শিমরাইলে মহাসড়কে আগুন, প্রধানমন্ত্রীর পিএস’র গাড়ী আটকালো শ্রমিকরা

427

সিদ্দিরগঞ্জ প্রতিনিধি:পরিবহন শ্রমকিদের ডাকা ৪৮ ঘন্টা পরিবহন ধর্মঘটের প্রথম দিনে নারায়ণগঞ্জে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে রোববার (২৮ অক্টোবর) ভোর ৬টা থেকে অবস্থান নেয় শ্রমিকরা।  এ সময় শ্রমিকরা মহাসড়কের সাইনর্বোড, সানাড়পাড়, শিমরাইল মোড়, সিদ্ধিরগঞ্জ পুল ও কাঁচপুর পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে সকল প্রকার পরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। রিক্সা, অটোরিক্সা ও রোগীর এ্যাম্বুলেন্সসহ আটকে দেয় তারা।| এ ছাড়াও শ্রমিকরা মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে আগুন দেয় ও লাঠি হাতে চালাতে থাকে পিকেটিং। পিকেটিং চলাকালে তারা কোনো প্রকার যানবাহন চলাচল করতে দেননি।  মহাসড়ক দিয়ে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস গন্তব্যে যেতে চাইলে পরিবহন শ্রমিকরা সেসকল পরিবহনে কালো রং লাগিয়ে দেন। এমনকি অনেক চালকের শরীরেও পরিবহন শ্রমিকরা কালো রং লাগিয়ে দেন। এতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন প্রাইভেট পরিবহনগুলোর মালিক ও চালকরা।| এদিকে শ্রমিকদের গনমাধ্যমের কর্মীদের উপরও চড়াও হতে দেখা যায়। সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পরও শ্রমিকরা উচ্ছৃংঙ্খল আচরণ করতে থাকে। ছবি তুলতে গেলে বাঁধা দিয়ে সোজা চলে যেতে বলে।  অপরদিকে, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শিমরাইল মোড় এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর পিএস সাজ্জাদুল হাসানের গাড়ী আটকে দেয় পরিবহন শ্রমিকরা।  প্রায় আধা ঘন্টা তার গাড়ি অবরোধ করে রাখার পর শিমরাইল মোড়ে কর্তব্যরত নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের টিআই (প্রশাসন) মোল্যা তাসলিম হোসেন শ্রমিকদের সাথে আলাপ আলোচনার  পর গাড়িটি উদ্ধার করতে সক্ষম হএতে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। যানবাহন না পেয়ে এ সময় হাজার হাজার মানুষকে হেঁটেই নিজ নিজ গন্তব্যে যেতে দেখা যায়| গার্মেন্ট কর্মী সাহেরা আক্তার বলেন, আমরা সকাল ৬টায় অফিসে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়ে শিমরাইল মোড়ে এসে  দেখি সকল পরিবহন বন্ধ রয়েছে। গাড়ি না পেয়ে বাধ্য হয়ে  পায়ে হেঁটে অফিসে যেতে হচ্ছে। দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের একাদ্বশ শ্রেণির ছাত্রী শান্তা জামান বলেন, কলেজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার পর রাস্তায় এসে এক ঘন্টা অপেক্ষা করে কোন গাড়ি না পেয়ে বাসায় যেতে বাধ্য হই। সরকারী ব্যাংক কর্মকর্তা কেএ মোতালিব মিয়া বলেন, পূর্বের ঘোষনা ছাড়াই শ্রমিকরা অবরোধ ডেকে আমাদেরকে বিপাকে ফেলে দিয়েছে। আমরা এখন কিভাবে নিজ কর্মস্থলে যাব।? শনির আখড়া থেকে আসা মনির মিয়া নামে এক যাত্রী বলেন, আমার এক আত্মীয় মদনপুর এলাকায় গতকাল রাতে মারা গেছেন। তাকে দেখতে  যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়ে শিমরাইল মোড়ে এসে আটকা  পড়েছি। আমার আত্মীয়ের লাশ দেখতে পারবো কিনা এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছি। যাত্রী শেফালী আক্তার বলেন, পরিবহন শ্রমিকরা সকাল ১০টার  পর থেকে রিক্সা, ভ্যান ও রোগী বহনকারী এ্যাম্বুলেন্স সহ সকল প্রকার যানবাহন বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা মারাত্বক বিপাকে পড়েছি। এটা আসলে অমানুবিক। নাম  প্রকাশে অনিচ্ছুক শিমরাইল মোড়ে দায়িত্বরত পুলিশের এক কনেষ্টবল জানান, এ্যাম্বুলেন্সে বহনকারী একজন মারত্বক অসুস্থ্য রোগীর গাড়ি শিমরাইল এলাকায় আটকে দেয় শ্রমিকরা। পরে তাদের অনুরোধ করে রোগীবাহী গাড়িটি ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, আমাদের দাবী পূরন না হওয়া পর্যন্ত আমরা মহাসড়ক থেকে সড়বো না। আমাদের দাবী অবশ্যই মানতে হবে। বাংলাদেশ ট্রাক ক্যাভার্ডভ্যান পিকআপ মালিক সমিতি শিমরাইল শাখার সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, শ্রমিকদের ৮দফা দাবী মেনে নেওয়ার লক্ষ্যে শান্তিপূর্ণভাবে আমরা কর্মসূচি  পালন করছি। শিমরাইল মোড়ে দায়িত্বরত নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের টিআই (প্রশাসন) মোল্যা তাসলিম হোসেন বলেন, শ্রমিকদের ঢাকা অবরোধে যাতে করে শ্রমিকরা গাড়ি ভাংচুরসহ কোন ধরনের অপ্রতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে সেজন¨ আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ও সজাগ দৃষ্টি রাখা হয়েছে। এ পর্যন্ত কোন ধরনের অপ্রতিকর ঘটনা ঘটেনি। উল্লেখ্য, সড়ক পরিবহন আইনের কয়েকটি ধারা সংশোধনসহ আট দফা দাবী আদায়ের লক্ষ্যে পরিবহন শ্রমিকরা এ ধর্মঘট পালন করছে।