সময়ের চিন্তা ডট কমঃ সড়ক পরিবহন আইনের কয়েকটি ধারা সংশোধনসহ ৮ দফা দাবিতে আজ রোববার সকাল ছয়টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত সারা দেশে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। সড়ক পরিবহন খাতের শ্রমিকদের এই সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান।
পরিবহন শ্রমিকদের দাবির মধ্যে রয়েছে সড়ক পরিবহন আইনের সব ধারা জামিনযোগ্য করা, সড়ক দুর্ঘটনার মামলায় সাজার পরিমাণ কমানো, ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণি করা ও লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে অনিয়ম বন্ধ করা অন্যতম। সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, পরিবহন খাতে চলে আসা দীর্ঘদিনের নৈরাজ্য বন্ধে আইনে রাখা শাস্তির বিধান পর্যাপ্ত নয়। মন্দের ভালো সেই আইনও মানতে রাজি নন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী জানান, দাবি মানতে ২৬ অক্টোবর পর্যস্ত সরকারকে সময় দেয়া হয়েছিল। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীকে স্মারকলিপিও দিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বাধ্য হয়ে রোববার সকাল ছয়টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত টানা ৪৮ ঘণ্টা সারা দেশে শ্রমিকরা কর্মবিরতি (ধর্মঘট) পালন করবেন। এই সময় বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, লরি এবং কিছু ক্ষেত্রে অটোরিকশার চলাচলও বন্ধ থাকবে। তিনি আরও বলেন, রাস্তায় কেউ যানবাহন চালালে সাধারণ শ্রমিকরা বাঁধা দেবেন না।
নতুন আইনে সড়ক দুর্ঘটনায় অপরাধ প্রমাণ হওয়া সাপেক্ষে দোষী চালকের সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদন্ডের বিধান রয়েছে। এ ছাড়া আইনে ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ারও বিধান আছে। সে ক্ষেত্রে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা হত্যাকান্ড প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদন্ড। দাবি আদায়ের জন্য শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। সমাবেশে নেতারা জানান, নতুন সড়ক পরিবহন আইনের বেশ কিছু ধারা শ্রমিকস্বার্থের বিরোধী। এ আইনে সড়ক দুর্ঘটনাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে জামিন অযোগ্য ধারা যুক্ত করা হয়েছে।
এর আগে একই দাবিতে গত ৭ আগস্ট থেকে ঢাকা বিভাগে সব ধরনের পণ্য পরিবহন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বাংলাদেশ পণ্য পরিবহন শ্রমিক-মালিক ঐক্য পরিষদ। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে পরিষদ।
এদিকে পরিবহন শ্রমিকরা জনজীবনকে জিম্মি করে দাবি আদায়ের যে চেষ্টা করছেন, তা অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্তাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, জবাবদিহির ঊর্ধ্বে থাকার জন্য শ্রমিকরা আইন সংশোধনসহ এসব দাবি করছেন। এমন দাবির প্রতি সরকারের কোনোভাবেই সহানুভূতিশীল হওয়া উচিত হবে না। সংসদে সদ্য পাস হওয়া ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’ এর কয়েকটি ধারা সংশোধনসহ আট দফা দাবি আদায়ে সারাদেশে ডাকা ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটে হাহাকার নারায়ণগঞ্জের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। দাবি আদায়ে সকাল থেকে রাস্তায় রয়েছে বিভিন্ন পরিবহন শ্রমিকরা। কোন প্রকার যানবাহনই চলছে না সোনারগাঁয়ে। পরিবহন শ্রমিকদের উশৃঙ্খল আচরনে নাজেহাল হয়েছে অনেক যাত্রী ও সাধারণ জনগণ।
গতকাল রোববার সকালের দিকে কয়েকটি বাস ও পিকআপে করে যাত্রীরা গন্তব্যে যেতে পারলেও দিন বাড়ার সাথে সাথে বন্ধ হয়ে গেছে সেসব গাড়ীগুলো। মহাসড়কে কোন পরিবহন দেখলেই সেটাকে আটকিয়ে নাজেহাল করছে শ্রমিকরা। বিশেষ করে প্রাইভেট কারগুলোকেও আটকিয়ে দিচ্ছে তারা। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে স্কুল, কলেজ ও অফিস-আদালতে যাওয়া যাত্রীরা।
সকাল থেকে পরিবহন না পেয়ে দিশেহারা সোনারগাঁবাসী। দীর্ঘ অপেক্ষার পরও গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন না সাধারণ মানুষ। শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে সারাদেশ। পরিবহন সংকটে স্থবির হয়ে পড়েছে গোটা দেশও। ভোরের দিকে দু’চারটা পিকআপ ভ্যানে যাত্রী পরিবহন করলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে কমতে শুরু করে এসব যানবহনের সংখ্যা। ফলে এখন শ্রমিকদের তান্ডবেব কারণে একেবাবেই ফাঁকা হয়ে গেছে মহাসড়ক।
সরেজমিনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দেখা গেছে কয়েকশত শ্রমিক হাতে বাঁশ ও লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যখনই কোন গণ পরিবহন বা প্রাইভেটকার দেখছে তখনই তারা দৌঁড়ে গিয়ে সেই পরিবহন আটকে যাত্রী ও চালককে নাজেহাল করছে। শ্রমিকরা আবার সেই সব গাড়ীর সামনে প্লাসে ও বডিতে কালো মবিল ঢেলে দিচ্ছে। অনেক শ্রমিক আবার চালকের মুখেও কালি লাগিয়ে দিচ্ছে। এর আগে যতগুলি শ্রমিক আন্দোলন হয়েছে তার চেয়ে কয়েকশ’গুন বেশী শ্রমিক নেমেছে এবার মহাসড়কে। ফলে গাড়ী না পাওয়ায় হাজার হাজার যাত্রী দেখা গেছে মহাসড়কে। অনেকে গণপরিবহন না পেয়ে মাথায় করে তাদের পন্য পরিবহন করে হেটে গন্তব্যে যাচ্ছেন।
পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা এই ধর্মঘটের কারণে রাজধানীসহ সোনারগাঁয়েও সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ জনগণ। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে বাসষ্ট্যান্ডগুলোর আশপাশে ধর্মঘটের সমর্থনে পরিবহন শ্রমিকদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণ চোখে পড়ে। বিশেষ করে মোগরাপাড়া চৌরাস্তা বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় ও আশপাশের এলাকায় তারা দলবদ্ধভাবে প্রাইভেটকার, অটোরিকশা, রিকশা, মোটরসাইকেলসহ সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।