মা বাবার ঝগড়ার বলি হল এ্যানি

37


হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ
হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং থেকে মা বাবার ঝগড়ার বলি হল এ্যানি। পাষন্ড পিতার হাতেই মৃত্যু হয়েছে শিশু এ্যানির। বানিয়াচং উপজেলার কাগাপাশা বড় ব্রীজের নিচ থেকে উদ্ধার শিশুর লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফনের পর পরিচয় পাওয়া গেছে। সে সিলেট টিলাগড় এলাকার ইয়াসমিন আক্তারের কন্যা। বয়স ৩ বছর। গত বুধবার রাত্র ৯টায় বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন হয় শিশুর। গত মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) কৃষকরা বোরো ধানের জমিতে কাজ করার সময় ব্রীজের নিচের ডোবায় শিশুর মরদেহ দেখতে পান। পরে স্থানীয় লোকজন ইউপি চেয়ারম্যান এরশাদ আলীকে বিষয়টি অবগত করেন। ঘটনাটি পুলিশকে জানানো হয় এবং জানতে পেরে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে। পরিচয় না পাওয়ায় বেওয়ারিশ হিসেবে শিশুটির দাফন করা হয়। বেওয়ারিশ হিসেবে দাফনের ১দিন পরই শিশু এ্যানির পরিচয় নিশ্চিত হয় বানিয়াচং থানার পুলিশ শিশু এ্যানির মৃত্যু নিয়ে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। গতকাল ১লা ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে নিহত শিশু এ্যানির মা ইয়াসমিন বাদী হয়ে পাষন্ড পিতা ইমরান আহমেদ এবং তার সহযোগি বাদলের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং১, তারিখ-০১/০২/২৪। এ বিষয়ে মামলার বাদীনি ইয়াসমিন বেগম এর সাথে আলাপকালে জানা যায়, মায়ের কোলে থাকা এ্যানিকে ছিনিয়ে নিয়ে ট্রাক থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেন পষন্ড পিতা ইমরান আহমদ। সিলেটের সারিঘাট এলাকার বাসিন্দা ইমরান আহমদ একজন ট্রাক চালক। তিন বছর আগে জৈন্তাপুর উপজেলার গর্দান গ্রামের স্বামী পরিত্যক্ত ইয়াসমিনকে বিয়ে করেন ইমরান। ইয়াসমিনের সাবেক স্বামীর ঘরে ৩ বছরের এক পুত্র সন্তান রয়েছে সাফি। এদিকে ইমরানের কাছে বিয়ে হওয়ার ৩ বছরের সংসার জীবনে তাদের ৩ বছর বসয়ী এই শিশু কন্যা এ্যানির জন্ম হয়। সংসার জীবনে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কলহ দেখা দিলে প্রায় মাসখানেক আগে ইমরান তার স্ত্রী ইয়াসমিনকে তালাক দেন। বিষয়টি স্থানীয় মুরব্বীদের মধ্যস্থতায় কন্যার ভরণ পোষনের জন্য প্রতি মাসে ইয়াসমিনকে ২ হাজার টাকা দেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত হয়। সেই মোতাবেক স্বামী ইমরান মাসে মাসে এই টাকা দিয়েও আসছিলেন। সম্প্রতি
টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়ায় বিগত ২৯ জানুয়ারি ইয়াসমিন তার স্বামী ইমরানের সাথে যোগাযোগ করে। এ সময় শিশু কন্যা এ্যানির অসুস্থতার কথাও বলা হয়। গত সোমবার সিলেটের শাহপরান থানার দাসপাড়ায় এলাকায় ছেলে মেয়ে নিয়ে অবস্থান করছিলেন ইয়াসমিন। ওই দিন রাত আনুমানিক ৯টার দিকে ডাক্তার দেখানোর নামে ইমরান তার স্ত্রী, সন্তান ও কন্যাকে ট্রাকে তুলে নেন। এ সময় বাদল নামে ট্রাকে এক হেলাপারও ছিল। ইয়াসমিন পুলিশকে জানান ট্রাক চালানো অবস্থায় ইমরানের সাথে তার কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে দ্রুত বেগে গাড়ি চালিয়ে গভীর রাতে বানিয়াচং ৬নং কাগাপাশা ইউনিয়নের কাগাপাশা বাজারের পশ্চিমে একটি ব্রিজের কাছে ট্র্যাক থামান ইমরান। এ সময় ইয়াসমিনের কোলে থাকা অসুস্থ কন্যা শিশু এ্যানিকে কেড়ে নিয়ে ট্র্যাক থেকে ব্রীজের নিচে খালে ফেলে দেয় ইমরান। সাথে থাকা অপর শিশু পুত্র সাফিকেও ফেলে দেয়ার চেষ্টা চালায়। এ সময় হাতে পায়ে ধরে সাফিকে রক্ষা করেন ইয়াসমিন। এক পর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। ওই সময় তারা কোথায় অবস্থান করছিলেন তিনি তাও জানতেন না। ইয়াসমিন আরো জানায়, ভোরে সিলেটের টিলাগড় এলাকায় ইয়াসমিন ও তার পুত্রকে নামিয়ে ট্রাক নিয়ে পালিয়ে যায় ইমরান ও গাড়ীতে থাকা হেলপার বাদল। পরে ইয়াসমিন এ ঘটনাটি সিলেটের শাহপরান থানায় অবহিত করলে পুলিশ এ বিষয়টি আমলে নেয়নি। বানিয়াচং থানায় অজ্ঞাত শিশুর মরদেহ উদ্ধারের খবরটি ফেসবুক ও বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হলে ইয়াসমিন ও তার স্বজনগন এ্যানির লাশটি চিনতে পারেন। তাৎক্ষনিক তারা বানিয়াচং থানায় যোগাযোগ করে এ বিষয়টি নিশ্চিত হন। পরবর্তীতে ইয়াসমিন আক্তার বাদী হয়ে পাষন্ড স্বামী ইমরান এবং অপর সহযোগি বাদলকে আসামী করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ বিষয়ে বানিয়াচং থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইনর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ বিষয়ে নিহত শিশু কন্যা এ্যানির মা বাদী হয়ে ১টি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে বলেও তিনি জানান।