নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বাংলাশে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন সারাদেশের ক্যাম্পাস ছাড়িয়ে নগর ও সড়ক-মহাসড়কে বিস্তৃত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে হামলার ঘটনা ঘটেছে এবং কোথাও কোথাও সহিংসতা দেখা গেছে। চট্টগ্রাম ও রংপুরে নিহত হয়েছে ৪ ও ঢাকায় মারা গেছে ১ জন। অন্যদিকে, ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মিছিলে হামলা হয়েছে এবং গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে ৪ জন।
চট্টগ্রামে ৩ জন নিহতঃ চট্টগ্রামে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে ৩ নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরো অনেকে। ১৬ জুলাই মঙ্গলবার নগরীর ষোলশহর থেকে মুরাদপুর এলাকার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে।এ তথ্য নিশ্চিত করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম। তিনি জানান, নিহতদের মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র আকরাম (২৪) ও পথচারী ফারুক (৩৫)। অন্য নিহত ব্যক্তির পরিচয় এখনো জানা যায়নি বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীনও মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে।
মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে , দ্বিতীয় দিনের মতো সংঘর্ষ শুরু হয়। পুরো ষোলশহর ২ নম্বর গেইট থেকে মুরাপুর পর্যন্ত পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলে। এর আগে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনে বিকাল ৩টা থেকে ষোলশহর স্টেশনে সমবেত হওয়া শুরু করে। এরপর তারা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে।
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনির নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একটি অংশ মিছিল নিয়ে দুই নম্বর গেট থেকে মুরাদপুরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এরপর বিকেল ৪টার দিকে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। এসময় উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। থেমে থেমে ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে; কারো কারো হাতে অস্ত্রও দেখা যায়। ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অবস্থান চোখে পড়েনি। নগরীরর কেজিডিসিএল কার্যালয়ের সামনে পুলিশ সদস্যরা অবস্থান করছে। মঙ্গলবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত মুরাদপুর-ষোলশহরে সংঘর্ষ চলছিল।
আন্দোলনকারীরা বলছে, তারা মুরাদপুর হয়ে অবস্থান কর্মসূচি সফল করতে ষোলশহর এলাকায় যাওয়ার পথে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের ওপর হামলা করে। এরপর তারা আত্মরক্ষার্থে পাল্টা হামলা চালায়। এসময় তাদের পক্ষের ২ জন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে বলে জানায় আন্দোলনকারীরা।
রংপুরের পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে শিক্ষার্থী নিহতঃ এদিকে, রংপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। নিহত আবু সাঈদ রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ মনিরুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে। তিনি বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে।
ঢাকায় নিহত ১ ঃ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ঢাকা কলেজের সামনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় নিহত হয়েছে ১ যুবক। তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নিহত যুবককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। তবে এখনো তার পরিচয় জানা যায়নি।
পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মোঃ রিফাতুল ইসলাম জানায়, বিকেলে ঢাকা কলেজের সামনের সড়কে একদল লোক এক ব্যক্তিকে পেটাতে দেখেন তিনি। পরে জানতে পেরেছে যে সেই ব্যক্তি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ ঃ কোটা সংস্কারের দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের সামনে আন্দোলনরত চার শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) এই শিক্ষার্থীদের গুলি করে আহত করা হয়েছে। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, তারা যখন রায় সাহেব বাজারের দিকে যাচ্ছিল তখন একটি গলি থেকে গুলি ছোড়া হয়, এতে চার শিক্ষার্থী আহত হয়।