মঈন আল হোসেনঃ দখলবাজ, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ীসহ কয়েক ডজন অপরাধী সিন্ডিকেটের কব্জায় জিম্মি হয়ে আছে সোনারগাঁও। সেখানে শুধু দখলবাজিকে পুঁজি করেই শতাধিক ব্যক্তি কোটিপতি হয়ে গেছে। একইভাবে মাদক ব্যবসার মাধ্যমে অন্তত ৩০ জন এবং চাঁদাবাজির দ্বারা আরো অর্ধ শতাধিক অপরাধী কোটিপতি বনেছে। আছে দস্যুবৃত্তি সিন্ডিকেটও। রাতারাতি বেশুমার অর্থবিত্তের মালিক হওয়া প্রত্যেকেই পরিণত হয়েছে দাপুটে গডফাদার। তারাই অস্ত্রবাজ ও পেশাদার অপরাধীদের সমন্বয়ে গড়ে তুলেছেন আলাদা আলাদা সিন্ডিকেট।যার একটি হল সেভেন স্টার গ্রুপ যার নেতৃত্ব দিচ্ছে বিএনপির এক হাইব্রিড নে্লী। যার পোলায় করত যুবলীগ, নিজে করত জাতীয় পার্টি। বাপ-পুতে এখন বিএনপির বড় নেতা।
সোনারগাঁওয়ে সবচেয়ে বেশি অপরাধ ঘটে জায়গা জমি কেন্দ্রিক। জবরদখলই সেখানে প্রধান সমস্যা। নদী, খাল, সরকারি খাস জমি, রাস্তা, রেলওয়ের সম্পত্তির সবটাই গিলে খাচ্ছে প্রতাপশালী লোকজন।
মেঘনাঘাট থেকে বারাদি ছটাকিয়া ঘাট হয়ে আনন্দবাজার পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেঘনা পার জুড়ে চলছে দখলবাজির সীমাহীন তাণ্ডব। এতে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে ৪০টি গ্রাম, ভুক্তভোগী মানুষের সংখ্যা ১০ সহস্রাধিক। পৈতৃক ভিটে মাটি হারানোর পাশাশাশি কয়েক হাজার মানুষ মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলার ধকল পোহাচ্ছেন। কোথাও একচিলতে জায়গা ফাঁকা পড়ে থাকার উপায় নেই। জাল দলিল সৃজনের মাধ্যমে লোকবল ক্ষমতা ব্যবহার করে তা রাতারাতি জবর দখল করে নেয়ার ঘটনা ঘটে। আর সরকারি জায়গা হলে তো কথাই নেই। খাস জমি, সড়ক ও জনপথের জায়গা, রেলওয়ের সম্পত্তি সবকিছুই গিলে খাচ্ছে বাধাহীনভাবে।কিছু হচ্ছে শুধু হাত বদল, যেমন পয়সার এপিট আর ওপিট।
সোনারগাঁয়ে মদনগঞ্জ-নরসিংদী রেল সড়কের সম্পদগুলো প্রভাবশালীদের কব্জায় চলে গেছে। ঐ সড়কে রেলওয়ের প্রায় ২শ’ কোটি টাকার সম্পত্তি বেদখল হয়ে আছে। মদনপুর থেকে প্রভাকরদী পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার এলাকায় জমিগুলো স্থানীয় প্রভাবশালী, শিল্প মালিক ও সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা দলের প্রভাব খাটিয়ে দখল করে রেখেছে। এর মধ্যে বিএনপি কর্মী মুজিবুর রহমানও ৬ কিলোমিটারের মধ্যে দুই কিলোমিটার তার কব্জায় ধরে রেখেছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জমিগুলো দখল মুক্ত করার জন্য কোন উদ্যোগ না নেয়ায় সম্পত্তিগুলো বেহাত হয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, রেলওয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগ সাজসে এসব জমি দখল হয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে জানা যায়, তালতলা এলাকায় বিএনপি কর্মী মুজিবুর রহমান, জামপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম, প্রভাবশালী তুহিনুর রহমান, আওয়ামীলীগ নেতা ফিরোজ মিয়া, বৈরাবরটেক এলাকায় পিপিএল কোম্পানি লিমিটেড, বস্তল এলাকায় এ্যাম্পায়ার স্টীল মিল, তালতলা সুপার মার্কেট, মহিউদ্দিন পেপার মিলস লিমিটেড, সৃজন আবাসন প্রকল্প রক্সি পেইন্ট, গ্যাস্টন ব্যাটারি ফ্যাক্টুরি, কাঠারাবো এলাকায় দেশপ্যাক কোম্পানি লিমিটেড রেলওয়ের জমি দখলে নিয়েছে। মরিচটেক এলাকায় বিআর স্পিনিং মিলস লিমিটেড, রহমান স্পিনিং, বস্তল এলাকায় শাহজাহান ফার্নিচার, শেজাদ পারভেজ স্পিনিং মিলস, নয়াপুর এলাকায় অবৈধ দলখদার বাচ্চু মেম্বার ও আবু সিদ্দিক মিয়া রেলওয়ের সম্পতি বিক্রি করে দেওয়ার পর সিন্ডিকেটের মাধ্যমে রেলওয়ের জমি দখল করে রেখেছে।
অভিযুক্ত মজিবুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে প্রতিবেদককে বলে, “আমি লিজ নিয়ে সম্পত্তি ভোগ দখলে আছি। এখানে শুধু আমিই না অনেক মানুষই জমি দখলে রেখেছে।”
জামপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম বলে, “রেলওয়ের কাছ থেকে আমি লিজ নিয়েই দোকানপাট নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছি। আমার দখলে কোন অবৈধ জায়গা নেই।”
এব্যাপারের আতাউর রহমানকে কল করলে বলে, আমি ৪/৫ টা ব্যবসা করে কোটিপতি হয়েছি। সবসময় এলাকায় বিচার চার করি তাই মানুষ মুল্যায়ন করে। আমি দলকে ডোনেশন দেই বলে পদ পেয়েছি।