নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী ও পুলিশসহ ১৯৮ জনকে আসামী করে হত্যা মামলা

71

মোহাম্মদ ওসমান গনি(হাটহাজারী) চট্টগ্রাম:
তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনের সাবেক এমপি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার, হাটহাজরী থানার ওসি ও হাটহাজারী -ফটিকছড়ি উপজেলা পরিষদের দুই চেয়ারম্যানসহ ১৯৮ জন আসামী করে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা নং-১৫ তারিখ-২৩/০৮/২৪, ধারা-১৪৩/ ৩২৩/ ৩২৫/ ৩০২/ ৫০৬/৩৪ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে হাটহাজরীতে মিছিল করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষার্থী হাফেজ মাওলানা রবিউল ইসলামের পিতা আবদুল জব্বার বাদী হয়ে ২৩আগস্ট শুক্রবার এ হত্যা মামলাটি করে।
মামলায় প্রধান আসামি হাটহাজারী মডেল থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: রফিকুল ইসলাম। এছাড়া আসামী করা হয় তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনের সাবেক এমপি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, চট্টগ্রামের সাবেক পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক, হাটহাজারী ও ফটিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যানসহ সুনিদিষ্ট ২৮ জন এবং অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জন পুলিশ সদস্য, ১০০-১৫০ জন অজ্ঞাতনামা আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীকে আসামি করা হয়েছে।
নিহত রবিউল ইসলাম কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জ থানার উত্তর হাওলা ইউনিয়নের মুন্সির হাট বলা গ্রামের বাসিন্দা। সে হাটহাজারী বড় মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদীসের সমাপনী (২০২১) পরীক্ষার্থী ছিল।
মামলার অপর আসামিরা হল: হাটহাজারী সার্কেলর সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাদাত হোসেন, চট্টগ্রাম ডিএসবি’র সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মাসুম, চট্টগ্রাম ডিবির ওসি কেশব চক্রবর্তী, হাটহাজারী মডেল থানা সাবেক পুলিশ পরিদর্শক (গোয়েন্দা) আমীর হোসাইন, সাবেক পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রাজিব শর্মা, সাবেক পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন এন্ড কমিউনিটি পুলিশিং) মো: শফিকুল ইসলাম, সাবেক সেকেন্ড অফিসার এস আই মুকিব হাসান, এসআই কবির হোসেন, এসআই জসিম উদ্দিন দেওয়ান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইউনুস গণি চৌধুরী, নাজিরহাট মাদ্রাসার সাবেক পরিচালক মাওলানা সলিম উল্লাহ, ইসলামী ঐক্যজোট নেতা মঈন উদ্দীন রুহী, হাটহাজারী সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাকেরিয়া চৌধুরী সাগর, মেখল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহিবুল হক মুহিব, ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দীন মুহুরী, চবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাছির হায়দার করিম বাবুল, সাবেক পৌর প্রশাসক মনজুর আলম চৌধুরী, ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শওকতুল আলম, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রাশেদুল আলম, যুবলীগ নেতা ওসমান রাসেলসহ আরও ৫ জন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০২১ সালের ২৬ মার্চ বিকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে ঢাকা বাইতুল মোকাররমে মুসল্লীরা মিছিল বের করে। উক্ত মিছিলে তৎকালীন সরকারদলীয় অস্ত্রধারী ক্যাডাররা হামলা করে অনেককে হতাহত করে।উক্ত হামলার প্রতিবাদে হাটহাজারীতে বাদ জুমা সাধারণ ছাত্র-জনতা প্রতিবাদ মিছিল বাহির করলে হাটহাজারী বড় মাদ্রাসার শিক্ষার্থী হাফেজ মাওলানা রবিউল ইসলাম তার সহপাঠিদের সাথে সাধারণ জনতার মিছিলে অংশগ্রহণ করে।
উক্ত মিছিল চলাকালে মামলার উল্লেখিত আসামিগণের নেতৃত্বে পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের (এসআই, এএসআই, কনস্টেবল) সদস্য প্রায় ৫০-৬০ জনসহ ১০০-১৫০ জন দলীয় সন্ত্রাসী অবৈধ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ছাত্র-জনতার মিছিলে হামলা করে। এ সময় আলেম-ওলামাদের জীবন রক্ষার্থে ছাত্র-জনতা এগিয়ে গেলে অভিযুক্ত আসামিরা ছাত্র-জনতার উপর অবিরাম গুলিবর্ষণসহ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করতে থাকে। মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে দৌড়াদৌড়ি অবস্থায় আসামি ও তাদের সহযোগীরা নিহত রবিউল ইসলামসহ আরও কয়েকজন মিছিলকারীকে ধরে প্রচন্ড মারধর করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।
এর মধ্যে হাটহাজারী মডেল থানা সাবেক ওসি রফিকুল ইসলাম অজ্ঞাতনামা পুলিশ কনস্টেবল হতে অস্ত্র টেনে নিয়ে নিহত রবিউল ইসলামের বুকে ও পেটে পরপর ২টি গুলি করে। বুলেটের আঘাতে ঐ শিক্ষার্থী মাটিতে পড়ে গেলে অন্যান্য আসামিরা তাদের হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে তার বুকে পরপর আরও ৩টি গুলি করে ঘটনাস্থলেই ঐ শিক্ষার্থীর মৃত্যু নিশ্চিত করে বলে জানায় নিহতের পিতা মামলার বাদী আবদুল জব্বার (৫৮)।
মামলার বাদী এজহারে উল্জালেখ করে, উক্ত ঘটনার পর আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাইলে বা কোন প্রকার মামলা মোকদ্দমা করলে আমাকে খুন ও গুম করবে, আমার পরিবারের কাউকে বেঁচে থাকতে দেবে না বলে হুমকি দিয়ে জোর পূর্বক আমার সন্তানের নিথর মৃত দেহটি বিনা পোস্টমর্টেমে আমাকে বুঝিয়ে দেয়। পরবর্তীতে পুরো সময়টাতে আমি পুলিশের হুমকির কারণে ভয়ে স্তব্ধ ও বোবা হয়ে থাকি। পরে আমি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আমার ছেলের নৃশংস খুনের বিচার চেয়ে দেশের কর্তা ব্যক্তিদের নিকট বহুবার ধর্না দিয়েছি। থানায় জিডি করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু থানায় জিডি নেয়নি।
নিহতের পিতা আবদুল জব্বার জানায়, আমার ছেলে হত্যার সাথে জড়িত উল্লেখিত আসামিদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচার দাবি করছি ।