সময়ের চিন্তা ডট কমঃ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেছে পুলিশ। যে সকল মাদক ব্যবসায়ীরা আত্মগোপনে থেকে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করছে তাদের ধরিয়ে দিতে ছবিসহ নামের তালিকা প্রকাশ ও পোষ্টারিং করেছে সোনারগাঁও থানা পুলিশ প্রশাসন।
সোনারগাঁও উপজেলা থেকে মাদক নির্মূল করতে ও শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানান সোনারগাঁও থানার ওসি মো: মোরশেদ আলম পিপিএম। সোনারগাঁয়ের শীর্ষ ১৬ মাদক ব্যবসায়ীর ছবি ও নাম-ঠিকানাসহ ব্যানার সাটিয়ে দিয়েছে সোনারগাঁও থানার প্রধান ফটকে। তাদের ধরিয়ে বা সন্ধান দিতে পারলে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পুরস্কৃত করা হবে। গোপন রাখা হবে সন্ধানদাতার নাম পরিচয়।
সোনারগাঁও থানার ওসি মো: মোরশেদ আলম পিপিএম জানান, মাদক ব্যবসায়ী ১৬ জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এদের সংখ্যা আরও বেশি। আমাদের এই তালিকা তৈরির প্রক্রিয়া ধারাবাহিকভাবে চলমান থাকবে। আমরা সোনারগাওঁয়ের প্রতিটি নাগরিকের সহায়তা আশা করছি। আপনারা তথ্য দিন আমরা ব্যবস্থা নিবো। তথ্য প্রদাণকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে পাশাপাশি তাকে পুরষ্কৃত করা হবে আমাদের পক্ষ থেকে। আমরা সোনারগাঁওকে মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত করতে চাই।
সোনারগাঁও থানা পুলিশের এই পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছে স্থানীয় সংশ্লিষ্টমহল। তবে পাশাপাশি মাদকের গডফাদার যারা তাদের ছবিও প্রকাশ করা হোক বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টমহল ও সোনারগাঁবাসী। শুধু এই খুচরো মাদক ব্যসায়ীদের ছবি ও তালিকা প্রকাশ করলেই হবে না। মাদকের গডফাদারদের অধীনে থেকে যারা এই খুচরো মাদক ব্যবসা চালাতো তারা তালিকা প্রকাশের এবং মাদক ব্যসায়ীদের নাম-ঠিকানাসহ বই ছাপানোর সাথে সাথেই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। এখনো কিছু কিছু মাদকের গডফাদাররা রাজনীতির অন্তরালে মাদকের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি জানান, সোনারগাঁওয়ে উপজেলার মোগরাপাড়া চৌরাস্তার বাড়িচিনিশ এলাকার বাসিন্দা মৃত. চাঁন মিয়ার ছেলে নাজমুর রহমান সজিব। সে নিজেকে মোগড়াপারা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দিয়ে আশেপাশের কয়েকটি এলাকায় রাতের অন্ধকারে ও গোপনে মরন নেশা মাদকের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে জানান। বাড়িচিনিশ এলাকার বাসিন্দা মৃত. চাঁন মিয়ার ছেলে নাজমুর রহমান সজিব তার আপন ছোট ভাই সুমনকে দিয়ে সোনারগাঁও থানা পুলিশের চোখে ফাকি দিয়ে রাতের অন্ধকারে মরন নেশা ইয়াবা ও ফেন্সিডিল বিক্রি করে চলেছে। আর তাকে গোপনে সহযোগীতা করছে পুলিশের কতিপয় ঘুষখোর কর্মকর্তা। মাদকের এই গডফাদার নাজমুর রহমান সজিব কখনো এই নামে আবার কখনোবা এস কে সজিব নামে পার্শ্ববর্তী কুমিল্লা জেলার বর্ডার এলাকা থেকে গোপনে মাদকের এসব চালান নিয়ে আসে। পরে এসব চালান সে সোনারগাঁওয়ের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রির জন্য পাচার করে থাকে। আর তাকে সহযোগীতা করে থাকে তারই ছোট ভাই সুমন, বাড়িচিনিশ গ্রামের মোক্তার মিয়ার ছেলে ফয়সাল, কালু, মালেক মিয়ার ছেলে রুবেল ওরফে মাসুম ও গোহাট্টা গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে শিমুল নামের অপর মাদক ব্যবসায়ীরা। আর এতে করে সোনারগাঁওয়ের স্থানীয় যুব সমাজ ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও সজিব বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সাথেও সম্পৃক্ত রয়েছে বলে জানা গেছে। তার নামে সোনারগাঁও থানায় রয়েছে বেশ কয়েকটি মামলা, রয়েছে মার্ডার মামলা।
উল্লেখ্য, গত ২০ মার্চ শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে মোগরাপাড়া চৌরাস্তা এলাকা থেকে ৫শ বোতল ফেনসিডিলসহ দুই মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে নারায়ণগঞ্জ জেলা ডিবি পুলিশের একটি টিম। এ ঘটনায় সোনারগাঁও থানায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেই মামলায়ও এই নাজমুর রহমান সজিবের নাম রয়েছে। যে এখন মোগড়াপারা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পরিচয়ে পুরো সোনারগাঁও উপজেলা দাবরিয়ে বেড়াচ্ছে। এমনকি সোনারগাঁও থানা পুলিশের চোখে ফাকি দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
মামলার এজাহারসূত্রে জানা গেছে, গত ২০ মার্চ শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)র পুলিশ পরিদর্শক গিয়াস উদ্দিনের নেতেৃত্বে সোনারগাঁও ও বন্দর থানা এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনাকালে গোপন সংবাদে জানতে পারেন সোনারগাঁও উপজেলার মোগরাপাড়া চৌরাস্তার বাড়িচিনিশ এলাকায় মাদক বিক্রি হচ্ছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে রাত ৮টায় বাড়িচিনিশ এলাকার বাসিন্দা মোস্তফার ভাঙ্গারী দোকানের ভাড়াটিয়া রুবেল ওরফে মাসুম (২৫) ও শিমুল (২৬) নামের দুই মাদক ব্যবসায়ীকে নিষিদ্ধ ভারতীয় ফেনসিডিল গননা করার সময় ৫শ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক করা হয়। এ সময় ডিবি পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকের অন্যতম ডিলার মোগড়াপারা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নামধারী সজিব, সুমন, ফয়সাল, জসিম ও কালু নামের ৫ মাদক ব্যবসায়ী দ্রæত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এমনকি ডিবি পুলিশ মাদকের গডফাদার ও মোগড়াপারা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পরিচয়দানকারী এই নাজমুর রহমান সজিবকে সামনে পেয়ে গুলি করতে চাইলে ও গুলি ছোড়লে সজিব অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পায় এবং পার্শ্ববর্তী একটি বিয়ে বাড়ীর ভিতরে ঢোকে পড়ে সেখান দিয়ে পালিয়ে যায় বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে সোনারগাঁও থানায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।