দেশের পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে চাওয়া হয়েছে

50

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে চান। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারাও তাকেই চেয়েছে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে দেশের পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গতকাল ৬ আগস্ট মঙ্গলবার রাতে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সাথে তিন বাহিনীর প্রধানগণ ও ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। দেশে একজন রাষ্ট্রপতি আছেন, কিন্তু কার্যত কোনো সরকার নেই। বর্তমানে দেশটি হালছাড়া জাহাজের মতো। মানুষ একদিকে যেমন নতুন দিনের নতুন আশায় উদ্বুদ্ধ, তেমনি আজ এই মুহূর্তটা সে নিরাপদে থাকবে কি না, এই চিন্তায় বিভ্রান্ত। বহু মানুষ রাতে ঘুমোতে পারছে না। রাজনৈতিক কর্মীরা নয়, অনেক দুর্বৃত্তরা জায়গায় জায়গায় নেমে পড়েছে। প্রথম দিকে দোকানে দোকানে ডাকাতি হয়েছে। এমন নয় যে এই ছিল রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। এগুলো শুধুই লুটপাত-ডাকাতি। যশোরে আওয়ামী লীগ নেতার মালিকানাধীন বহুতল পাঁচতারা হোটেলে আগুন দিয়ে যে মানুষগুলোকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে, তাদের মধ্যে কেউ কি আওয়ামী লীগ করে? যে বিদেশি হোটেলে উঠেছিলেন, তাঁর মৃত্যুর কী মানে? কোনো স্থাপনা বা স্থান আওয়ামী লীগ করেছে বলেই কি সেগুলো পুড়িয়ে দিতে হবে? বহু পোড়া বাড়ি থেকে এখন শিশুদের মৃতদেহ বের হচ্ছে। ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে, সামনে দুটি শিশুর মৃতদেহ পড়ে আছে। এক শিশুর মা কেঁদে বলছেন, তাঁর ১৭ বছরের ছেলে ইউসুফ বের হওয়ার সময় বলেছিল, “মা, দেশ স্বাধীন করতে যাচ্ছি।”

অনেক সুখবর এবং আশারও খবর আছে। শিক্ষার্থীরা রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের কাজ করছে। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা মন্দির–মণ্ডপ পাহারা দিচ্ছে। মহল্লার লোকেরা দল বেঁধে রাস্তা পাহারায় বেরিয়ে পড়েছে। কিন্তু অনেক থানায় পুলিশ নেই। জবাবদিহি করা হচ্ছে। সেনাবাহিনী কিছু কিছু দায়িত্ব নিয়েছে আইনশৃঙ্খলার অবনতি রোধ করতে। জেলভাঙা কয়েদিরা এসে আত্মসমর্পণ করবে, কিন্তু কার কাছে করবে?

কারখানায় আগুন দিলে বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস করলে কার ক্ষতি বা লাভ? যে অনেক জায়গায় সাইনবোর্ড পাল্টে গেছে। নিপীড়নতন্ত্র, দুর্বৃত্ততন্ত্র, চৌর্যতন্ত্র, লুণ্ঠনতন্ত্র, দখলবাজির বিপরীতে শান্তিবাদ, সুনাগরিকতন্ত্র, অভয়তন্ত্র, সততাতন্ত্র, ন্যায়বিচারতন্ত্র, মানবাধিকারতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কাজটা অনেক বড়। এসব যেন মানুষের জীবন, সম্মান, সম্পত্তির জন্য হুমকি হয়ে না দাঁড়ায়, সে জন্য দেশে সরকার দরকার। এই সরকার হিসেবে অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে চায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। যদি তিনি এসে সরকারের দায়িত্ব নিয়ে প্রশাসন, পুলিশ, চেইন অব কমান্ড প্রতিষ্ঠা করে, তবে দেশের সুনাগরিকেরা ভরসা পাবে, দুর্বৃত্তরা দমে যাবে।

নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস, যত তাড়াতাড়ি বাংলাদেশের মাটিতে পা দেবেন, ততই আমাদের জন্য মঙ্গল।