রয়েছে ৩০-৩৫একটি সন্ত্রাসী বাহিনী। তাদের অবৈধ উপার্জনের টাকা স্থানীয় প্রশাসনের অনেকের পকেটেই যায়।
সরেজমিন মেঘনা নদীর চরকিশোরগঞ্জ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মেঘনা নদী তীরবর্তী কৃষি জমির পাশে শক্তিশালী ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করা
হচ্ছে। বালু উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত ড্রেজারে তেল সরবরাহ করার জন্য সার্বক্ষণিক একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়োজিত রয়েছে। এছাড়া ইঞ্জিনচালিত আরো দুটি নৌকায় ১০-১৫জন যুবক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে
সার্বক্ষনিক পাহারায় রয়েছেন। যাতে কেউ বালু উত্তোলনে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।বালু উত্তোলনে নেতৃতে থাকা রাসেল মিয়া জানান, আমরা মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে বালু মহাল ইজারা নিয়ে বৈধভাবেই বালু উত্তোলন করছি। আমরা অবৈধভাবে কোনো বালু উত্তোলন করছি না।
শম্ভুপুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ বলেন, বালু উত্তোলনের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তবে নদীতে বালু উত্তোলনসহ কিছু লোক অনেক অপকর্মই করে থাকেন। বালু সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপজেলা
প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলার নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক জানান,মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে আমি নৌপুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছি সেখানে অভিযান পরিচালনা করে অপরাধীদের আটক করার জন্য।অবৈধ বালু উত্তোলন কারীদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।