কালুখালীর ধর্ষিত তরুনীর চুল কর্তন : ১৭ দিন পর মামলা

929

জেলা প্রতিনিধি : রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার তরুনীর চুল কর্তনের ঘটনার ১৭ দিন পর রবিবার আদালতে মামলা দায়ের করেছে ওই তরুনী। মামলার  আসামী রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক ফজলুল হক ফরহাদ। নির্যাতনের শিকার সেই তরুণী রাজবাড়ীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। ধারাঃ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী/০৩) এর ৯(১) তৎসহ ৩২৩/৫০৬(।।)। আদালত মামলাটি পাংশা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে আদেশ দিয়েছেন। অভিযুক্ত ফরহাদ পাংশা উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক এবং পাংশা উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা।

গত ৮ জুন তারিখের ঘটনার বিবরণ  দিয়ে মামলার বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে, বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তিনি ফরহাদের বাড়িতে গেলে তাকে বেধরক মারপিট করে ও মাথার চুল কেটে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয় এবং বলে, ‘পাংশাতে তোকে বসবাস করতে দেবনা। তোকে পতিতা বানিয়ে পাংশা ছাড়া করব।’  মারপিটের পর ওই তরুনী পাংশা থানায় মামলা দিতে গেলে ওসি মামলা নেয়নি। পাংশা হাসপাতালে ভর্তি হতে গেলেও বাধা দেয় ফরহাদের লোকজন। পরে ওই তরুনী  রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়। তার চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেশ কিছু জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা এ সংক্রান্ত সংবাদ পরিবেশন করায় তাদের বিরুদ্ধেও মামলা দেয় ফরহাদ।হাসপাতালেও তরুনীকে হত্যার হুমকী দেয় ফরহাদের লোকজন। অবশেষে আত্মগোপনে চলে যায় তরুনী।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, আসামি স্থানীয় রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় বাদিকে নানাভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছে। এছাড়া আসামির ভয়ে কেউ সাক্ষী দিতেও সাহস পাচ্ছে না।

ইতিপূর্বে ২৩/৪/১৮ ইং তারিখে একই আদালতে দায়ের করা মামলার বিষয়টি তুলে ধরে বাদি মামলার বিবরণীতে উল্লেখ করেন, বিভিন্ন সময় ফরহাদ তাকে উত্যক্ত করতো ও  কুপ্রস্তাব দিত। কিন্তু বরাবরই তিনি তা প্রত্যাখান করেছেন। বিষয়টি তিনি তার স্বামীকে জানান। তার স্বামী ফরহাদকে উত্যক্ত করা থেকে বিরত থাকতে বলেন। কিন্তু ফরহাদ তার কথায়ও কর্ণপাত করে নাই। এর কিছু দিন পর তার স্বামী বাড়িতে না থাকার সুযোগে ফরহাদ বাড়িতে ঢুকে তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ধর্ষণ করে এবং ওই ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে রাখে।  ফরহাদ তাকে হুমকি দেয়; তার কথামতো না চললে এবং এ ঘটনার কথা কাউকে বললে সে ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেবে। যেকারণে ঘটনার কথা কাউকে বলার সাহস পায়নি। এরপর ফরহাদ তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখায়। কয়েকদিন পর ফরহাদ তাকে দিয়ে কয়েকটি সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে বলে; তোমার স্বামীর সাথে তালাক হয়ে গেছে আর তোমার আমার বিয়ে হয়ে গেছে। এ কথায় বিশ্বাস করে ফরহাদের সাথে নিয়মিত শারীরক সম্পর্কে মিলিত হতেন তিনি। গত ২৭ মার্চ তারিখে ফরহাদ বিয়ে সংক্রান্ত আরও কিছু কাগজপত্র তৈরি করার জন্য তার ভাড়া বাসায় ডেকে এনে আবারও শারীরক সম্পর্ক করে। ওই দিনই গৃহবধূ ফরহাদের কাছে সামাজিক ও পারিবারিক স্বীকৃতি চাইলে ফরহাদ জানিয়ে দেয়; তাকে বিয়ে করেনি আর করবেও না। একপর্যায়ে তাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। বিষয়টি নিয়ে তিনি প্রচন্ড মুষড়ে পড়েন ও কিছুদিন আত্মগোপন করে থাকেন।

এ মামলাটির তদন্তভার অর্পণ করা হয়েছিল রাজবাড়ী জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার উপর। বিষয়টি জানার পর ফরহাদ তাকে মিথ্যার আশ্রয় দিয়ে ভুল বুঝিয়ে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কাছে নিয়ে আপোসনামায় স্বাক্ষর করায়। যেকারণে মামলাটি আদালত থেকে প্রত্যাহার হয়।

মামলার বিবরণীতে বাদী প্রত্যাহার হওয়া মামলাটিও পুননরুজ্জীবিত করার আবেদন জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, গত ১১ জুন তারিখে দৈনিক সমকালে ‘পাংশায় তরুণীর চুল কেটে পিটিয়ে নির্যাতন, অভিযোগ যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে’ শিরোনামে একটি সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরদিন ১২ জুন পাংশা উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক ফজলুল হক ফরহাদ সমকাল সম্পাদক গোলাম সারোয়ার ও রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধি সৌমিত্র শীল চন্দনের বিরুদ্ধে রাজবাড়ীর আদালতে মানহানি মামলা দায়ের করেন।

গতকাল সোমবার ওই তরুনীর সাথে আলাপকালে সে এই প্রতিনিধিকে জানায়, এখনো তাকে প্রাননাশের হুমকী দিচ্ছে ফরহাদ। ফলে সে জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। তাই নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সে পুনরায় আত্মগোপনে রয়েছে।